আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন চায় না। তারা নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কারণ তারা জানে সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হলে তাদের জয় লাভ করার কোনো সুযোগ নেই। তাই যেকোনো মূল্যে, যেকোনো কায়দায় দেশকে অস্থিতিশীল করাই তাদের মূল লক্ষ্য। মঙ্গলবার (৬ জুন) বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ১৪ দলের প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন হানিফ।
বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে হানিফ বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে এজন্য আপনারা (বিএনপি) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিতে খুশি হয়ে স্বাগত জানালেন। আগামী সংসদ নির্বাচনের যখন পরিবেশ হয়েছে তখন রাজপথে আপনাদের আন্দোলন করার যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিন। এই সরকারের অধীনে নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাই করুন। দেশের সাধারণ মানুষ সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজদের ক্ষমতায় দেখতে চায় কি না নির্বাচনে অংশ নিয়ে দেখুন।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে এই বাংলাদেশকে নরক বানিয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন করেছিল। হাজার হাজার নেতাকর্মী হত্যা করেছিল। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের হাতে আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতাকর্মী নিহত হয়েছিল। লাখ লাখ নেতাকর্মী কারাবরণ করেছিল। অথচ আজ এরাই নাকি সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দল? গণতন্ত্রের জন্য মায়াকান্না করেন। নিপীড়নের কথা বলেন। আপনাদের লজ্জা হওয়া উচিত।
আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনে কেউ যাতে প্রভাব বিস্তার বা অনিয়ম না করতে পারে সেজন্য বিশ্বের মহাশক্তিধর রাষ্ট্র আমাদের উন্নয়ন অংশীদার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। ভিসানীতি রাষ্ট্রের পলিসি। সেই ভিসানীতিতে আছে কে ভিসা পাবে আর কে ভিসা পাবে না। আমরা দেখলাম এই ভিসানীতিকে বিএনপি অভিনন্দন জানিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র্যাব পুলিশের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যখন স্যাংশন দিয়েছিল তখনও আপনারা প্রশংসা করেছেন, স্বাগত জানিয়েছেন। আপনাদের লজ্জা হওয়া উচিত। যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাস, দুর্নীতির কারণে প্রথম ভিসা বাতিল করেছিল আপনাদের নেতা তারেক রহমানের। তাদের দেশে নিষিদ্ধ করেছিল। আর এখন আপনারা তাদের ভিসা নীতিকে স্বাগত জানাচ্ছেন। আপনাদের লজ্জা হয় না।
হানিফ বলেন, বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকতে দেশের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। এই বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার চক্রান্তের নেপথ্যে নেতৃত্বে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে ক্যান্টনমেন্টে বসে বিএনপি গঠন করেছিলেন। কারফিউ দিয়ে দেশ শাসন করেছিলেন। আওয়ামী লীগকে খণ্ড খণ্ড করেছিল। আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী হত্যা করেছিল। দেশকে পাকিস্তানের আদর্শে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করেছেন। অথচ তিনিই নাকি বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেছিলেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সমালোচনা করে হানিফ বলেন, সরকার নাকি সাড়ে ১৩শ’ মামলা নিয়ে মাঠে নেমেছে। এতদিন তিনি লাখ লাখ মামলার কথা বললেন। এখন এসে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১৩শ’ মামলা। এসব মামলার বেশিরভাগ খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পরিবারের দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসের কারণে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায় সরকার করেছিল। আমাদের সরকার মামলা করেনি।
তিনি বলেন, ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে তারা আগুন দিয়ে, জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর, সন্ত্রাস করে মানুষকে পুড়িয়ে-কুপিয়ে নারকীয়ভাবে হত্যা করেছিল সেই সময় সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হয়েছে। সেগুলোর কি বিচার হবে না? তারা যে অপরাধ করেছিল, এ মামলাগুলো সেই সময়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে হয়েছিল। আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছিল। স্বজন হারানো ব্যক্তিরা হত্যার বিচার পাবে না?
১৪ দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের অপতৎপরতার দিকে লক্ষ্য রাখুন। ১৪ দলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে দাঁড়াতে পারবে না। এদেরকে রুখে দিয়ে দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে হবে।
জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহম্মদ মন্নাফী, জে পি সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাম্যবাদী দলের সভাপতি কমরেড দিলিপ বড়ুয়া, জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার এমপি, ডা. শাহাদাত হোসেন, ডা. ওয়াজেদ ইসলাম খান প্রমুখ।
আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাসের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু।
বার্তা বাজার/জে আই