২৫০ ফুট চওড়া একটি খাল । নেই কোন সেতু। খালটির এক পাড়ে মাঝেরচর গ্রাম অপর পাড়ে দিয়ারচর ও উত্তর চর মোন্তাজ গ্রাম । তিন গ্রামের সেতুবন্ধন ছাড়াও মাঝেরচরে রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যেখানে মাঝেরচরের পাশাপাশি দিয়ার চর ও উত্তর চর মোন্তাজ এলাকার শিশু শিক্ষার্থীরাও পড়াশোনা করছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও স্কুলে আসতেই বিপত্তি। সচরাচর দেশের সব অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা করলে ভালো স্কুলড্রেস পরিধান করে এবং বই ,খাতা ও কলম নিয়ে বের হলেও এখানকার চিত্র একেবারেই ভিন্ন। এখানে শিক্ষার্থীদের বের হতে হয় এক সেট অতিরিক্ত জামাকাপড় এবং একটি বড় পাতিল। কেননা সাঁতরে পাড়ি দিতে হবে খাল। পাতিলের মধ্যে অতিরিক্ত জামাকাপড় এবং বই, খাতা ও কলম নিয়ে সাঁতরে পাড়ি দিয়ে ওপারে উঠে জামাকাপড় পরিবর্তন করে ভিজা কাপড় রোদে দিয়ে স্কুল শেষ করে আবার সেই একই প্রক্রিয়ায় বাড়ি ফেরার পালা ।

এমন চিত্রের দেখা মেলে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চর মোন্তাজ ইউনিয়নের বাইলা বুনিয়া খালে। এমন চিত্র গনমাধ্যমে আসলে দৃষ্টিগোচর হয় সংশ্লিষ্টদের। এমন অবস্থায় অস্থায়ীভাবে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থী, স্থানীয় বাসিন্দা এবং নারীদের ভোগান্তি কমাতে একটি ফাইবার বোট উপহার দিয়েছিলেন বেসরকারি সংস্থা জাগোনারী ও একটি কাঠের নৌকা উপহার দিয়েছিল বসুন্ধরা গ্রুপ। এই উপহারে কিছুটা স্বস্তি আসলেও মেলেনি তার স্থায়ী সমাধান। উপজেলার প্রসাশনের পক্ষ থেকে আয়রন ব্রীজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও আট মাসে সরেজমিনে নেই তার কোন কার্যক্রম।

এদিকে অতিরিক্ত নোনা পানির কারণে উপহারের কাঠের নৌকাটি নষ্ট হয়ে যাবার পথে। সেটা এখন চলাচলের অনুপযোগী। ফাইবার বোটটি কোন দূর্ঘটনা বা চুরি হলে আবারও পাতিলে ভাসার শঙ্কায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ও তাদের পরিবার।

শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বাসিন্দানের দাবি অচিরেই যেন এখানে একটা ব্রীজ নির্মাণ করেন প্রসাশন।

স্কুল সুত্রে জানা গেছে, দিয়ার চর ও উত্তর চর মোন্তাজ থেকে প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী মাঝেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। ব্রীজ নির্মাণ করলে যা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে।

জানতে চাইলে মাঝেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী কেয়ামনি বলেন, একটা নৌকা নষ্ট হয়ে গেছে। আরেকটি বৃষ্টির পানিতে ডুবে যায়। তখন উঠাতে পারি না। তখন সাঁতার কেটে আসতে হয় । না হলে আসি না। এখানে ব্রীজ হলে ভালো হবে।

চতুর্থ শ্রেণী ও দিয়ার চরের ছাত্র ইউসুফ বলেন, স্যার নৌকা থাকলে পার হতে পারি নাইলে ঐ স্লুইজ ঘুরে আসি। আসতে আসতে এক এক দুই ঘণ্টা লাইগ্গা যায়। আমাগোরে একটা ব্রীজ করে দিলে ভালো হয়।

দিয়ার চরের অভিভাবক জাকির হোসেন বলেন, পোলাপাইন স্কুলে গেলে আমরা চিন্তায় থাহি। এই বুঝি কিছু হয়ে গেলো। আগে সাঁতার দিয়ে যাইতো। এখন নৌকা আছে। তবে একটা ব্রীজ খুব দরকার। ওপারে আমাদের অনেক কাজ থাকে। এখন নৌকায় সবাই পার হই। তবে নৌকাটা না থাকলে আবারো তো সাঁতরে পার হওয়া ছাড়া উপায় নাই।

এবিষয়ে জানতে চাইলে মাঝেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ রুহুল আমিন জানান, এখানে একটি ব্রীজ খুব প্রয়োজন। আগে সাঁকো ছিল তখন প্রায় দেড়শতাধিক শিক্ষার্থী এখানে পড়াশোনা করতো। অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে তা নষ্ট হয়ে যাবার পর এখানে বেশি ভর্তি হচ্ছে না। কারণ পাতিলে সাঁতার কেটে আসতে হয় । সাংবাদিকরা নিউজ করার পরে দুটো বোট পেয়েছিলাম আমরা। এতদিন তাতে করেই চলাচল করতো ওরা। তবে লবনাক্ত পানিতে একটি নষ্ট হয়ে যাবার পথে আরেকটি যেকোনো সময় চুরি হলে বা কোন দূর্ঘটনা ঘটলে আবারো পাতিলে সাঁতার কাটা ছাড়া উপায় নেই। একটা ব্রীজ খুব দরকার এখানে।

জাগোনারী সংস্থার পরিচালক ( যোগাযোগ) ডিউক ইবনে আমিন বলেন, যেহুতু এটা একটা দূর্গম এলাকা। নদীবেষ্টিত এই এলাকায় কোমলমতি শিশু ও নারীদের পারাপার এবং মালামাল পরিবহনে এখানে একটা ব্রীজ নির্মাণ খুব প্রয়োজন। শুধুমাত্র পারাপার এর জন্যই না যেহুতু দিয়ারচরে কোন ঘুর্নিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নেই সেহেতু ব্রীজ হলে দুর্যোগে আশ্রয়সহ সবকিছুতেই এখানকার বাসিন্দাদের এক্সেস বাড়বে আর এটাই আমাদের সরকারি বেসরকারি আমাদের সবার কাজ।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) বায়জিদ আহমেদ বলেন, আমরা উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি উত্থাপন করেছি এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি‌। আশাকরি সবার সমন্বয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে।

এবিষয়ে উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, চর মোন্তাজ ইউনিয়নের দিয়ার চর এবং উত্তর চর মোন্তাজ এলাকার শিক্ষার্থীরা বাইলা বুনিয়া খালের উপর দিয়ে আশা যাওয়া করে। তাদের যাতায়াত করা খুবই কঠিন। সেক্ষেত্রে ওখানে একটি ব্রীজের প্রস্তাব ইতিমধ্যে পাঠানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সালেক মূহিদ বলেন , বাইলা বুনিয়া খালে শিক্ষার্থীরা যে পাতিলে সাঁতার কেটে পার হতো । এটা একটা লম্বা খাল। সেখানে আমরা একটা এনজিওর মাধ্যমে খেয়ার ব্যবস্থা করেছি। আপনারা দেখেছেন যে, খালটি অত্যন্ত দীর্ঘ। খুব সহসাই ত্রানের ব্রীজ গুলোতে কভার হচ্ছে না। তাই আমরা এলজিইডির মাধ্যমে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। প্রস্তাবটি পাস হয়ে আসলেই আমরা ওখানে একটি ব্রীজ নির্মাণ করবো।

বার্তা বাজার/জে আই