ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে কক্সবাজারের উখিয়ায় ভোট গ্রহণ করা হবে ২৯ মে। এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিলো ২ মে এবং মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে ৫ মে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, অনলাইনে ১৩ প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। যাদের মধ্যে, চেয়ারম্যান পদে ৪ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ জন ও ভাইস চেয়ারম্যান (সংরক্ষিত) ৩ জন।

চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়ন জমা দেওয়া সব প্রার্থীই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।

উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে ১৩ বছর রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের পর ২৮ই এপ্রিল পদত্যাগ করা উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীও মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

এই পদে মনোনয়ন জমা দেওয়া অন্যরা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবুল মনসুর চৌধুরী, উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলম চৌধুরী ও হলদিয়াপালং ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম।

ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন -হলদিয়াপালং ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি কামাল উদ্দিন মিন্টু, বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এম জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাসেল চৌধুরী, উখিয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সহ সভাপতি গফুর চৌধুরী,
পালংখালীর সাবেক ইউপি সদস্য গফুর উল্লাহ ও উখিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ।

ভাইস চেয়ারম্যান (সংরক্ষিত) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুন নেছা বেবী, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শাহীন আকতার ও হলদিয়াপালং ইউনিয়নের বাসিন্দা সানজিদা আক্তার নুরী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

অপরদিকে উখিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পরও অবশেষে সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত কে সম্মান জানিয়ে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সোলতান মাহমুদ চৌধুরী।

২ মে (বৃহস্পতিবার) বেলা দুই টায় তামিম ট্রেনিং সেন্টার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। এ সময় উপজেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল সহ বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ইসি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে ৬ থেকে ৮ মে পর্যন্ত। আপিল নিষ্পত্তির জন্য সময় রাখা হয়েছে তিনদিন। ৯ থেকে ১১ মে আপিল নিষ্পত্তি হবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১২ মে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৩ মে।

উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৪৯ হাজার ৩১২ জন। এর মধ্যে ৭৭ হাজার ৪৭ জন পুরুষ এবং মহিলা ভোটার ৭২ হাজার ২৬৫ জন।

এবারই প্রথম এই নির্বাচনে উখিয়ার ভোটাররা ইভিএমে ভোট দেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।

নতুন নির্বাচনি বিধিমালা অনুযায়ী, মনোনয়ন পত্রের সঙ্গে আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণক জমা দিতে হয়েছে, উল্লেখ করতে হয়েছে টিআইএন নম্বরও।

আগের বিধিমালায় নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের একভাগের কম পেলে জামানত বাজেয়াপ্ত হতো। এক্ষেত্রে প্রদত্ত ভোটের সাড়ে ১২ শতাংশের কম পেলে জামানত বাজেয়াপ্ত হতো। সংশোধিত বিধিমালা এটি সংশোধন করে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের ১৫ শতাংশের কম পেলে ওই প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।

সংশোধিত বিধিমালায় নির্বাচনি ব্যয়েও পরিবর্তন এসেছে। আগের আইনে ১ লাখ ভোটারের জন্য প্রার্থী ব্যক্তিগত ও নির্বাচনি ব্যয় করতে পারতেন সাড়ে ৫ লাখ টাকা, ১ লাখ এক থেকে ২ লাখ ভোটারের জন্য ৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ও ২ লাখের বেশি ভোটার সম্বলিত উপজেলার জন্য ১১ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারেন।

নতুন উপজেলা নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় চেয়ারম্যান বা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নির্বাচনি ব্যয় বাবদ অনধিক ২৫ লাখ টাকা এবং ‘মহিলা সদস্য’ পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নির্বাচনি ব্যয় বাবদ অনধিক ১ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।

আগে ভোটগ্রহণের তিন সপ্তাহ আগে থেকে প্রার্থীরা প্রচারণায় অংশ নিতে পারতেন। এবার তা সংশোধন করে প্রতীক বরাদ্দের দিন থেকে প্রচারণা শুরুর কথা বলা হয়েছে। প্রচার-প্রচারণার আওতায় এবার ডিজিটাল এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও সন্নিবেশ করা হয়েছে।

অপরদিকে, এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিধানও শিথিল করেছে ইসি। এতদিন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হলে ২৫০ ভোটারের সমর্থন সূচক স্বাক্ষর মনোনয়ন পত্রের সঙ্গে জমা দিতে হতো। এটি এখন একেবারেই তুলে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে কোনও ভোটারদের সমর্থন সূচক স্বাক্ষর লাগবে না।

নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, প্রার্থীরা সাদাকালোর পাশাপাশি রঙিন পোস্টার ও ব্যানার করতে পারবেন। এছাড়া নির্বাচনের ফলাফল স্থগিত ও পুনরায় ভোটের নির্দেশ দেওয়ার বিষয়ে ইসির ক্ষমতা স্পষ্ট করা হয়েছে।