টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার বনের ভেতর, আবাসিক এলাকা, স্কুল-মসজিদের পাশে তিন ফসলি জমিতে গড়ে উঠা ইট ভাটা নিয়ে চলছে শুভঙ্করের ফাঁকি। প্রভাবশালী মালিক পক্ষ লাইসেন্স না করেই উচ্চ আদালতে রিট করে বছরের পর বছর এসব অবৈধ ইটভাটা পরিচালনা করে আসছে। ফলে তারা আইন না মানায় একদিকে বনের গাছ ও কৃষকের আবাদী ফসল নষ্ট হচ্ছে।

অন্যদিকে ইট ভাটার নানা মুখি গাড়ির চাপে গ্রামীণ রাস্তা ঘাট ভেঙে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পরছে। সেই সঙ্গে ইট ভাটার মলিকরা জমির উর্বর মাটি কেটে ফসল চাষ ও পরিবেশ দূষণে ব্যাপকহারে ক্ষতি করলেও স্থানীয় প্রসাশন লাভবান হয়ে অবৈধ ইট ভাটার বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা না নিয়ে খোড়া অজুহাত দেখিয়ে সুকৌশলে মালিক পক্ষকে সহযোগিতা করে চলছে।

সর‌জমিনে গিয়ে জানা যায়, ঘাটাইল উপজেলায় ৫৬টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ৫০টি পরিবেশ ছাড়পত্রহীন। যে সব ইটভাটার নিয়মবহির্ভূত লাইসেন্স দেয়া হয়েছে তাও মেয়াদোত্তীর্ণ। তিন ফসলি জমিতে ইট ভাটা স্থাপন করার বিধান না থাকলেও স্থানীয় চেয়ারম্যান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বেআইনী ভাবে আপত্তি নাই মর্মে প্রত্যায়ন পত্র দিয়ে এসব অবৈধ ইটভাটা স্থাপন করার সুযোগ করে দিচ্ছে।

এসব ইট ভাটার মধ্যে ধলাপাড়া ইউনিয়নে বনের ভেতর গড়ে উঠেছে ৮টি। রসুলপুর ইউনিয়নে বনের ভেতর ৮টি। দেওপাড়া ইউনিয়নে বনের ভেতর ২টি। দেউলাবাড়ি ইউনিয়নে ৬টি। জামুরিয়া ইউনিয়নের আবাসিক এলাকায় ও স্কুল মসজিদের পাশেসহ গড়ে উঠেছে ১৪টি। আনেহলা ইউনিয়নে ৪টি দিগর ইউনিয়নে৭টি। সংগ্রামপুর ইউনিয়নে বনের ভেতর ১টি। দিঘলকান্দি ইউনিয়নে ২টি। ঘাটাইল সদর ইউনিয়নে ১টি। লোকের পারা ইউনিয়নে ১টি। ঘাটাইল পৌর এলাকায় ২টিসহ মোট ৫৬টি ইট ভাটা গড়ে উঠেছে। তার ২০টি-ই বন এলাকায় গড়ে উঠেছে। অবশিষ্ট ৪৬টির ৩৯টি ইট ভাটা সংরক্ষিত বনের ৩ কিলোমিটারের মধ্যে ও জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এবং টাঙ্গাইল -ময়মনসিং মহাসড়ক সংলগ্ন রাস্তায় কোল ঘেঁষে ৩টি ইট ভাটা স্থাপন করা হয়েছে।

এভাবে ৫৬টি ইট ভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া যেমন পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, অন্য দিকে ফসলী জমির উর্বর গভীর করে কেটে নেওয়ার জমির উর্বরতাও নষ্ট হচ্ছে। আইনের প্রয়োগ না থাকায় এ ভাবে যত্র তত্র ইট ভাটা স্হাপন করায় হাইড্রলিক্স ও ট্রাক গাড়ির চাপে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ছোট ছোট রাস্তা অল্পতেই ভেঙ্গে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পরছে। সর্বোপরি লাভ বান হচ্ছে ভাটার মালিক, সুবিধা নিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন, অপরদিকে ভোগান্তি ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সাধারণ জনগণ, সেই সঙ্গে সরকারের লোকশান হচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।

এসব বেআইনী ইট ভাটা কিভাবে চলে জানতে চাইলে উপজেলা ইট ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি শাহজাহান আলী বলেন, লাইসেন্স না থাকলেও হাই কোর্টে রিট করে ইট ভাটা পরিচানা করা হচ্ছে। বনের কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ইট ভাটা মালিক সমিতির পক্ষে থেকে সকল মালিকেই কাঠ দিয়ে ইট না পোড়ানোর জন্য বলা হলেও তার নিষেধ মানছে না।

কৃষি জমির টপ সয়েল ইট ভাটায় কেটে নেওয়ার বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার দিলশাদ জাহান জানান, বিষয়টি ইউএনও মহোদয়কে জানানো হয়েছে অচিরেই আমরা অভিযান পরিচালনা করব।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইরতিজা হাসান জানান, ইতিমধ্যে আমরা কয়েকটি ইট ভাটায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে জরিমনা করেছি ভবিষ্যৎতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

বার্তাবাজার/এম আই