বান্দরবানের লামায় বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ফলে উপজেলা ব্যাপী বিভিন্ন মোবাইল ফোন কোম্পানীর নেটওয়ার্ক ডাউন হয়ে যায়। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে দুর্বল ও ধীরগতি ইন্টারনেট সমস্যায় গ্রাহক ভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
বিগত সময়ের তুলনায় গত কয়েক মাস যাবত মোবাইল ফোন কোম্পানী গ্রামীণফোন, রবি-এয়ারটেল, টেলিটক নেটওয়ার্কের কল আদান প্রদান এবং ইন্টারনেট সার্ভিসে বিব্রতকর সেবার কারনে হতাশ হয়ে ক্রমশ কোম্পানিগুলোর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছেন গ্রাহকরা।
আবার কোন কোন এলাকায় এনিটাইম নেটওয়ার্ক দুর্বল থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কোম্পানী উন্নত গ্রাহক সেবার কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া উপজেলার সবকটি এরিয়ায় নেটওয়ার্ক সিস্টেমের ব্যাপক তারতম্য লক্ষ করা যাচ্ছে।
উপজেলার অনেক মানুষ দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি চাকুরী ও ব্যবসায় নিয়োজিত রয়েছেন। দুর্বল নেটওয়ার্কের কারণে তাদের দেশের পরিবার পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনদের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনেকটা বেগ পেতে হয়।
অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন শিক্ষা কার্যক্রম সহ সর্বস্তরের ব্যবসায়ী, সরকারি-বেসরকারি অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো গুরুত্বপূর্ণ দাপ্তরিক কাজে সংশ্লিষ্ট যারযার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
সরেজমিনে দেখা যায়, কল বা ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য গ্রাহকদের এদিক ওদিক ছুটতে হয়। কেউ হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর চলে যায় কেউবা ছাদে উঠে।
গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া থেকে জানা যায়, রবি-এয়ারটেলের মোবাইল নেটওয়ার্ক ঠিকঠাক দেখা গেলেও কল দেওয়া মাত্র নেটওয়ার্ক জিরো হয়ে যায়। বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষার পর পুণঃ নেটওয়ার্ক আসলেও কল দিয়ে কথা বলার মাঝে হঠাৎ ডিসকানেক্টেড হয়ে যায়। প্রায় সময় কথার মাঝখানে হঠাৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, পুনঃসংযোগ পেলেও অপর প্রান্ত থেকে কথা না শোনা শুধুশুধু বিল কেটে নেয়ার মতো আর্থিক ক্ষতিসহ নানান সমস্যার কথা জানান গ্রাহকরা। একই সাথে কাউকে ফোনে পাওয়ার চেষ্টা করলে ‘কাঙ্ক্ষিত নম্বরটিতে এই মুহূর্তে সংযোগ দেয়া যাচ্ছে না’ বলে স্বয়ংক্রিয় ঘোষণা এবং তিন মিনিট কথা বলতে গেলে কয়েকবার কল ড্রপ সহ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের নানান ভোগান্তির চিত্র এখন প্রতি মুহূর্তের।
এছাড়া কথা বলার সমস্যার পাশাপাশি প্রকট আকার ধারণ করেছে ইন্টারনেট ব্যবহারে জটিলতা। 4G তো দূরের কথা 3G চালু করলে 2G’র গতিও পাওয়া মুশকিল। এছাড়া উপজেলায় বিদ্যুৎ চলে গেলে ন্যূনতম নেটওয়ার্ক কভারেজ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়। সাথে ইন্টারনেট কানেকশনও। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে নেটওয়ার্ক একেবারেই শুন্যের কোঠায় চলে আসে। তখন স্বাভাবিক ইনকামিং-আউটগোয়িং ব্যবস্থাতে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন থাকতে হয় গ্রাহকদের। ফলে মোবাইল নেটওয়ার্কের উপর নির্ভর অনলাইন সেবা, এলাকার হাট-বাজার, ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তথ্য প্রযুক্তি এবং অনলাইন ভিত্তিক দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জরুরি কাজটুকু সারতে চরম আকারে ব্যাহত হয়। মূলত এজাতীয় সমস্যাগুলো বেশিরভাগ বিদ্যুৎ না থাকলেই দেখা দেয়। ফলে মনে হচ্ছে গোটা উপজেলার মোবাইল নেটওয়ার্ক বিদ্যুৎ থাকার উপরেই নির্ভরশীল!
এদিকে দেশের সর্বাধিক গ্রাহক সমৃদ্ধ মোবাইল নেটওয়ার্ক গ্রামীণফোন তাদের সেবা ও নেটওয়ার্কীং পলিসির গুনগত মান নিয়ে উপজেলার সকল শ্রেণি পেশার মানুষের মাঝে ব্যাপক প্রতিফলনের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৪/৫ দিন যাবৎ গ্রামীণ নেটওয়ার্ক একেবারেই নেই। ফলে গ্রাহকের ভোগান্তি চরম পর্যায়ে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে লামা এরিয়ার কাস্ট ম্যানেজার মো. আল মুরশেদ বলেন, বিষয়টি সমাধান হয়েছে, তবে এসব দেখাশোনার জন্য স্পেশাল টেকনিক্যাল টিম নিয়োজিত আছেন। মূলত কারিগরি ত্রুটির কারণে প্রতিনিয়ত এমনই হয়ে থাকে। কিন্তু এবারের সমস্যাটা কাটিয়ে উঠতে একটু সময় লেগে গিয়েছে মাত্র।
একই অভিযোগ বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টেলিটকের বিরুদ্ধে, এদের কল রেট ও ডেটা প্যাকেজ সাশ্রয়ি হওয়া সত্ত্বেও ব্যবহারকারীরা দূরে সরে যাচ্ছেন, যার প্রধানত কারণ নেটওয়ার্ক সমস্যা। শহর অঞ্চলগুলোতে 4G নেটওয়ার্ক মোটামুটি পেলেও দুর্গম বা গ্রাম অঞ্চলে 2G-র মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
পুরো উপজেলায় দুর্বল এবং ধীরগতি নেটওয়ার্ক নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রবাসী ওমর ফারুক রাকিব লিখেন, লামার মত এমন বাজে সার্ভিস বাংলাদেশের কোথাও আছে কিনা জানিনা। বিপ্লব দাস লিখেন, বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্ক জমজ ভাই। আমির আজীজ লিখেন, যদি শুনেন আমি বাড়িতে আসছি কিন্তু ফোনে পাচ্ছেন না, ভাববেন এলাকায় কারেন্ট নাই। কারেন্ট যাইতে দেরি কিন্তু নেটওয়ার্ক যাতে দেরি হয় না, গ্রামীণফোন ইউজার। নুরুজ্জামান খান বাবু লিখেন, কারেন্ট চলে গেলে টেলিটক নেটও মহাকাশে চলে যায়। তৌহিদুল ইসলাম লিখেন, আমাদের এখানে রবি টাওয়ার বিদ্যুৎ থাকলেও নেট থাকে না। খুবই জঘন্য অবস্থা। হাশেম নামে আরেকজন লিখেন, আমি গ্রামীণফোন, টেলিটক, রবি ও এয়ারটেল সিম ব্যবহার করি। কোনটাতেই ঠিকমত নেটওয়ার্ক পাইনা। বিশেষ প্রয়োজনে ৯৯৯ এ কল করতে গিয়েও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। মেহেদী হাসান আশিক লিখেন, বাংলাদেশের নিজস্ব একটি সিম কোম্পানির নাম হলো টেলিটক। কিন্তু দুঃখের বিষয় বাংলাদেশের সবচেয়ে অবহেলিত অপারেটরের তালিকায় শীর্ষে টেলিটক। সরকারি হাসপাতালের মত টেলিটকেরও অবস্থা খুব খারাপ। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সাথে সাথেই টেলিটকের নেটওয়ার্ক চলে যায়। বাংলাদেশ সরকার কিংবা টেলি যোগাযোগ মন্ত্রণালয় যদি একটু সচেতন হতো কিংবা তারা যদি সঠিক পর্যবেক্ষণ করত তাহলে আজ বাংলাদেশের এক নাম্বার অপারেটর হতো টেলিটক। মজার বিষয় হল সিন্ডিকেটের ঘন আঁধারে হারিয়ে যাচ্ছে এই অপারেটরটিও। কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশে এমন ঘটনা দুঃখজনক। এজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন লামা উপজেলার গ্রাহকরা।
বার্তা বাজার/জে আই