আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্র করে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লড়াই ও অর্ন্তদ্বন্দ্বে বেসামাল চাঁপাইনবাবগঞ্জ আওয়ামী লীগ। নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ততই বাড়ছে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ইউনিট কমিটি ও সহযোগি সংগঠনের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। এমন পরিস্থিতিতে নেতাদের মধ্যে ঐক্য ফেরাতে তৎপরতা শুরু করেছে দলটি। সংকট সমাধানে কেন্দ্রীয় নেতাদের সহযোগিতা নেয়ার কথা বলছেন স্থানীয় নেতারা।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে পেছনে কারণ জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন লাভ। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ এবং জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও পৌর মেয়র মোখলেসুর রহমানের দ্বন্দ্বে দুইভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে দলটি। আগামী নির্বাচনে মেয়র মোখলেসুর রহমানকে এমপি হিসেবে দেখতে চেয়ে ফেস্টুন টাঙানো হয়েছে। এরপর থেকেই মুলত দ্বন্দ্ব প্রকট হয়। তবে দলটির উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ এবং সহযোগি সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটের অধিকাংশ শীর্ষ নেতা পৌর মেয়র মোখলেসুর রহমানের পক্ষে রয়েছেন। অনেক আগে থেকেই উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ এবং সহযোগি সংগঠনের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। অর্ন্তদ্বন্দ্বের বাড়তে থাকায় সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর আসনটি আওয়ামী লীগের কাছে ছিল অধরা। ২০০৮ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আওয়ামী লীগের সেই স্বপ্নপূরণ হয়েছিল আব্দুল ওদুদের মাধ্যমে। পরের বার ২০১৪ সালেও দলের মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে পরাজিত হন। ১লা ফেব্রুয়ারি উপনির্বাচনে আবারও এমপি নির্বাচিত হয়েছেন আব্দুল ওদুদ।
এদিকে জামায়াত অধ্যুষিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায় বেশ দাপটের সঙ্গে জয়লাভ করেন মো. মোখলেসুর রহমান। ইতিহাস গড়ে প্রায় চার দশক পর আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। এরপর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজনীতিতে একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করেন তরুণ এই নেতা। এমপি ওদুদের এক আধিপত্যের বলয় ভেঙে এ আসনটিতে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন মোখলেসুর রহমান। তিনি এখন রাজনীতির মাঠে আব্দুল ওদুদ এমপির শক্তিশালী প্রতিপক্ষ।
পৌর মেয়র মোখলেসুর রহমান বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সুপারিশের ভিত্তিতে দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আমি মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। এখন জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা, উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকসহ সহযোগি সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটের নেতারা আমাকে এমপি হিসেবে দেখতে চাইছেন। আমি সে লক্ষ্যে দলকে সংগঠিত করতে কাজ করছি। কিন্তু মাননীয় সংসদ সদস্য আমাকে নানাভাবে বাঁধা সৃষ্টি করছেন। তার নগ্ন হস্তক্ষেপ ও হয়রানি বন্ধ করা উচিত।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ এমপি বলেন, আমি যখন আওয়ামী লীগে যোগদান করি তখনও কিছু জনবিচ্ছিন্ন নেতা আমার যোগদানটাকে মেনে নিতে পারেনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তারা আমার বিরোধীতা করেছে। তারপরও আমি এমপি নির্বাচিত হয়েছি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আওয়ামী লীগ এখন আগের যে কোন সময়ের চেয়ে শক্তিশালী। স্থানীয় নেতাদের বিরোধীতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অর্থ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে তারা আমার বিরোধীতা করে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে জানানো হয়েছে। নিশ্চিয় তার ব্যবস্থা নেবেন। সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডের নেতাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে, তারা আমার জন্য কাজ করছেন।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুহা. জিয়াউর রহমান এমপি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। এখানে প্রতিযোগিতা আছে। প্রতিযোগিতা থেকেই অভ্যান্তরীণ দ্বন্দ্বের সৃষ্টি। পরিবারেও দ্বন্দ্ব হয়। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চলছে।
বার্তাবাজার/এম আই