ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, একটি পরিবারের একজন চাকরি করলে একটি পরিবারই স্বাবলম্বী হয়, কিন্তু কেউ উদ্যোক্তা হলে তার অধীনে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ক্যারিয়ারে একজন তরুণ-তরুণীর প্রয়োজন প্রশিক্ষণ, পুঁজি ও প্রযুক্তি৷ আমরা যদি তাদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারি আর এরপরে তারা যদি পুঁজি পায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার একটা করে ল্যাপটপ পায়, তাহলে তারা মেধাকে কাজে লাগিয়ে আত্মনির্ভরশীল হবেন। আমাদের ছয় লক্ষ ৯০ হাজার ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। সবমিলিয়ে ত্রিশ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এই সেক্টরে।

শুক্রবার (০৮ মার্চ) বিকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ‘প্রযুক্তির সহায়তায় নারীর ক্ষমতায়ন’ প্রকল্পের আওতায় নারী প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে ল্যাপটপ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন৷ পলক আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলায় প্রশিক্ষণ নিতে দুই হাজারের অধিক নারী আবেদন করেছিলেন৷ তাদের সবাইকে সুযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি৷ এবারের প্রশিক্ষণে ২৬৫ জন অংশ নিয়েছিলেন৷ তারুণ্যের মেধাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের তরুণ-তরুণীরা দেশের চাহিদা মিটিয়ে উন্নত দেশের চাহিদানুযায়ী ফ্রিল্যান্সিং করবে। তাদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, নিজেরা স্বাবলম্বী হয়ে যাওয়ার পরে, আজ থেকে পাঁচ-সাত বছর পরে তারা যেন তারই মতো আরেকজন অদম্য ও সংগ্রামী নারীকে এরকম একটি ল্যাপটপ কিনে দেন৷

নারায়ণগঞ্জের বর্তমান অবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ১৫ বছর আগের নারায়ণগঞ্জ ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন, সন্ত্রাস কবলিত৷ আজ আমি সংসদ ভবন থেকে এখানে এসেছি মাত্র ৪০ মিনিটে৷ এটি আগে কল্পনাও করা সম্ভব ছিল না৷ এখানে ছয় লেনের কাজ হচ্ছে, শেখ কামাল আইটি ইনস্টিটিউট হচ্ছে।এগুলো সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ড্রিম প্রজেক্ট৷

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান বলেন, এখানে আসলে আমি বক্তব্য দিতে নয়, শিখতে এসেছি৷ আমি প্রতিদিন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে যুদ্ধ করি৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বলেই আমরা আজ স্বাধীন৷ নারায়ণগঞ্জের মেয়েরা যে বক্তব্য এখানে দিল, কখনও কল্পনাও করিনি যে এতো সুন্দর বক্তব্য তারা দিবে৷ আজকে একজন দোকানদারও অনলাইনে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন৷ এতো সুন্দর একটা দেশ আমাদের। এসবের নির্দেশনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আর তা পালন করেন প্রতিমন্ত্রী পলক৷ আমাদের নারায়ণগঞ্জে এবার আমরা ইংরেজি, স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ ভাষাগুলাও শেখাতে চাই৷ যারা এখানে ল্যাপটপ নেওয়ার জন্য এসেছেন, তাদের যদি কখনও চাকুরির জন্য আমাকে বলা প্রয়োজন হয় আমাকে বলবেন৷

নারায়ণগঞ্জ-৪ (সিদ্ধিরগঞ্জ-ফতুল্লা) আসনের সংসদ সদস্য একেম শামীম ওসমান বলেন, ডিজিটাল শব্দটি প্রথম শুনেছিলাম ২০০১ সালের শেষ দিকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় আর আমি তখন দুই-তিনটা বছর একসাথে ছিলাম৷ জয় আমাকে বোঝাতেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে আমরা যখন প্রবেশ করবো, তখন এসব কাজগুলো করবো৷ কিন্তু আমি তখন কিছুই বুঝতাম না৷ আমার আসলে এখনও ফেসবুক নাই৷ ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম৷ আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির কথাই ভেবেছেন শেখ হাসিনা৷ আমার জীবনে তার মতো দেশপ্রেমিক মানুষ দেখিনি৷ গতকাল আমার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী গেছে৷ আমি এখনও তার স্বাভাবিক মৃত্যুই মেনে নিতে পারি না৷ অথচ ৭৫’ এর ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বাদে তার পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলা হলো৷ আমরা কিন্তু ৭৫’ সালের পরের প্রোডাক্ট৷ শেখ হাসিনার মতো আমার বাবা-মা, ভাইবোনকেও যদি এক রাতে মেরে ফেলা হতো, আমি হয়তো সবচেয়ে বড় খুনী হতাম। নয়তো আধা পাগল হতাম৷ একদিন জয় আমাকে বলছে, শামীম ভাই, হঠাৎ করেই বড় হয়ে গেলাম, মায়ের বুকের ওমটাও পেলাম না ঠিকভাবে৷ ১৯জন মন্ত্রী নারায়ণগঞ্জে ঢুকতে পারেননি আমাদের বাধায়৷ আমরা কখনও ভাবিনি শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন। কেবল চেয়েছি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হতে হবে। আমার সংগঠন প্রত্যাশার মাধ্যমে আমি চাই, একটি মেয়ে যখন রাস্তায় বের হতে চাইবে, বাবা-মা যেন ভয় না পায়৷ যেভাবে নারীদের বন্দি করে রাখার চেষ্টা হয়, কোনো ধর্মেই তা লেখা নেই৷ আপনারা নিজেদের কেবলই মানুষ ভাববেন৷

সভাপতির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হক বলেন, ২০০৮ সালে হবিগঞ্জে চাকুরিতে যোগ দেওয়ার পরে দেখলাম, ডিসি অফিসে মাত্র একটি কম্পিউটার। সেখানে কাজ করা দুয়েকজন বাদে কেউই কম্পিউটার জানেন না৷ ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশের অঙ্গীকার করলেন ইশতেহারে৷ উনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হয়৷ আজ সেই স্বপ্ন বাস্তব।

ল্যাপটপ উপহার পাওয়া শিক্ষার্থী মাসুদা পারভিন লিজা অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, একটি জাতি ততোটাই উন্নত, যতোটা তারা ইনফরমেশন টেকনোলজিতে উন্নত। আমার এই জার্নিটা আসলে সহজ ছিল না। যখন আবেদন করি, তখন অনেকেই বলেছিলেন, এগুলো করে কিছু হবে না। কিন্তু নিজের উপর আস্থা রেখে আজ আমি একজন সফল আইটি সার্ভিস প্রোভাইডার। নিজেকে এজন্যই সফল বলছি কেননা যখন আমি আবেদন করি তখন কম্পিউটারের বেসিক কিছুই জানতাম না, অথচ এখন আমি সাফল্যের সাথে আয় করছি এই সেক্টর থেকে৷

লামিয়া পারভীন নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আগে মানুষের সামনে কথা বলতে ভয় পেতাম, এখন সেই জড়তা অনেকটাই কেটেছে। এই ল্যাপটপের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করে নিজেকে আত্মপ্রত্যয়ী করে গড়ে তুলবো৷

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীল, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মো. গোলাম মোস্তফা রাসেল, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. মোস্তফা কামাল, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।