চীনের মালিকানাধীন ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটক নিষিদ্ধ করতে একটি বিল পাস করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার (১৩ মার্চ) দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে শাসক দল ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকান পার্টির সদস্যরা অভূতপূর্বভাবে বিলটির পক্ষে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু অ্যাপটি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীন।

বিলটি এখন যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে যাবে। সেখানে পাস হলে প্রেসিডেন্টের কাছে যাবে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্বাক্ষর করলেই বিলটি আইনে পরিণত হবে।

ইতঃপূর্বে বাইডেন বলেছেন, বিলটি তার টেবিলে যাওয়ামাত্রই কালবিলম্ব না করে তাতে সই করবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, টিকটক তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ বিভক্ত করছে। তাদের নাগরিকদের তথ্য চীন সরকারের কাছে পাচার করছে। কিন্তু টিকটক কর্তৃপক্ষ ও চীনের কর্মকর্তারা এ ধরনের অভিযোগ বারবার অস্বীকার করেছেন।

বিলটিতে বলা হয়েছে, ছয় মাসের মধ্যে বাইড্যান্সকে টিকটকের যুক্তরাষ্ট্রের সব শেয়ার বিক্রি করে দিতে হবে। অন্যথায় অ্যাপটি যুক্তরাষ্ট্রে বন্ধ করে দেওয়া হবে।

কিন্তু চীন এ ধরনের শর্তে রাজি হবে না। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বিলটি পাস হওয়ার পর বলেছেন, টিকটক যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি এ বিষয়টি তারা এখন পর্যন্ত প্রমাণ করতে পারেনি। তার পরও তারা অ্যাপটি বন্ধ করতে চাচ্ছে। এটা স্বাভাবিক বাণিজ্য পরিবেশ ধ্বংস করবে। বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত করবে। তদুপরি এ ধরনের সিদ্ধান্ত স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্রকেই উল্টো কামড় দেবে।

টিকটকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাও ঝি শেউ বলেছেন, আমাদের প্ল্যাটফর্ম সব ধরনের বাইরের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত। অ্যাপটি যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হলে অল্পসংখ্যক সমাজমাধ্যম আরও বেশি শক্তিশালী হবে। যুক্তরাষ্ট্রের হাজার হাজার মানুষের চাকরি ঝুঁকিতে পড়বে।

কিন্তু গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক তদন্তে দেখা গেছে, টিকটকের যুক্তরাষ্ট্র অফিস চীনের বাইড্যান্স অফিসে কিছু তথ্য সরবরাহ করেছে। বাইড্যান্সের কর্মকর্তারা অন্তত একজন সাংবাদিকের তথ্য অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করেছেন।

ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকান পার্টির অধিকাংশ আইনপ্রণেতা টিকটক বন্ধ করার পক্ষে হলেও অল্প কিছুসংখ্যক অ্যাপটি বন্ধ করার বিপক্ষে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একসময় টিকটক বন্ধ করার পক্ষে থাকলেও বর্তমানে তিনি অ্যাপটি যুক্তরাষ্ট্রে চালু রাখার পক্ষে। বুধবার প্রতিনিধি পরিষদে বিলটি পাস হওয়ার সময় কিছুসংখ্যক ব্যবহারকারী টিকটক নিষিদ্ধ না করতে বিক্ষোভ করেছেন।

২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত টিকটকের মাতৃকোম্পানি বাইড্যান্স। ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত চীনের এ প্রযুক্তি কোম্পানিটি সারা বিশ্বে অত্যন্ত প্রভাবশালী।

এদিকে টিকটক চীনের মালিকানাধীন কোম্পানি হলেও এর প্রধান কার্যালয় যুক্তরাজ্যের নিয়ন্ত্রণাধীন ক্যারিবীয় অঞ্চলের কেম্যান দ্বীপপুঞ্জে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এর কার্যালয় রয়েছে।

সারা বিশ্বে টিকটকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০০ কোটির বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে তা ১৫ কোটির বেশি। প্রধানত তরুণরাই এর ব্যবহারকারী। তবে নানা বয়সের ইনফ্লুয়েন্সারের মধ্যে এটা দারুণ জনপ্রিয়। এতে ৩ সেকেন্ড থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০ মিনিটের ভিডিও শেয়ার করা যায়। প্রচলিত বিনোদন বা ভিডিও মাধ্যমগুলোর চেয়ে এটা নানা দিক থেকে আলাদা। লেগে থাকলে ভালো আয়ও করা যায়।

সূত্র : বিবিসি, গার্ডিয়ান