আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার দুই দিন পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপির দু’গ্রুপের মধ্যে চরম বিরোধ দেখা দিয়েছে। এর জের ধরে গতকাল শনিবার বিকেলে পৃথক কর্মসূচী পালনকালে উভয়পক্ষের মধ্যে ব্যাপক ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় কমপক্ষে ১০জন আহত হয়।

জানা যায়, গত ১০ আগস্ট বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এরপর থেকেই জেলা বিএনপির একটি বিরাট অংশের নেতাকর্মীরা ঘোষিত কমিটিকে ফরমায়েশী কমিটি আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবি জানিয়ে শুক্রবার বিকেলে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। এরই জের ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছিল। গতকাল শনিবার বিকেলে নব গঠিত আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব ও জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম পৌর এলাকার শেখ হাসিনা সড়ক সেতু এলাকায় একটি আনন্দ র‌্যালী বের করে।

অন্যদিকে একই সময়ে জেলা বিএনপির নব গঠিত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি এবং নব গঠিত আহবায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকনের নেতৃত্বে পাওয়ার হাউজ রোডে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর ৫৪ তম জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও কেক কাটার আয়োজন করে। আনন্দ র‌্যালী বের হয়ে কিছু দূর যাওয়ার পর উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া। মুহুর্তের মধ্যে ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিকবেদিক পালাতে থাকে। প্রায় আধ ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মাহমুদসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়। এসময় পুরো এলাকাজুড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একজনকে আটক করে।

জেলা বিএনপির নব গঠিত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলাম জানান, আনন্দ র‌্যালী শেষ করে আমি ঘটনাস্থল ত্যাগ করি। পরে সংঘর্ষ হয়েছে তা শুনতে পেয়েছি।

জেলা বিএনপির নব গঠিত আহবায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি বলেন, এমন ব্যক্তিকে আহ্বায়ক করা রাজনৈতিক ভাবে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা বিব্রতকর। এই কমিটি বাতিল করে নতুন করে ত্যাগী নেতাকর্মীদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হউক। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়েছে বলে জানতে পেরেছি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসলাম হোসাইন জানান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। বিকেলে এক পক্ষ আনন্দ র‌্যালী বের করে এবং অন্যপক্ষ কোকোর জন্মদিন পালনের কথা বললেও মূলত আনন্দ মিছিলকে প্রতিহত করার জন্য মাঠে নামে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং একজনকে আটক করে।

উল্লেখ্য, জেলা বিএনপি’র অধিকাংশ সিনিয়র নেতাদের অভিযোগ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বরিশল গ্রামের আবদুর রহমান সানী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী। আবদুর রহমানের বড় ভাই কবির আহমেদ ভূইয়া তার ছোট ভাইয়ের প্রভাবকে ব্যবহার করে এই কমিটি দিয়েছেন। কবির আহমেদ ভূইয়ার আখাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন। জেলা ও উপজেলাসহ বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ সকল কমিটিতে কবিরের পছন্দের অনুসারীরা গুরুত্বপূর্ণ পদ পাচ্ছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় ত্যাগী পদবঞ্চিতদের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কবিরের অনুসারীরা পদ বাগিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে পুরো জেলা বিএনপি’র মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।

বার্তাবাজার/এম আই