চট্টগ্রাম নগরের আকবর শাহ থানা এলাকায় পাহাড় কেটে এবং ছড়া ও লেক ভরাট করে প্লট বানিয়ে বিক্রি, পাহাড়ের মাটি বিক্রিসহ পরিবেশ ধ্বংসে নানা কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পথ সভা আয়োজন করে মাদক সন্ত্রাস প্রতিরোধ ও পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলন নামে একটি সংগঠন।
মূলত ওই এলাকায় একের এক পাহাড় কেটে মামলার আসামি হওয়া স্থানীয় কাউন্সিলর মো. জহুরুল আলম জসিম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এ কর্মসূচি পালন করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন আয়োজকরা। কাউন্সিলর জসিম চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ. জ. ম. নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
মঙ্গলবার (০২ মে) বিকেলে পথ সভা চলাকালীন সময়ে কর্মসূচি স্থগিত করতে আ. জ. ম. নাছির উদ্দীন ফোন দেন বলে দাবি করেন আয়োজকদের কয়েকজন।
এ বিষয়ে আকবরশাহ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আলতাফ হোসেন বলেন, আমরা এলাকায় চিহ্নিত পাহাড়খেকোর বিরুদ্ধে সমাবেশ করেছি। তার কারণে দল এবং সরকারের বদনাম হচ্ছে। এজন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে কর্মসূচি পালন করেছি। কর্মসূচি চলাকালীন সময়ে নাছির ভাই ফোন করেছেন। তার আশ্বাসে আমরা কর্মসূচি স্থগিত করেছি। কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আমরা আবার আন্দোলনে যাব।
এর আগে পথ সভায় কাজী আলতাফ বলেন, সরকার দেশের পরিবেশ সুরক্ষায় রাত-দিন কাজ করছে। পরিবেশ সুরক্ষায় অবদান স্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছেন। তিনি বিশ্ববাসীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশবান্ধব রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ববাসীকে দেখাবেন। সেখানে একজন মাত্র ব্যক্তি দলের নাম-পদবি ব্যবহার করে একের পর এক পাহাড়, খাল, ছড়া ও লেক ভরাট করে প্লট বানিয়ে অবৈধভাবে বিক্রি করে মাত্র ১০ বছরেই হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু কন্যার শ্রম-উন্নয়ন এসব দুর্বৃত্তের কারণে ঢাকা পড়ছে।
তিনি বলেন, আজকের এই সভাটি এখানে আমরা সমাপ্ত করতে চাই, কারণ আ জ ম নাছির ভাই আমাদের আজকের কর্মসূচি স্থগিত করতে অনুরোধ করেছেন। তিনি আমাদের বলেছেন তিনি দুয়েকদিনের মধ্যে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন। আমরা আমাদের আজকের কর্মসূচি এখানে সমাপ্ত করলেও আমাদের আন্দোলন চলবে। যতক্ষণ পর্যন্ত ভূমি দস্যু ওই বিদ্রোহী জনপ্রতিনিধিকে দল ও পদবি থেকে সরিয়ে আইনের আওতায় আনা না হবে ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন চলবে।
পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সৈয়দ সরোয়ার মোর্শেদ কচি বলেন, বারবার প্রশাসনের নাকের ডগায় একই ব্যক্তি আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে পরিবেশ ধ্বংস করে ধরা পড়ছে। এতে আমাদের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আমরা আমাদের এলাকার আর একটি পাহাড়ও কাটতে দেব না। এখন থেকে যেখানেই কেউ পাহাড় কাটে এবং লেক ভরাট করবে সেখানেই প্রতিরোধ করা হবে।
তিনি বলেন, নাছির ভাইয়ের অনুরোধে আমরা কর্মসূচি সমাপ্তি করছি। তার মানে কর্মসূচি আজকের মতো শেষ হয়েছে। কোনো ব্যবস্থা না হলে আগামীকাল আবার শুরু হবে।
পথ সভা স্থগিত করতে ফোনের বিষয়ে জানতে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ. জ. ম. নাছির উদ্দীনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
যদিও চসিকের উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. জহুরুল আলম জসিমের বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার অভিযোগ বেশ পুরনো। গত ২৫ জানুয়ারি উত্তর পাহাড়তলী সুপারি বাগান এলাকায় পাহাড় কাটার বিষয়ে পরিদর্শন করতে গেলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও তার সঙ্গে থাকা লোকজনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। কাউন্সিলর মো. জহুরুল আলম জসিম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এ হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় আকবর শাহ থানায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করেন বেলার সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
এছাড়া পাহাড় কেটে রাস্তা করার কারণে ৭ এপ্রিল ধসে মাটিচাপা পড়ে খোকা (৪৫) নামে এক শ্রমিক নিহত হন। এ ঘটনায় ১১ এপ্রিল কাউন্সিলর জসিমসহ মোট ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে পরিবেশ অধিদপ্তর।