দেশজুড়ে বিদ্যুৎ-সংকটে ত্রাহি অবস্থা মানুষের। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশনার পরও বাংলাদেশ সচিবালয়ের নতুন একটি ভবনে বসানো হচ্ছে কেন্দ্রীয় শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র। ২০ তলা এই ভবনে বসবে ২ হাজার ৪০০ টন এসি। এতে খরচ পড়বে ৫২ কোটি টাকা। উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন আধুনিক এই চিলার এয়ারকুলারটি চালাতে কমপক্ষে দেড় থেকে দুই মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর একনেক সভায় দুটি বেসমেন্টসহ সচিবালয়ে ওই ২০ তলা ভবন অনুমোদন হয়। প্রকল্প প্রস্তাবনায় দেখা যায়, এ ভবনে ২ হাজার ৪০০ টন এসি বসানোর জন্য মোট ৫২ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আর এটি পরিচালনার জন্য প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হবে কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকা।
জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের সচিবালয়ে দায়িত্বরত নির্বাহী প্রকৌশলী (ই/এম) মুহিবুল ইসলাম বলেন, ‘নতুন ২০ তলা ভবনটি সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এখানে ২ হাজার ৪০০ টন এসি বসছে। সব মিলিয়ে এসি ও ফোর্স ভেন্টিলেশনের জন্য ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আরপিপি সংশোধনের বিষয়টি শেষ হলে দরপত্র আহ্বান করা হবে।’
দেশে বিদ্যুৎ-সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হলেও সরকারি সংস্থাগুলো বিদ্যুৎ ব্যবহারে দিন দিন বিলাসিতার পরিচয় দিচ্ছে। বছর দুয়েক আগে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জন্য ২০ তলা একটি ভবন করা হয়। এটিও কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভবন। যেখানে দেড় হাজার টন এসি বসানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের জন্য বিপুল পরিমাণ বিদ্যুতের প্রয়োজন হচ্ছে। প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল হিসেবে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। শুধু এ ভবনের জন্যই কমবেশি দেড় মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে। যদিও পুরো সচিবালয়ে সব মন্ত্রণালয়ের জন্য রয়েছে ৪ হাজার টনের কম এসি।
কেবল সচিবালয়ের এই দুই ভবন নয়, সরকারের এমন ১৩টি স্থাপনা রয়েছে, যেখানে সেন্ট্রাল এসি বা কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বসানো হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় থাকা জাতীয় রাজস্ব ভবনে ২ হাজার ৫০০ টন, পান্থপথের পানি ভবনে ২ হাজার ৪০০ টন, সচিবালয়ের ভেতরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভবনে ১ হাজার ৫০০ টন, পুলিশ সদর দপ্তরে (অ্যানেক্স ভবন) ১ হাজার ২০০ টন, বিজ্ঞান জাদুঘরে ১ হাজার টন, জাতীয় আর্কাইভ ভবনে ৬০০ টন শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া পর্যটন ভবন, বিডা ভবন, আইসিটি ভবন, নির্বাচন কমিশন ভবন, জাতীয় সংসদ, বিটিআরসি ভবন, সিপিটিউ ভবনেও সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবস্থা রয়েছে। এসব ভবনের বেশির ভাগই উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন চিলার এয়ারকুলার বা ওয়াটার কুলার ব্যবস্থাসম্পন্ন।
এ বিষয়ে নগরবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘সচিবালয়ের চারপাশ অনেকটা প্রকৃতিবান্ধব। এখানে সেভিং ডিভাইস, লোভার সিস্টেম, ক্রস ভেন্টিলেশন—এ তিনটি বিষয় মাথায় রেখে পাঁচতলার ওপরে ভবন হলেই তাপ নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা সম্ভব হবে। কিন্তু এখন বিদেশি স্থাপনা অনুকরণ করে ক্রস ভেন্টিলেশন বন্ধ করা হচ্ছে। করিডর, লিফটসহ সব উন্মুক্ত স্থান এসির আওতায় আনা হচ্ছে। অথচ একটু চিন্তাভাবনা করে স্থাপনা নির্মাণ করা হলেই মিটিং রুম ছাড়া আর কোথাও এমন এসির প্রয়োজন হবে না। এখন সেন্ট্রাল এসির নামে যেভাবে কাচ দিয়ে ভবন ঢেকে ফেলা হচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে বিলাসিতা ও অন্যায়। এটি বন্ধ হওয়া উচিত।’