কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ পল্লী ট্র্যাজেডির ১১ বছর অতিবাহিত হলেও সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিত না করায় এখন শুরু হয়নি বিচারকার্য। এ ঘটনায় ১৯ টি মামলায় ১৫ হাজার আসামিদের বেশির ভাগই জামিনে রয়েছে। সব মামলারই চার্জশিট হলেও সাক্ষীর চরম সংকটে ঝুলে আছে বিচার কার্যক্রম।

আসামি ১৫ হাজার ১৮২ জন :-
২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে গুজবের সূত্র ধরে রামুর ১২টি বৌদ্ধ বিহার ও বৌদ্ধ পল্লীতে একযোগে অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনা ঘটিয়েছিল দুর্বৃত্তের দল। পরের দিন একই ঘটনার জের ধরে উখিয়া এবং টেকনাফেও আরো ৭টি বৌদ্ধ বিহার পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ ঘটনায় রামু, উখিয়া ও টেকনাফে ১৯টি মামলা হয়। এর মধ্যে রামু থানায় আটটি, উখিয়ায় সাতটি, টেকনাফে দুটি ও কক্সবাজার সদর থানায় দুটি মামলা রেকর্ড হয়। এসব মামলায় অভিযুক্ত করা হয় ১৫ হাজার ১৮২ জনকে। মামলায় আসামির কম-বেশি সবাই জামিনে রয়েছেন। ৫২৬ জন গ্রেফতার হওয়ার পর জামিন নেন আর বাকিরা আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন বলে জানা গেছে আদালত সূত্রে। তবে এখনও শতাধিক অভিযুক্ত পলাতক রয়েছে।

সাক্ষী আছে কিন্তু উপস্থিতি নেই :-
বৌদ্ধপল্লী ট্র্যাজেডি নিয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত বিচার বিভাগীয় কমিটি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দিলেও গত ১১ বছরে মামলার চূড়ান্ত শুনানির অগ্রগতি হয়নি। ঘটনার হোতাদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল গঠন করা হলেও সাক্ষীর কারণে মামলার তেমন কোনো অগ্রগতি নেই বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। ফলে এসব মামলার আইনি কার্যক্রম নিয়ে সংশয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা। তবে বিচারকার্য নিয়ে অসন্তোষ থাকলেও সম্প্রীতিতে আস্থার সংকট অনেকটা কেটেছে।

করোনাকালীন সময়ে সাক্ষীদের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ সম্ভব না হওয়ায় বিচার কার্যক্রম পিছিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম।

কক্সবাজার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার জানান, বৌদ্ধ বিহার এবং উখিয়ার একটি মামলা আদালত থেকে অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআই’র কাছে পাঠানো হয়েছিল। তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের শেষের দিকে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়। সাক্ষী পাওয়া না গেলেও বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে অনেককে শনাক্ত করে অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

সংস্কার করা হয়েছে সকল বিহার :-
পুড়ে যাওয়া ঐতিহ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৎকালীন সময়ে দ্রুত সংস্কারের নির্দেশ দেন। কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল বলেছেন, অনাকাঙ্খিত এ ঘটনার পর পরই সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগকে দিয়ে পুড়ে যাওয়া বৌদ্ধমন্দিরগুলো অত্যাধুনিক সুরম্য অট্টালিকা হিসেবে গড়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা বর্তমানে পর্যটনের একটি অংশ হয়ে দাড়িয়েছে। নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত বসতবাড়িও।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার জানান, মোট ১৯ টি মামলায় এ পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক আসামীকে পুলিশ গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনেছে। যেসব আসামি পলাতক রয়েছে তাদেরও আইনের আওতায় আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

বার্তা বাজার/জে আই