শরীয়তপুরের জাজিরায় বিয়ের অনুষ্ঠানে দাওয়াত না পেয়ে বিয়ে বাড়ীতে ককটেল বিস্ফোরণ মাধ্যমে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানোর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক ইউপি সদস্য ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে। এঘটনায় আব্দুর রহমান (২২) নামে একজনকে আটক করেছে জাজিরা থানা পুলিশ।

শনিবার(১৩ এপ্রিল) রাত ১১টায় উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়নের চেরাগ আলী বেপারী কান্দি গ্রামের বুধাইরহাট বাজার সংলগ্ন সৈয়দ তাজুল ইসলামের বাড়ীতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর ছোটভাই বাদী হয়ে ২১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ১০/১৫ জনের বিরুদ্ধে জাজিরা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী সৈয়দ তাজুল ইসলাম তার চাচাত বোনের বিয়ে উপলক্ষে একটি ছোট অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সেখানে স্থানীয় ইউপি সদস্য নাসির বেপারী সহ তার লোকজনদের দাওয়াত দেননি। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে বিয়ে বাড়ীতে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান চলাকালিন সময়ে নাসির বেপারী ও তার লোকজন ককটেল বোমাসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এসময় বিয়ে বাড়ীর আসবাবপত্র ভাঙচুর ও বসতঘরে বোমা মারা হয়। এছাড়াও বিয়ের অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রস্তুতকৃত রান্না করা খাবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে নষ্ট করে দেওয়া হয় ও বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী পিন্টু সরদারের টয়োটা কোম্পানির এলিয়ন এ ফিফটিন মডেলের একটি প্রাইভেট কার পিটিয়ে ও কুপিয়ে ভেঙ্গে ফেলা হয়। এতে ৪ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবী করেছেন ভুক্তভোগীরা।

সৈয়দ তাজুল ইসলাম নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, আমি নিরিহ মানুষ। আমার চাচা অসচ্ছল ও অসুস্থ হওয়ায় চাচাত বোনের বিয়ে দায়িত্ব নিয়ে একটি ছোট অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। সেখানে কাছের স্বজনদের ছাড়া কাউকে দাওয়াত দেইনি। কিন্তু মেম্বার নাসির বেপারী ও তার লোকজন বলেছে তাদের ইচ্ছামত দাওয়াত না করলে ভালো হবে না। আর সেকারনেই আমার বাড়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বোমাবাজি করে ভাঙচুর ও লুটপাটের মত এমন তাণ্ডব চালানো হলো। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

মামলার বাদী সৈয়দ সাব্বির হোসাইন বলেন, ঘটনার সময় আমি বাড়ীতে ছিলাম। নাসির মেম্বারের মন মত দাওয়াত না দেওয়ার কারনেই তারা এই বর্বর হামলা চালিয়েছে। তারা রাতে হঠাৎ বাড়ীতে ঢুকেই ককটেল বোমা ফাটানো শুরু করে। এসময় বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য আনা গরুর মাংসের ডেক নিয়ে যাওয়া সহ যাবতীয় খাবার সরঞ্জাম নষ্ট করে। হামলার সময় আমার পায়ে বোমের ছিটে লাগে। পরে আমি বসতঘরে লুকিয়ে থাকি। কিছুক্ষণ পর বের হয়ে দেখি আমাদের বাড়ী ও ফার্নিচারের দোকানের সব ভাঙচুর ও লুটপাট করে শেষ করে ফেলেছে।

বিয়ে বাড়ীতে বেড়াতে আসা অনিক সরদার বলেন, আমরা গায়ে হলুদের সময় নিজেরা আনন্দ করছিলাম। এসময় হঠাৎ বেশ কয়েকজন লোক বাড়ীর সামনে এসে ককটেল বোমা ফুটায়। পরে বাড়ীতে ঢুকে বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য সাজানো সব আসবাবপত্র ভাঙচুর শুরু করে। কোনকিছু বুঝতে না পেরে তাদের কাছে এর কারন জানতে গেলে তারা আমাকে ইটপাটকেল দিয়ে মাথায় আঘাত করে। প্রায় আধাঘণ্টা তাণ্ডব চালানোর পর তারা চলে যায়।

অভিযুক্ত ইউপি সদস্য নাসির বেপারীর কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ঘটনার সময়ে আমি বাড়ীতে ছিলাম না। তবে জেনেছি তাজুল ইসলাম তার চাচাত বোনের বিয়েতে এলাকার কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তিকে দাওয়াত দেয়নি। এ নিয়ে তাদের বোঝানোর চেষ্টাও করেছি। কিন্তু তাজুল ইসলাম উল্টো তাদের উদ্দেশে অকথ্য ভাষায় কথা বলেছেন।

বিষয়টি নিয়ে বিলাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ কুদ্দুস বেপারী মুঠোফোনে বলেন, মূলত আমি আমার এলাকার একটি হত্যাকাণ্ডের মামলার আসামী হওয়ায় এলাকার বাইরে আছি। তবে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এধরণের ঘটনা কখনই কাম্য নয়।

জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, বিয়ের অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দেয়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয় এক ইউপি সদস্য ও তার লোকজন বিয়ে বাড়ীতে ককটেল বিস্ফোরণের মাধ্যমে হামলা করে একটি প্রাইভেট কার ও বাড়ীর সামনে থাকা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও বাড়ীতে ভাঙচুর করে বিপুল অংকের ক্ষয়ক্ষতি করে এবং ঐ বাড়ীতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়। এঘটনায় ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করার সাথে সাথে আমরা মামলা রুজু করি এবং একজন আসামীকে আটক করতে সক্ষম হই। বাকী আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলমান আছে।