পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার গহিনখালী লঞ্চঘাট সংলগ্ন সড়ক রক্ষায় গাইডওয়াল নির্মাণের এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই গাইডওয়ালের মাঝ অংশ ধসে গেছে। হেলে পড়েছে বাকি অংশও। যতটুকু টিকে আছে, তাও যেকোন মুহূর্তে ধসে বিলিন হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ফলে সড়কের ঝুঁকি থেকেই গেছে।

অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অপরিকল্পিত প্রকল্প অনুমোদন, তদারকিতে উদাসীনতা ও মানহীন কাজ হওয়ায় নির্মাণের পরপরই গাইডওয়াল ধসের এ ঘটনা ঘটে।

মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়ক রক্ষায় রক্ষাকবজ হিসেবে নির্মিত গাইডওয়ালটির মাঝখান দিয়ে ধসে (ভেঙে) খালে পড়েছে। দু’পাশের বাকি অংশ পিলারসহ হেলে গেছে। যেকোন মূহূর্তে সেটুকুও খালে ধসে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ফলে সড়কের ঝুঁকি থেকেই গেল। ধীরেধীরে সড়কও ভেঙে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে উপজেলা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় ‘রাঙ্গাবালী ইউনিয়নের গহিনখালী রাস্তার বামপাশে ৭৫ মিটার গাইড ওয়াল’ নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী।

পরে কাজটি পায় উপজেলার মৌডুবির তাওহীদুর রহমানের মালিকানাধীন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাটেক ইঞ্জিনিয়ার্স’। যার প্রাক্কলিত মূল্য ৭ লক্ষ ৮৬ হাজার ২০৫ টাকা। আর চুক্তিমূল্য ৭ লাখ ৪৬ হাজার ৮৯৪ টাকা।

তথ্যানুযায়ী, কাগজ-কলমে কাজটি চলতি বছরের ১৫ মে শুরু হয় এবং শেষ হয় ১৫ জুন। তড়িঘড়ি করে কাজ শেষে পুরো বিল তুলে নেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ রয়েছে, এলজিইডির কোন তদারকি ছাড়াই কাজটি করা হয়। তাই যেমন খুশি তেমন কাজ করেই উপজেলা প্রকৌশলীর মাধ্যমে বিলটি তুলে নেন ঠিকাদার। এছাড়া আরসিসি গাইডওয়ালের পরিবর্তে অপরিকল্পিতভাবে ইটের গাথুনির গাইডওয়াল করাকেই দুষছেন স্থানীয়রা।

গহিনখালী সড়কের টমটম চালক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘যখন এইটা (গাইডওয়াল) বানায়, তখনই আমরা মজবুত করে করতে বলছি। কিন্তু তারা বলছে তোমাগো কথায় হবে না। আমরা যেমন পাইছি, তেমন করবো।’ পরে তারা করে যেতে না যেতেই এই অবস্থা হয়ে গেছে।’ ওই সড়কের অটো চালক ইয়ার হোসেন বলেন, ‘ভাই এই যে ওয়ালটা করছে, দুইদিন পরই ভাইঙ্গা (ভেঙে) গেছে। এখন বৃষ্টি হলেই আমরা খুব সমস্যায় পরি। যাত্রী এখানে নামিয়ে দেওয়া লাগে। ওয়ালটা ভালভাবে করলে আর সমস্যা হতো না।’ পরিকল্পনা করে কাজটা করা উচিত ছিল।

কাজটির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বাংলাটেক ইঞ্জিনিয়ার্সের স্বত্তাধিকারী তাওহীদুর রহমান বলেন, ‘কাজ শেষ হয়ে গেছে। বিল উঠানো হয়েছে। জামানতের টাকা রয়েছে। ওখানেতো হেলে পড়ছে, কিছু অংশ ধসে পড়ছে। আমরা যখন কাজ শেষ করছি, তখনো সব ঠিক ছিল। আবহাওয়া খারাপ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে যদি ক্ষতি হয়, সেটার দায় কি ঠিকাদার নিবে?

উপজেলার যারা ইঞ্জিনিয়ার আছে, ওনাদের সাথে যোগাযোগ করলেও হয়। দেখেন ওনারা কি বলতে চায়।’

এ ব্যাপারে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। গাইডওয়াল করার সময় কিছু অংশে গাছ ফালাইছে। ওদিকে ড্রেজার দিয়ে বালু উঠানোয় রাস্তাও ভাঙছে। খালের পাড়ে ওটা (গাইডওয়াল) আমি দিতেই চাইনি প্রথম। এখন যারা কাজ করেছে, তাদেরকে ঠিক করে দিতে বলেছি।’

বার্তাবাজার/এম আই