বেশ কয়েক মাস বিরতির পর আবার নির্বাচনী মাঠের কর্মসূচিতে নামছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সর্বশেষ মার্চে ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দিয়েছিলেন তিনি। এর আগে তিনি কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, যশোরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় জনসমাবেশে যোগ দেন। এদিকে ঈদের পরই শনিবার ২ দিনের সফরে টুঙ্গিপাড়ায় যান শেখ হাসিনা। সেখানে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। নিজের গ্রামের মানুষের সঙ্গেও কুশল বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী।

নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত দলীয় সভাপতির মাঠের কর্মসূচি নির্ধারিত ছিল। টানা বেশ কয়েকটি জেলা শহরে তিনি দলীয় কর্মসূচি পালন করেন। মাঝে হঠাৎ করেই জেলা সফর থেকে বিরত থাকেন প্রধানমন্ত্রী। পরপর দুই ঈদ থাকায় জনসভার মতো কর্মসূচিতে বিরতি দেয়া হয়।

এখন আবার নতুন করে প্রধানমন্ত্রীর জেলা সফরের শিডিউল সাজানো হচ্ছে। নির্বাচন পর্যন্ত তিনি নিয়মিত জনসভাগুলোতে যোগ দেবেন।
দলীয় নেতারা জানান, দলীয় সভানেত্রীর সফর ঘিরে নির্বাচনী আবহ তৈরি হবে নেতাকর্মীদের মাঝে। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন বিভিন্ন সফরে।

দলীয় নেতারা মনে করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি, দ্রব্যমূল্য, লোডশেডিং, বিরোধী দলের টানা কর্মসূচি ঘোষণা, কূটনৈতিক চাপ ও নানা ধরনের রাজনৈতিক অপপ্রচার ও গুজব সৃষ্টি হয়েছে। এতে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মানসিকভাবে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তাই টানা রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা করেছে আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক মাঠের কর্মসূচি বাড়ানো হচ্ছে।

অন্যদিকে সরকারের পদত্যাগ, বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ও নতুন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচন করার এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে বিরোধী দল বিএনপি ও সমমনা দল। বিরোধী দলের এক দফা আন্দোলন মোকাবিলায় প্রস্তুতির অংশ হিসেবেও আওয়ামী লীগ মাঠের কর্মসূচি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য দলীয় সভাপতির কর্মসূচিকে সামনে রেখে এগোতে চায় দলটি। দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পরিকল্পিতভাবে সরকার ও দলের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

এসবের সঙ্গে প্রশাসনকেও জড়ানো হচ্ছে। এসবের মাধ্যমে তারা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে দিতে চায়, প্রশাসনকে আওয়ামী লীগের মুখোমুখি করতে চায়। অতীতেও নির্বাচনের আগে তারা একই ধরনের তৎপরতা চালিয়েছে। তারা বলেন, এজন্য নির্বাচন পর্যন্ত রাজধানী থেকে শুরু করে মহানগর, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত কর্মসূচি বিস্তৃত করা হবে। দলের সাংগঠনিক সম্পাদকরা সম্প্রতি পৃথকভাবে দলীয় সভাপতির কাছে তাদের সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেছেন। সেখানে বেশ কিছু পরামর্শ তুলে ধরেন দলীয় নেতারা। সেসবের আলোকে রাজনীতির মাঠের কর্মসূচি বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। পাশাপাশি তিনি নিজেও এসব কর্মসূচিতে যোগ দেয়ার আগ্রহ দেখান। দলীয় নেতারা জানান, প্রধানমন্ত্রী কোনো জেলা সফর করলে সেই জেলায় চাঙ্গাভাব তৈরি হয়। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করেন।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত প্রচার-প্রচারণায় গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো জনগণের সামনে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারলে তা নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সরকারের উন্নয়ন প্রচারের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেমন ব্যবহার করা হবে, তেমনি সহযোগী সংগঠনের নেতারাও ক্ষেত্রবিশেষে নিজ সংগঠনের ব্যানারে উন্নয়ন প্রচার করবেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীদের এ নির্দেশনা দিয়েছেন। মূলত গত ২২শে জুন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা থেকে দলীয় কর্মসূচি বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়।

ওইদিন বৈঠকে দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনকে সামনে রেখে বেশ কিছু নির্দেশনা দেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকবে। আর এই ষড়যন্ত্র রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। এখন হার্ডলাইনে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। একের পর এক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকতে হবে। এরমধ্যে শান্তি সমাবেশ, পদযাত্রা, মানববন্ধন, দিবসভিত্তিক আলোচনা সভা চালিয়ে যেতে হবে। এসব কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। প্রসঙ্গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর বেশি হলে পাঁচ মাস বাকি। এদিকে আওয়ামী লীগ বলে আসছে, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর বিরোধীদের দাবি নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন।