সড়কপথ নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটার কারণে সাধারণ যাত্রীরা নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণের জন্য ট্রেন ভ্রমণকেই বেছে নেয়। ফলে ট্রেন ভ্রমণে যাত্রীদের চাপ আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু সেই নিরাপদ ট্রেনযাত্রা হঠাৎ যেন প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভয়াবহতা ট্রেন দুর্ঘটনাটি সাধারণ মানুষকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। এদিকে ভয়াবহ ট্রেন দূর্ঘটনায় নিহতের পরিবারের চলছে শোকের মাতম।

এর আগে চলতি বছরের প্রথম দিকে সহকারী চালক ট্রেন চালাতে গিয়ে ইঞ্জিনের ধাক্কায় বগি লাইনচ্যুত ও তিনটি বগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব ঘটনা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর ভূমিকা নেয় বলে সাধারণ মানুষের অভিযোগ।সাধারণ যাত্রীরা বলছেন নামমাত্র তদন্ত কমিটি হলেও দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে রেল আধুনিকায়ন হওয়ায় শতভাগ নিশ্চিত হয়ে রেল পরিচালনা করা হয়। ভবিষতে এধরনের ট্রেন দুর্ঘটনা যেন না হয় তার প্রতি নজর রাখা হবে

ঢাকা-ভৈরব-চট্টগ্রাম-সিলেট-নোয়াখালী ও ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রেলপথে ভৈরব জংশন হয়ে ২৯ জোড়া আন্তঃনগর, মেইল ট্রেন ও মালবাহী জোড়া ট্রেন চলাচল করে। প্রায়ই ভৈরব বাজার ষ্টেশন সীমানায় ছোট বড় ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। সম্প্রীত ভৈরবে স্মরণকালের ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় ভাবিয়ে ও আতঙ্কিত করছে এই পথের চলাচলরত যাত্রীদের। যাত্রীরা দিন দিন হয়ে পড়েছে অসহায় ও আতংকিত। যাত্রীরা রেল কর্তৃপক্ষকে আরো সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান। বাংলাদেশের রেলওয়ে সিগন্যাল ব্যবস্থা কতটা আধুনিক হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। নামমাত্র তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দিতে তিন থেকে পাঁচ কর্মদিবস বেঁধে দেওয়া হয়। তারপর আরেকটি ঘটনা আগের ঘটনাকে ভুলিয়ে দেয়। নতুন ঘটনায় চাপা পড়ে যায় আগের ঘটনা। এভাবে ওই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন আর আলোর মুখ দেখে না। তাই দুর্ঘটনা-পরবর্তী ব্যবস্থাপনাটাও আমলে নেওয়া জরুরি।

এদিকে ভৈরবে ট্রেন দূর্ঘটনায় পরিবারের চলছে শোকের মাতম। এর মধ্যে সর্বশেষ সরকারি হিসেব মতে ১৯ জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরিবারে লাশ পেয়ে পরিবারের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

ইতিমধ্যেই নিহতদের শশানে লাশ দাহ ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। নিহতদের হারিয়ে পরিবার পরিজন বাকরুদ্ধ। গত ২৩ অক্টোবর সোমবার বিকেলে কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী এগারোসিন্ধুর গোধুলী ট্রেনকে চট্টগ্রামগামী মালবাহী ট্রেন ধাক্কা দিলে এগারোসিন্ধুর ট্রেনের দুটি বগি ধুমরে মুচকে যায়। এতে ১৯ জন নিহত হয়। আহত হয় শতাদিক। রেলপথ মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ে প্রশাসন থেকে পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি এবং জেলা প্রশাসন ফায়ার সার্ভিস দুটি সমন্নয়ে মোট ৫ টি কমিটি গঠন করা হয়।

এদিকে নিহতদের পরিবারকে রেলওয়ের পক্ষ ১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ও আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন রেলমন্ত্রী। অন্যদিকে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন নিহতের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা দেয়ার ঘোষণা দেন। রেলপথ আমাদের জনপ্রিয় চলাচলের নিরাপদ মাধ্যম। ট্রেন দুর্ঘটনা কমিয়ে এনে যাত্রীদের জানমালের নিরাপত্তা দেবে ও আতঙ্কিত না করে ঘন্টার পর ঘন্টা চলাচলের দূভোর্গ থেকে যোগাযোগের নিরাপদ পথ তৈরি হবে এটাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা।

নিহতের পরিবারের লোকজন জানান, ভৈরব রেলওয়ের সিগন্যাল ব্যবস্থাপনার গাফিলতির কারণেই এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় আফজালসহ অনেক যাত্রী নিহত ও আহত হন।

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক রেলপথ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (অডিট ও আইসিটি) হাসান মাহমুদ বলেন, দূর্ঘটনার পর রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে । আমরা দূর্ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে করছি। প্রত্যেকটা বিষয়ে আমরা পর্যালোচনা করছি। পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। দুর্ঘটনার কারণ সনাক্ত করা হবে।

এ বিষয়ে ভৈরব বাজার রেলওয়ে জংশন স্টেশন মাস্টার মোঃ ইউসুফ বলেন, ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রেলপথে ভৈরব জংশন হয়ে ২৯ জোড়া আন্তঃনগর, মেইল ট্রেন ও মালবাহী জোড়া ট্রেন চলাচল করে প্রতিদিন মোট ২ থেকে ৩ হাজার যাত্রী। যাত্রীদের নিরাপদ চলাচলের জন্য আমরা বদ্ধপরিকর।

বার্তাবাজার/এম আই