নির্ভরতা এবং আস্থার দিক থেকে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণে তরুণ-তরুণীদের আগ্রহ বাড়ছে। তাই মফস্বলের গ্রাম থেকে ঘরে বসে আয় করা এখন আর অলীক কল্পনা নয়। দিবা-রাত্রির মতো সত্য। তারই প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বেকার যুবক যুবতীরা।

এই উপজেলার তরুণ যুবক মো. আশিকুজ্জামানের একক উদ্যোগ ও আন্তরিকতার মাধ্যমে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে তরুণ-তরুণীদের মুক্ত করতে উপজেলার সদর বাজারের চুয়াল্লিশের মোড়ে স্থাপন করেন ‘আশিক একাডেমি’ নামে একটি ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের কর্মদক্ষ করে মফস্বলের বাড়িতে বসেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাজ করছে আলফাডাঙ্গা উপজেলার তরুণ-তরুণীরা।

বর্তমানে আলফাডাঙ্গা উপজেলার অর্ধ শতাধিক তরুণ-তরুণী ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত রয়েছেন। পাশাপাশি অনলাইনে দেশের বিভিন্ন স্থানের সহস্রাধিক তরুণ-তরুণী নিজেদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে ওয়েব পেজের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। আবার এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ঘরে বসে আয় করে সংসারও চালাচ্ছেন প্রায় ২০ তরুণ-তরুণী।

আলফাডাঙ্গা উপজেলায় এই ধরণের আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন এবং তরুণ সমাজকে প্রশিক্ষণ প্রদান করার উদ্যোগ এই প্রথম। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো. আশিকুজ্জামান একজন দক্ষ ফ্রিল্যান্সার। বর্তমানে তিনি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস ফাইবারের লেভেল টু একজন সেলার।‌ এর পাশাপাশি বাংলাদেশের বৃহত্তম ই-লার্নিং প্লাটফর্ম ‘ইনস্ট্রাক্টরির’ একজন ইনস্ট্রাক্টর।

সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ জানান, এই ধরনের ট্রেনিং সেন্টার বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে সরকার ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার সিদ্ধান্তকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। তরুণ যুবক মো. আশিকুজ্জামানের এই ধরনের বাস্তবধর্মী চিন্তা ভাবনা ও উদ্যোগ সত্যি প্রশংসা পাওয়ার দাবী রাখেন।

আশিক একাডেমীতে কোর্স করতে আসা হাবিবুর রহমান নামে এক প্রশিক্ষণার্থী জানান, ‘সে অনার্স তৃতীয় বর্ষের একজন শিক্ষার্থী। চাকরী নামক সোনার হরিণের পিছনে না দৌঁড়ে তিনি আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। সেকারণেই তিনি ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন।’

স্বাধীন বিশ্বাস নামে ডিগ্রি প্রথম বর্ষের অপর এক প্রশিক্ষণার্থী জানান, ‘আশিক একাডেমি থেকে ছয়মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে ইনকাম শুরু করেছেন তিনি। ইতোমধ্যে তার ৪০০ ডলারের মতো আয়ের সুযোগ হয়েছে।’

প্রশিক্ষণের প্রথম ব্যাচের সনদপ্রাপ্ত প্রশিক্ষণার্থী ঊর্মি আক্তার জানান, ‘আশিক একাডেমি থেকে কোর্স সম্পন্ন করে ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইনসহ ডিজিটাল মার্কেটিং প্লেসের বিভিন্ন বিষয়ে জানার সুযোগ হয়েছে। অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে উপার্জন করছি। এখন আমি স্বনির্ভর।’

উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা কাজী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘যুবক যুবতীদের বেকারত্ব দূরীকরণে ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি আলফাডাঙ্গা উপজেলার বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মদক্ষ নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।’

আলফাডাঙ্গা উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লায়লা পারভীন জানান, ‘সমাজের অবহেলিত বেকার নারী ও শিক্ষিত নারীরা যত বেশী দক্ষতা অর্জন করবে দেশ ততবেশি এগিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার নারী সমাজকে এগিয়ে নিতে বা এগিয়ে দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তার ধারাবাহিকতায় ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং ট্রেনিং সেন্টার আলফাডাঙ্গার নারী সমাজকে স্ব স্ব ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা হিসাবে তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

জানতে চাইলে আশিক একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মো. আশিকুজ্জামান জানান, গতানুগতিক প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোথাও গিয়ে না শিখে আলফাডাঙ্গা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের তরুণ-তরুণীরা আশিক একাডেমি থেকে গুণগত মানের স্কিল ডেভেলপমেন্ট করতে পারে। বর্তমানে বেকারত্বের হার কমানোর উদ্দেশ্যে ও চাকরির বাজারে প্রেসার কমিয়ে তরুণদের প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার পাশাপাশি ডিজিটাল স্কিলে দক্ষ করে ফ্রিল্যান্সিং করে দেশের রেমিটেন্সে অবদান রাখার জন্য কাজ করে যাওয়াই আমার মূল লক্ষ্য। এই উদ্দেশ্যে সফলভাবে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে আমি ফ্রিল্যান্সিং কিংবা আউটসোর্সিং সেন্টারটি চালু করেছি। বর্তমানে অর্ধশতাধিক তরুণ-তরুণী এখানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এবং ২০ জন প্রশিক্ষণ নিয়ে ইনকাম শুরু করেছে। এই ট্রেনিং সেন্টারে প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখা গেলে ভবিষ্যতে বেকারমুক্ত আলফাডাঙ্গা উপজেলা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। তবে এক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা ও সহযোগিতা এখানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে।

আলফাডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মো. আলী আকসাদ ঝন্টু বলেন, ‘কর্মদক্ষ জনবল দেশের সম্পদ। দেশকে এগিয়ে নিতে বেকার জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমান সরকারের এই উদ্যোগ বাস্তবায়নকে আরো বেশি ত্বরান্বিত করবে আলফাডাঙ্গা উপজেলার একমাত্র ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আশিক একাডেমি।’