কিশোরগঞ্জের ভৈরবের ঋষিপট্টিতে “অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ” লিখা নামে লিফলেট দেখিয়ে এক লাখ টাকা করে লোন দেয়ার আশ্বাসে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চলছে অর্থ আদায়। সহজ কিস্তিতে ১ লাখ টাকা লোন পেতে হাজারো নারী পুরুষ ৫ টাকা দিয়ে ফরম পুরন করছেন। এ সময় স্থানিয় সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে সদস্য সংগ্রহকারিরা সটকে পড়ে।

সরেজমিনে জানা যায়, ভৈরব বাজারের ঋষিপট্টির রাস্তার মোড়ে কয়েকজন নারী টেবিল নিয়ে বসে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আসা শত শত নারী পুরুষদের কাছ থেকে জন প্রতি ৫ টাকা করে নিয়ে সদস্য সংগ্রহ করছেন। তাদের লক্ষ্য ২০ লাখ সদস্য সংগ্রহ করতে হবে। সদস্য করতে নেয়া হচ্ছে এন আই ডি কার্ড ও মোবাইল নাম্বার। সদস্য হওয়ার লটারীর মাধ্যমে সদস্যদের ১ লাখ টাকা করে লোন দেয়া হবে।

তবে লোনের টাকা কবে নাগাদ পাওয়া যাবে তার কোন সুনির্দিষ্ট সময় বলতে পারছেনা সদস্য সংগ্রহকারিদের কেউ। লাখ টাকা লোন পেতে গত ১ মাস যাবত সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত নানা বয়সের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ভীড় করছে ঋষি পট্টির রতন বর্মনের বাড়িতে। অনেক আশা আকাংখ্যা নিয়ে সদস্য পদ সংগ্রহ ও ১ লাখ টাকা লোন পেতে সাধারণ মানুষগুলো অনেক দুর দুরান্ত থেকে এসে এখানে এসে জড়ো হচ্ছেন। রতন বর্মন এ ভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রায় লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন বলে জানান এলাকাবাসি। সদস্য সংগ্রহের নামে উত্তোলনের টাকার অর্ধেক নেয় সদস্য ফরম পুরণকারি নারীরা বাকি অর্ধেক নেন রতন বর্মন নিজে।

প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে অটো রিক্সা ইজিবাইক দিয়ে শত শত নারী পুরুষ তাদের এন আইডি কার্ড দিয়ে নাম ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার দিয়ে একটি ফরম পুরণ করতে বাজারের ঋষিপট্টিতে এসে জড়ো হচ্ছে। একউ বা রিক্সা থেকে নামছে আবার কেউ কেউ তাদের নাম লিপিবদ্ধ করছে। এসকল লোকদের কেউ বা কৃষক আবার কেউবা অসচ্ছল পরিবারের লোকজন্র। তারা অনেক আশা নিয়ে এখানে এসে ফরম লিপিবদ্ধ করছেন যাতে স্বল্প সুধে ১ লাখ টাকা করে লোন পাওয়ার জন্য।

সদস্য হতে আসা ফিরোজ মিয়া, মোরশেদ মিয়া, পরিস্কার বেগম, জালাল উদ্দিন ও ছালেহা বেগমসহ আরো কয়েকজন বলেন, আমরা জানতে পেরেছি ঋষিপট্টিতে রতন বর্মন নামে জনৈক ব্যক্তি ৫ টাকা দিয়ে একটি ফরম পুরণ করলে পরবর্তীতে তাকে ১ লাখ টাকা করে বিনা সুধে লোন দেয়া হবে। তাই আমরা অনেক দুর থেকে লোন পাওয়ার আশায় এখানে এসেছি। এসে দেখি সব উলট পালট হয়ে গেছে। আমাদের কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে রিক্সা অটো দিয়ে এখানে আসা আর সময় নষ্ট দুটোই বিফলে গেছে।

টাকা উত্তোলনকারি শেউলি দাশ, শিবা রানী দাশ, দীপা বলেন, রতন আমাদেরকে বলেছে জন প্রতি ৫ টাকা করে নিয়ে ২০ লাখ লোককের সদস্য ফরম পুরণ করতে হেব। তাহলে তোমরা অনেক টাকা রোজি করতে পারবে। আমরা যেহেতু ঘরে বসে থাকি তাই ভাবলাম কাজটা মন্দনা। প্রতিদিন কিছু লোকের ফরম পুরন করে দিয়ে ভাল একটা টাকা রোজি করতে পারি।

বিপাশা নামে আরেক কর্মী বলেন, আমি গত কয়েকদিনে ৮ হাজার টাকা সদস্য ফরম পুরণ করে দিয়ে পেয়েছি। তার মধ্য থেকে রতনকে ২২ শত টাকা দিয়েছি আর বাকিটাকা আমি নিজে রেখেছি।

এ বিষয়ে রতন বর্মণের সাথে কথা হলে তিনি জানান, মাধবদীর আবুল বাশার নামে এক ব্যক্তি আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে ভৈরব থেকে ২০ লাখ সদস্য সংগ্রহ করে দিতে। সদস্য হওয়ার পর প্রত্যেকে লটারির মাধ্যমে ১ লাখ টাকা করে লোন পাবে। বিনিময়ে লোন গ্রহিতাদের কাছ থেকে প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা করে দীর্ঘ মেয়াদী সময়ে এ লোনের টাকা কর্তন করা হবে।

লিফলেটে লিখা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশারের নামের পাশে লিখা মোবাইল নাম্বারে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমাদের সংগঠনের নামে কোন টাকা পয়সা লেন দেনের নিয়ম নেই। সদস্য করার নামে যদি কেউ কারো কাছ থেকে টাকা পয়সা নেয় তাহলে আপনারা তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করুন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ বলেন, কোন সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে যদি কেউ সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে অভিযুগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বার্তা বাজার/জে আই