মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন ও গাছপালা কেটে অপরিকল্পিত উন্নয়ন বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) দুপুরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্ত্বর থেকে শুরু হয়ে সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, জুবায়ের স্মরণী, বঙ্গবন্ধু হল ও বটতলা ঘুরে এসে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়।
পরে সেখানে বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯ ব্যাচের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নূরে তামিমের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী অনন্যা ফারিয়া। তিনি বলেন, এই ক্যাম্পাসের মূল পরিচয় বনভূমি ও জীববৈচিত্র। মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া একের পর এক ভবন নির্মাণ করে ক্যাম্পাসের বনভূমি ও জীববৈচিত্র সংকুচিত করা হচ্ছে। সর্বশেষ সুন্দরবন নামক জায়গায় হাত দেয়া হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ক্যাম্পাসের জীববৈচিত্র ধ্বংস হয়ে যাবে। এই উন্নয়ন পরিকল্পিতভাবে হোক।
চলচ্চিত্র আন্দোলনের সহ সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত দে বলেন, আজকে যেই ভবনের নিচে দাঁড়িয়ে আমরা কথা বলছি সেটিও কোনো ধরনের মাস্টারপ্ল্যান ব্যতীত করা হয়েছে। যার ফলাফল বর্তমান প্রশাসন বলছে এই ভবনটি তাঁদের জন্য পর্যাপ্ত নয়। এর সম্প্রসারণের জন্য নতুন ভবন প্রয়োজন। এই ক্যাম্পাসকে মরুকরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। আইবিএ-কে ভবন নির্মাণের জন্য সুন্দরবন জায়গাটি দেওয়া হয়েছে। আর আইবিএ বারবার বলছে এই ভবন তাঁরা নিজেদের টাকায় করছে। একটু ভাবলেই বুঝতে পারবেন এর মাধ্যমে তাঁরা ইভিনিং প্রোগ্রামের আয়কে জায়েজ করতে চাইছে।
ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশফার রহমান নবীন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টারপ্ল্যান না থাকার কারণে আজ নতুন কলা ভবনের সামনের রাস্তা বন্ধ। সেখানে গাড়ি চললে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পারেনা। আর রাস্তা বন্ধ থাকলে অনেকদূর ঘুরে অন্যান্য জায়গায় যেতে হয়। দ্বিতীয় প্রশাসনিক ভবনের নকশা গোপন করে নতুন প্রশাসনিক ভবনের জন্য বরাদ্দ এনেছে। এর কারণ বর্তমান ভবন পূর্ণাঙ্গ করতে লাগবে মাত্র ৪০ কোটি টাকা। আর নতুন ভবনের জন্য ১৩৭ কোটি বরাদ্দ যা খরচ করতে পারলে তাদের পকেট ভরবে। আইবিএ ভবনের জন্য আগেও গাছ কাটা হয়েছে। এখন আবার আরেকটি জায়গা বেছে নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে যখন যে এসেছে সেই পরিকল্পিত উন্নয়নের নামে কথার ও শব্দের মাধ্যমে বারবার আমাদের ধোঁকা দিয়েছে।
সমাপনী বক্তব্যে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি তাপসী প্রাপ্তি বলেন, দুঃখের সাথে বলতে হয় যে শিক্ষকদের কাছ থেকে আমাদের মাস্টারপ্ল্যান সম্পর্কে শিখার কথা আজ তাদেরকেই মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা বুঝাতে আমাদের এখানে দাঁড়াতে হচ্ছে। আইবিএ ভবন নির্মাণের জন্য পূর্বেও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে গাছ কাটা হয়েছে। এবার সুন্দরবন নামক জায়গাটি বেছে নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেকোন উন্নয়নের জন্য বারবার গাছপালা সমৃদ্ধ জায়গা বেঁছে নিচ্ছে। মাস্টাপ্ল্যান প্রণয়ন না করে গাছ-পালা কেটে এই ভবন নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। না হলে ফারজানা ইসলামের মতো বর্তমান উপাচার্যের বিরুদ্ধেও তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সুন্দরবন’ এলাকায় নতুন করে ইন্সটিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ভবন করার উদ্যোগ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ভবন নির্মাণ করতে পাঁচ শতাধিক বৃক্ষ কর্তন করতে হবে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। বৃক্ষ কর্তন না করে বিকল্প স্থানে ভবন নির্মাণের দাবি তুলছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বার্তাবাজার/এম আই