কুষ্টিয়া শহরের উপকণ্ঠে রহিমপুরের স্মরণ মাৎসবীজ খামারে শেষ হলো ১৭ তম ক্র্যাক আন্তর্জাতিক আর্ট ক্যাম্প। এবারের আসরে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশ, ভারত, জাপান, মালয়েশিয়া, নেপাল ও ব্রাজিলের প্রায় ৪০ জন শিল্পী। স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার করে শিল্পীরা তৈরি করেছিলেন ইনস্টলেশন আর্ট। সঙ্গে ছিল বিভিন্ন থিমের একক ও যৌথ পরিবেশনা। এবারের থিম ছিল ‘সিম্ফনি।’

২০০৭ সাল থেকে শুরু হয় এ আর্ট ক্যাম্পের যাত্র। ২০০৯ সাল থেকে এটি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে হয়ে ওঠে আন্তর্জাতিক। এ পর্যন্ত আমেরিকা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, ভারতসহ প্রায় ২০টি দেশের আনুমানিক ২০০ শিল্পী অংশ নিয়েছেন এ আন্তর্জাতিক আর্ট ক্যাম্পটিতে। প্রতি বছর একজন কিউরেটরের নেতৃত্বে পরিচালিত হয় ক্র্যাক আন্তর্জাতিক আর্ট ক্যাম্প। এবারের কিউরেটর ছিলেন জাপানের শিল্পী রেইকো সিমিজিউ। রেইকো জানান, আন্তর্জাতিক ক্যাম্প বলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শিল্পী ও চিন্তকেরা আসেন এ ক্যাম্পে। তাদের চিন্তা প্রক্রিয়া এবং শিল্পসৃজনকে আমরা এক সুরে বাঁধতে চেয়েছিলাম। আমরা দেখেছি, প্রকৃতির যে ছন্দের মতো শিল্পীরাও তাঁদের চিন্তা ও কাজ দিয়ে মানুষ ও সমাজকে এগিয়ে নেয়ে যাচ্ছেন। এখানেও শিল্পীরা সে কাজটিই করেছেন। প্রকৃতির ছন্দকে প্রকাশ করেছেন তাঁদের কাজের মাধ্যমে।

এবার ক্যাম্পে এসেছিলেন ভারতের শিল্পী শুভজিৎ সামন্ত। একটি ইনস্টলেশন ও একটি পারফরমেন্স করেছিলেন তিনি। জানালেন, এরকম উদ্যোগ খুব দরকার। এতে বিভিন্ন দেশের মানুষে মেলামেশার সুযোগ হয়। বিশ্বের শিল্পকলা ও রাজনীতির খোঁজ পাওয়া যায়, যা শিল্পী হিসেবে, মানুষ হিসেবে একজনকে এগিয়ে নিয়ে যায় সামনের দিকে।

ক্যাম্পে এসেছিলেন মালয়েশিয়ান তরুণ শিল্পী আমার ইদ্রিস। কুয়ালালামপুরের যে বাসায় তিনি থাকেন তার পরশেই আছে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া শ্রমিকেরা। তিনি তাদের দেখছেন দীর্ঘদিন থেকে। তাদের সঙ্গে কথাও বলেছেন। সে থেকে বাংলাদেশে আসার ইচ্ছা তৈরি হয় আমারের। এবারের আর্টক্যাম্পে এসেছিলেন তিনি।

ক্র্যাক ট্রাস্টের অন্যতম সদস্য কনক আদিত্য। পুরো ক্যাম্প তিনি ছিলেন এখানে। জানালেন, যে সময় যাচ্ছে সেটা বিষণ্নতায় ভরা। একদিকে যুদ্ধ, আমাদের ভেতর দেশভাগের ক্ষত সেগুলোর অভিঘাত সমাজের সদস্য হিসেবে শিল্পীরা সহ্য করতে পারছেন বলে মনেনহয় না। সে জন্য তাঁরা শান্তি ও স্মৃতির মধ্যে আশ্রয় নিচ্ছেন। এবারের কাজগুলো দেখে তাই মনে হলো।

২০০৭ সালে শিল্পী ও গবেষক শাওন আকন্দ কুষ্টিয়ার শিল্পী দেলোয়ার হেসেনের সহায়তায় এ আর্ট ক্যাম্পটি শুরু করেছিলেন। প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের ২৫ তারিখ থেকে ৩০ তারিখ কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় এই শিল্পের এই আন্তর্জাতিক আসর।

বার্তা বাজার/জে আই