ইউনূস সেন্টার ফেসবুক পেজে শেয়ার করেছে জার্মান গণমাধ্যম জেডইআইটিতে দেওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি সাক্ষাৎকার। সেখানে দুই সাংবাদিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমি দেশ ছেড়ে যেতে চাই না। আমি যদি চলে যাই, তাহলে যাদের নিয়ে কাজ করি, তাদের কী হবে?

ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করা হয়, যারা আপনাকে চাপ দিয়ে আসছে; এতদিন তাদের সমালোচনা থেকে নিজেকে বিরত রেখেছিলেন। তবে এখন কেনো প্রকাশ্যে এ নিয়ে কথা বলছেন আপনি? উত্তরে ইউনূস বলেন, আমাদের অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। বাংলাদেশে সবাই জানে, এসব কীভাবে ঘটে। কারও নাম নিতে চাইনা, এটা অনেক খারাপ পরিণতি নিয়ে আসে।

৭ই জানুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এ নির্বাচনে কোনো বিরোধী দল ছিল না। প্রধান বিরোধী দলের নেতারা কারাগারে ছিলেন।

জেডইআইটির প্রশ্ন, তাকে যে ‘গরীবের রক্তচোষা’ বলে অভিহিত করা হয়, তা নিয়ে তার ভাবনা কী? উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, দাবি করা হয়, আমি গরিব মানুষের রক্ত চুষতে ব্যাংক তৈরি করেছি, তাদেরকে অতিরিক্ত সুদে ঋণ দিয়েছি। কিন্তু সত্য হচ্ছে এর বিপরীতটি। এই ঋণের কারণেই দরিদ্র মানুষরা তাদের নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে এবং দারিদ্র্য থেকে বাঁচতে সক্ষম হয়েছিল। এমনকি এই ব্যাংকটির মালিকও গ্রামের ওই দরিদ্ররা। এটাও দাবি করা হয়েছে যে, দেশের দীর্ঘতম সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের তহবিল আটকে দিতে আমি মার্কিন সরকারের সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করেছি, যেটা আমি কখনো করিনি।

ইউনূসকে পদ্মা নদীতে চুবানি দেওয়া সংক্রান্ত মন্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন একটি বিশাল অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে সকল বিশিষ্ট ব্যক্তি, রাষ্ট্রদূত এবং বিদেশি অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বেশিরভাগ কথাই ছিল আমাকে নিয়ে। আমি কীভাবে সেতুর বিরোধিতা করেছি এবং কীভাবে তিনি আমার বিরুদ্ধে জিতেছেন সে সম্পর্কে। তিনি নিশ্চিত করতে চান যে, মানুষ আমাকে ঘৃণা করুক।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন এমন চান? জবাবে ইউনূস বলেন, আমার কোনো ধারণা নেই। কেউ বলে এটা ব্যক্তিগত, কেউ বলে এটা রাজনৈতিক।

গত মঙ্গলবার প্রকাশিত সাক্ষাৎকারটিতে গণমাধ্যমটি লিখেছে, নিজ দেশে ৮৩ বছরের ইউনূসের কারাগারে যাওয়ার উদ্বেগ বাড়ছে। এমতাবস্থায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ শত শত নোবেলজয়ী ইউনূসের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। ২০২৩ সালের মার্চ থেকে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একাধিক খোলা চিঠি লিখেছেন, যাতে তারা ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান ‘নিরবিচ্ছিন্ন হয়রানির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেন।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে জানুয়ারিতে ড. ইউনূসকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়, এখন জামিনে আছেন। গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ড. ইউনূস অভিযোগ করেন, তাদের আটটি প্রতিষ্ঠানকে জবরদখল করা হয়েছে।

সাক্ষাৎকারে ইউনূস বলেন, পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক, খুবই দুঃখজনক। আমাদের অফিসগুলো অজ্ঞাত ব্যক্তিরা দখলে নিয়ে নিয়েছে। এক সপ্তাহ আগে আমাদের সামাজিক ব্যবসা সংস্থাগুলির সদর দফতর যে ভবনে সেখানে প্রায় ৩৫ জনের একটি দল প্রবেশ করে।

তারা নিরাপত্তারক্ষীদের পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে আমাদের আটটি কোম্পানি দখলের ঘোষণা দেয়। রাত ৯টা পর্যন্ত আমাদের কর্মীদের বের হতে দেয়নি তারা। রাতে ভবন থেকে বের হওয়ার সময় তারা অফিসগুলোতে নিজেদের তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরের দিন সকালে তারা আবার ফিরে আসে এবং কোম্পানির কর্মীদের প্রবেশ করার জন্য তালা খুলে দেয়। প্রতিদিনের সাথে সাথে তারা আরো আগ্রাসী হয়ে উঠছে।

ড. ইউনূসের কাছে জানতে চাওয়া হয় এই মানুষেরা কারা? এর উত্তরে তিনি বলেন, আমি যে ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম সেই ব্যাংকের পাঠানো লোক হিসাবে তারা নিজেদের পরিচয় দেয়। আমাকে ২০১১ সালে ওই ব্যাংক থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল।

যারা ভবন দখল নিয়েছে তারা সরকারের লোক কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমি এমনটা বলতে পারি না। আমি যা জানি তা হলো, আমরা পুলিশে ফোন করেছিলাম কিন্তু আমরা কোনো সাহায্য পাইনি।

বার্তা বাজার/আইএফ