বান্দরবানের লামায় বিয়ে বাড়িতে দুই হাজার টাকা সামাজিক চাঁদার ইস্যুতে ত্রিমুখী তুমুল সংঘর্ষের ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় বর সহ ১৭ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে ৯ জনকে লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে ৫’জনকে ভর্তি রেখে বাকী ৪’জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষ বাড়ি পাঠানো হয়। অন্যান্যদের বাড়ি পার্শ্ববর্তী আলীকদম উপজেলায় হওয়ায় সেখানে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বর নাজমুল ইসলাম।

লামা উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড পূর্ব শিলেরতুয়া গ্রামে গতকাল বুধবার (২৫ অক্টোবর’২৩) বিকেল ৫’টায় কনের নানার বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে লামা থানা পুলিশের ২০ জন বিশিষ্ট একটি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। এসময় পুলিশ একে একে আহতদের উদ্ধার করে লামা হাসপাতালে নিয়ে আসে।

জানা যায়, বর-কনে পক্ষের সমন্বয়তা ঠিকঠাক থাকা সত্ত্বেও সমাজ কমিটির সভাপতি আব্দুল মান্নানের একক কর্তৃত্ববলই সাজসজ্জার পরিবেশ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের রূপ নেয়। কিন্তু চাঞ্চল্যকর এমন ঘটনাচক্র পুরানো ক্ষোভ বলে মনে করছেন কনের মামা রিদুয়ানুল ইসলাম। তিনি বলেন, নব পত্নীকে ‘দাঙ্গা সৃষ্টকারী মান্নান’ তার নিকটাত্মীয়ের জন্য আত্মীয়তার প্রস্তাব পাঠাই। কিন্তু কথা কাজে মিল না হওয়ায় তা হয়নি। ফলে মেয়ের বিয়ের দিনে ২’হাজার টাকা সামাজিক চাঁদা, সংঘর্ষের পরিকল্পিত ইস্যু বলে মনে করছেন তারা। খালা জাহেদা বেগম বলেন, বিয়ে ভাঙতে তারা এমন নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে।

কনের মা সালমা বেগম বলেন, এলাকার সবাইকে দাওয়াত দিতে পারি নাই বলে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। হামলাকারী ভাংচুরের পাশাপাশি বিয়ের মালামাল ও মেয়েদের গায়ের স্বর্ণ লুট করার অভিযোগও করেন সে।

কনের বাবা মো. হাসান ও পাশের বাড়ির মোবারক হোসেন জানান, আলীকদম সদরের বাজার পাড়া এলাকার মো. শাহজাহান এর ছেলে নাজুমল ইসলামের সাথে তার মেয়ে ইয়াছমিন আক্তার (১৮) এর বিবাহ ঠিক হয়। বুধবার পূর্ব শিলেরতুয়া মেয়ের নানার বাড়ীতে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে মেয়েকে তুলে দেয়া হচ্ছিল। অধিকাংশ মেহমান খাওয়া দাওয়ার মাঝখানে কথা উঠে সামািজক চাঁদা নিয়ে। মেয়ের বাবা জনৈক মুরুব্বি সাইফুল ইসলাম সহ সামাজিক চাঁদা নিয়ে কথা হয়েছে বলে উঠা মাত্রই পূর্ব শিলেরতুয়া সমাজের সর্দার আব্দুল মন্নান তেড়ে উঠে বলেন ‘আমি সমাজের সর্দার। আমি ছাড়া অন্য কেউ কিভাবে সমাজের চাঁদা ঠিক করে?’ কাটাকাটি ও বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে হঠাৎ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রুপ নেয়। পক্ষান্তরে সমাজের ৬০/৭০ জন লোক এসে বরকনে পক্ষের মেহমান ও লোকজনের উপর হামলা চালায়। মূহুর্তেই অনুষ্ঠান পন্ড হয়ে প্রচুর খাবার নষ্ট হয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, স্থানীয়দের হামলার ভয়ে আলীকদম থেকে আসা ৫/৬টি মোটরবাইক আরোহী মেহমান পালিয়ে পার্শ্ববর্তী শিলেরতুয়া নয়া পাড়া গ্রামে আশ্রয় নেয়। পূর্ব শিলেরতুয়া গ্রামের রজ্জব আলীর ছেলে মো. শফির নেতৃতে ২০/২৫ জন ছেলে লাঠি হাতে নিয়ে তাদের ধাওয়া করে এবং শিলেরতুয়া নয়া মার্মা পাড়ার দক্ষিন ঠান্ডাঝিরি নামকস্থানে তাদের মারধর করে। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন। শিলেরতুয়া নয়া পাড়ার এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, আলীকদমের মেহমান গুলোকে শিলেরতুয়া গ্রামের লোকজন নৃশংসভাবে মেরেছে।

এদিকে সর্দারের ছোট ভাই আহত মো. রফিক বলেন, সমাজের চাঁদা নিয়ে কথা হচ্ছিল। সামান্য বিষয় নিয়ে বর পক্ষের লোকজন সর্দারের গায়ে হাত তোলে। আমাদের তিনজনকে মেরে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। পরে এলাকার লোকজন শুনে কি করেছে আমরা জানিনা।

লামা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. শামীম বলেন, আমরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে থানায় নিয়ে আসি। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পরে কনেকে তার বাবা মায়ের উপস্থিতিতে নিরাপদে বরের গাড়িতে তুলে দেয়া হয় এবং তারা নতুন বউকে নিয়ে চলে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন থানায় মামলা করলে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

ঘটনায় আহতরা হলেন, বর নাজমুল হোসেন (২১), কনের বাবা মো. হাসান (৫০), মা সালমা বেগম (৪০), সর্দার আব্দুল মন্নান (৪৮), এলাকার মুরুব্বি মো. রফিক (৪২), সাইফুল ইসলাম (৫২), বর পক্ষের মো. বাদশা মিয়া (২৫), মো. রবিউল (১৭), ঈমাম মেহেদী (১৮), মো. এরফান (২২), ইমরান (১৮), মোজাম্মেল (২১), সাঈম (১৭) মনি আক্তার (৫০), রেজিয়া বেগম (৬৫) ও পূর্ব শিলেরতুয়া এলাকার মো. ইউসুফ (৩০), মো. আবু দাউদ (৪০)।

বার্তা বাজার/জে আই