শরীয়তপুরের নড়িয়ায় পরকীয়া প্রেমিকের বুদ্ধিতে স্বামীকে ভাতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাতের আঁধারে পরকীয়া প্রেমিকের কাছে তুলে দেয় স্ত্রী মুন্নি বেগম। এরপর একটি পুকুর থেকে স্বামী মোহাম্মদ আলীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে নড়িয়া উপজেলার জপসা ইউনিয়নের মাইজপাড়া গ্রামের রাড়ী কান্দি এলাকায় স্বামীর বাড়িতে বসে এভাবেই মোহাম্মদ আলীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা বর্ণনা করছিলেন স্ত্রী মুন্নি বেগম।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান চাঁন মিয়া মাদবরের পুকুর থেকে মোহাম্মদ আলী মাদবরের মরদেহ উদ্ধার করে থানা পুলিশ।

নিহত মোহাম্মদ আলী মাদবর (৪০) শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার জপসা গ্রামের মৃত আমিন উদ্দিন মাদবরের ছেলে। পেশায় তিনি সিএনজি চালক ছিলেন।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৯ বছর আগে মোহাম্মদ আলী মাদবরের সঙ্গে বিয়ে হয় মুন্নি বেগমের। তাদের সংসারে দুইটি কন্যা সন্তান রয়েছে। মুন্নি বেগম প্রায়ই তার পরকীয়া প্রেমিক মামুন চৌকিদারের সঙ্গে পালিয়ে চলে যেত। কিছুদিন আগেও মুন্নি বেগম মামুনের সঙ্গে পালিয়ে চলে গিয়েছিল। কিন্তু ছোট সন্তানদের কথা ভেবে মোহাম্মদ আলী মাদবর তার স্ত্রী মুন্নিকে আবার ফিরিয়ে আনে। এরপরও পরকীয়া প্রেমিক মামুন চৌকিদার বিভিন্ন ভাবে মুন্নি বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করত। গত বুধবার রাতে মোহাম্মদ আলী মাদবর নিখোঁজ হওয়ার পরদিন পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে পাঠায়। হাসপাতাল থেকে মোহাম্মদ আলীর স্বজনরা জানতে পারে মোহাম্মদ আলী ঘুমের ওষুধ খেয়েছিল। এরপর বাড়িতে এসে মুন্নি বেগমের কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে ভাতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্বামীকে পরকীয়া প্রেমিক মামুন ও তার সঙ্গীদের কাছে তুলে দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে মুন্নি বেগম। এরপর মুন্নি বেগমকে আটক করে থানা পুলিশ খবর দেয় এলাকাবাসী।

নিহত মোহাম্মদ আলী মাদবরের স্ত্রী মুন্নি বেগম বলেন, আমি চলে গিয়েছিলাম। এরপর ঝামেলা করে আমাকে আবারও এনেছিল মোহাম্মদ আলী। এই বাড়িতে আসার পরেও মামুনের সঙ্গে আমার মোবাইলে যোগাযোগ হয়েছিল। মামুন আমাকে বলেছিল, মোহাম্মদ আলী আমার (মামুনের) নামে মামলা করেছে। মামলা যদি চলমান থাকে তাহলে মোহাম্মদ আলীর ক্ষতি করব। কিন্তু আমি তাকে বলেছিলাম, মোহাম্মদ আলী মামলা তুলে ফেলবে, ক্ষতি করার দরকার নেই। কিন্তু সে আমার কথা শোনেনি বরং আমাকে ভয় দেখিয়ে বলেছে, ‘আজ ঘুমের ওষুধ দিয়ে যাব, এই ওষুধ মোহাম্মদ আলীকে খাওয়াতে হবে। নয়ত তোমার মেয়েদের মেরে ফেলব।’ মামুনের এমন কথায় আমি মোহাম্মদ আলীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়েছি। এরপর মামুন এসে মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে গেছে। মামুন যখন মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে যায়,তখন ওর সঙ্গে আরো দুইজন ছেলে ছিল কিন্তু আমি তাদের চিনি না। যখন মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে যাচ্ছিল,তখন মোহাম্মদ আলী অজ্ঞান ছিল।

নিহতের ভাতিজা আসিফ মাদবর বলেন, কাকী দুই তিন বার চলে গিয়েছিল। কাকায় শিশু মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বারবার ফিরিয়ে এনেছে। কিন্তু কাকী ভালো হয়নি। গত বুধবার রাতে প্রথমে কাকার কাছ থেকে সব টাকা পয়শা নিয়ে নেয় কাকী। এরপর কাকাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে পরকীয়া প্রেমিক মামুনের কাছে তুলে দেয়। মামুন আমার কাকাকে মেরে ফেলছে। আমি হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।

নিহতের বড় বোন আয়েশা বেগম বলেন,
বারবার চলে যাওয়া সত্ত্বেও আমার ভাই মুন্নিকে এনেছিল। কিন্তু বুধবার রাতে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে পরকীয়া প্রেমিক দিয়ে আমার ভাইকে হত্যা করেছে মুনি। আমি ভাই হত্যার বিচার চাই।

বিষয়টি নিয়ে শরীয়তপুর পুলিশের অতিরিক্ত সুপার (নড়িয়া সার্কেল) আহসান হাবীব বলেন, নিহত মোহাম্মদ আলীর পরিবারে দাম্পত্য কলহ ছিল। বিষয়টি নিয়ে থানায় বেশ কয়েক বার অভিযোগ করা হয়েছিল। মোহাম্মদ আলীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তার স্ত্রীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করতেছিল স্বজনরা। বিষয়টি থানা পুলিশ টের পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে রয়েছে, পুরো বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।