তিন বছরের বেশি সময় মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থেকেও প্রতিদিনের শিক্ষক হাজিরা খাতায় রয়েছে উপস্থিতির স্বাক্ষর। এমন কি বেতন বিলের সীটেও নিয়মিত স্বাক্ষর করে ব্যাংক থেকে মাসের বেতন উত্তোলন করা হয়। পুরো বিষয়টি মাদ্রাসার সুপার ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জানলেও নেয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা। ঘটনাটি ঘটেছে নোয়াখালী হাতিয়ার খাসের হাট মাজেদিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসায়।

বিষয়টি জানজানি হয়ে গেলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাদ্রাসা পরিদর্শন করেন। তাতে ঘটনার সত্যতা খুঁজে পান। পরে সুপারসহ মাদ্রাসার সবাইকে আদেশ দিয়ে আসেন উক্ত ঘটনার ব্যবস্থা নিতে।
অভিযুক্ত শিক্ষক মো.ইয়াকুব নুরী উক্ত মাদ্রাসার এবতেদায়ি শাখার সহকারী শিক্ষক। তাহার শিক্ষক ইনডেক্স নং-৩০১৬৮০-টি-৪০৪। ডিসেম্বর ২০১৩ (খ্রীঃ) থেকে এই মাদ্রাসাতে তিনি শিক্ষকতা করছেন।

সদ্য বদলী হওয়া হাতিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমির হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, দীর্ঘদিন থেকে ইয়াকুব নুরী নামে একজন শিক্ষক মাদ্রাসায় অনুপস্থিত। নিয়মিত বেতন উত্তোলন করছেন। এটি জানার পর মাদ্রাসায় গিয়ে সত্যতা পাওয়া যায়। সুপার জানান তিনি অসুস্থ। কিন্তু মেডিকেল ছুটি সহ কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেন নি। এ ধরণের কাজ সম্পূর্র্ণ আইন বহির্ভূত বলে তিনি মাদ্রাসা কর্তপক্ষকে দ্রæত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেন।
মাদ্রাসা সংলগ্ন চরকিং ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আল আমিন জানান, দীর্ঘ তিন বছরের ও বেশি সময় ধরে এই শিক্ষক মাদ্রাসায় আসেন না। কিন্তু প্রতি মাসে বেতন উত্তোলন করেন। প্রতিদিন মাদ্রাসার উপস্থিতির স্বাক্ষরও অন্য একজন দিয়ে দিচ্ছেন। স্থানীয় অভিভাবকদের অভিযোগ থাকলেও কোন প্রতিকার পায়নি তারা। তিনি নিজেও মাদ্রাসায় গিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু সুপার সম্পূর্ণ নিজ ক্ষমতা বলে বিশাল এই অনিয়ম করে যাচ্ছেন।
এদিকে ২০২৪ সালের জানুয়ারী মাসের মাদ্রাসার শিক্ষক উপস্থিতির সিটের একটি কপি পাওয়া যায় তাতে শিক্ষক ইয়াকুব নুরীর উপস্থিতির স্বাক্ষর দেওয়া আছে। আবার একই বছরের ফেব্রæয়ারী মাসের বেতন বিলের সিটের একটি কপি পাওয়া যায় তাতেও শিক্ষক নুরীর স্বাক্ষর রয়েছে। কিন্তু দুটি সিটে একই ব্যক্তির স্বাক্ষরের কোন মিল পাওয় যায়নি।

এই বিষয়ে মাদ্রাসার সহ-সুপার মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান জানান, ইয়াকুব নুরী নামে এই শিক্ষক দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ হয়ে হাতিয়ার বাহিরে অবস্থান করছেন। তার পরিবর্তে অন্য একজনকে মৌখিক ভাবে নিয়োগ দিয়ে পাঠদান অব্যাহত রাখা হয়েছে। সম্পূর্ণ মানবিক দৃষ্টি থেকে এটি করানো হয়েছে। সাংবাদিকদের সাথে আলাপ কালে মানবিক দিক বিবেচনা করে সংবাদ প্রচার না করার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।

এই ঘটনায় মাদ্রাসার সুপার আবু জাফর মো: ইকবাল এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। সাংবাদিকদের এসব তথ্য কে দেয় বলে তিনি প্রশ্ন তোলেন। এসব কিছু তিনি স্ব স্ব কর্তৃপক্ষকে অবহিত করছেন বলে জানান। এবিষয়ে মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি মো: একজাজ উদ্দিনের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।