সারাদেশে চলছে তীব্র দাবদাহ। প্রখর রোদ আর ভ্যাপসা গরমে এখন টিকে থাকাই মুসকিল। আর এই প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণ হিসেবে গাছ কাটাকে দায়ী করছেন কেউ কেউ। এদিকে শরীয়তপুরে উন্নয়নের নামে প্রায় বৃক্ষশূন্য করে ফেলা হচ্ছে বিভিন্ন এলাকা। শুধু চলতি অর্থবছরের প্রায় ৪ মাসে জেলার ১৯ কিলোমিটার সড়কে প্রায় ১৭শ গাছ অপরিকল্পিতভাবে কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে বন বিভাগের বিরুদ্ধে। এতে করে জেলার দাবদাহ আরো বেড়েছে।

স্থানীয় ও বন বিভাগের সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরে জেলার ছয়টি উপজেলায় ১৯ কিলোমিটার সড়কের পাশে দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্পের আওতাধীন প্রায় ১৭শ গাছ টেন্ডার করে বিক্রি করেছে বন বিভাগ। এরমধ্যে সদর উপজেলার বাংলা বাজার হতে ঘোড়ারঘাট পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার, আটং ডিসি রোড হতে পম-লাকার্তা পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার অংশের গাছ কাটা হয়েছে। এছাড়াও ভেদরগঞ্জ উপজেলার পুরাতন মোল্লার বাজার হতে বাংলা বাজার পর্যন্ত ১ কিলোমিটার, চরপায়াতলি হতে হাকিম আলি ব্রিজ পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার অংশ, ডামুড্যার স্বনির্ভর হতে কুতুবপুর পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার এবং গোসাইরহাটের দপ্তরি বাড়ি হতে মলংচরা পর্যন্ত ১ কিলোমিটার রাস্তার গাছ কাটা হয়েছে। এসব সড়কের পাশে ছিলো অর্জুন, নিম, রেন্ট্রি কড়ইসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এ-তো গেলো সরকারি হিসেব তবে এর বাহিরে রয়েছে ভয়াবহ চিত্র। মাঝে মধ্যে হরহামেশাই দেখা যায় বিভিন্ন জায়গায় গাছ কাটা হচ্ছে। এবিষয়ে স্থানীয়’রা উপজেলা প্রশাসনে জানালে এড়িয়ে যায়। এছাড়াও বেশ কয়েকটি সড়কের গাছ বিক্রির অপেক্ষায় মার্ক করে রেখেছে বন বিভাগ। গত তিন বছরে সরকারিভাবে গাছ কাটা হলেও একটি গাছও রোপণ করেনি বনবিভাগ। এতে ছায়াশীতল সড়কগুলো এখন খাঁ খাঁ রৌদ্রে উত্তপ্ত হয়ে পথচারীদের অস্বস্তি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরজমিনে ছয়গাঁ ও বালার বাজার সড়কে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের গাছগুলো এখন আর নেই। শতবছরের বড় বড় গাছগুলো কেটে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এক সময়কার ছায়াযুক্ত সড়কগুলো এখন তীব্র রোদে খাঁ খাঁ করছে।

রুদ্রকর বালার বাজার হতে ঘোড়ারঘাট পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়কটি একসময় অর্জুন, নিম, হরতকি, কৃষ্ণচূড়া, রেন্ট্রি কড়ই গাছে ঘেরা ছিলো। গ্রীষ্মের সময় প্রচন্ড তাপে স্থানীয় লোকজন জায়গাটিতে গিয়ে স্বস্তি পেতো। গত কয়েক মাস আগে এই সড়কের অন্তত ৪০০ টি গাছ কেটে ফেলা হয়। বর্তমানে তীব্র রৌদ্রে সড়কটিতে হাঁটাই যাচ্ছে না।

এই সড়কের মতোই বিভিন্ন গাছের ছায়া দিতো ছয়গাঁ বাংলাবাজার সড়কটি। সেই সড়টির গাছগুলো বিক্রি করে দিয়েছে বন বিভাগ।

স্থানীয় বাসিন্দা ইমরান হোসেন বলেন, প্র‍তিবছর গরমকাল আসলেই আমরা সবাই মিলে বালার বাজার সড়কের পাশে গিয়ে বসতাম। এখানে যেমন বাতাস প্রবাহিত হতো তেমনি কৃষ্ণচূড়া ফুলের লাল-রঙে রঙিন হয়ে উঠতো। বর্তমানে সড়কের সব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এতে সড়কটির সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি আমাদের এলাকায় দাবদাহ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।

স্থানীয় কৃষক আবু কালাম মাদবর বলেন, এই সড়কের পাশেই আমার ধানের জমি। প্রতিবছর ধান কাটার পর যখন গরমে খুব ক্লান্ত হয়ে যেতাম, তখন এই সড়কে গাছের নিচে বসে আরাম করতাম। ছোটবেলা থেকেই আমরা দেখেছি এখানে শতবছরের পুরনো গাছ। এখন আর সেই বড় বড় গাছগুলো নেই। সব কেটে ফেলা হয়েছে। এখন কবে গাছ লাগাবে আর সেই গাছ কবে বড় হবে। আমাদের জন্য গাছের ছায়া খুবই দরকার।

এ বিষয়ে স্থানীয় সমাজকর্মী এডভোকেট তৌহিদ কোতোয়াল বলেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারন হল জলবায়ু পরিবর্তন। এই জলবায়ু পরিবর্তনকে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের প্রচুর পরিমাণ গাছ লাগাতে হবে। কিন্তু শরীয়তপুরের বন বিভাগ নতুন করে রাস্তার পাশে গাছ না লাগিয়ে অন্তত দেড় হাজার গাছ কেটে ফেলেছে। এটি সত্যিই দুঃখজনক।

এদিকে গাছ কাটার বিষয়টি স্বীকার করে জেলা বন কর্মকর্তা মো: সালাহউদ্দিন বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্পের আওতায় প্রতি ১০ বছর পর পর বন বিভাগের রোপণ করা গাছ কর্তন করা হয়। চলতি বছরে ১৯ কিলোমিটার সড়কের বেশ কিছু গাছ কাটা হয়েছে। তবে আমরা চুক্তিশর্ত অনুযায়ী এই বছর অন্তত ১৯ হাজার পরিবেশ বান্ধব গাছ লাগাবো।

এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, সড়কে গাছ কেটে ফেলার বিষয়টি দেখবো। নতুন করে গাছ লাগানোর বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।