মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) তারা মিয়া বেপারীর বিরুদ্ধে সরকারি ৬৫ শতাংশ জমি জাল দলিলের মাধ্যমে আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গত ১৪ জুন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখা থেকে রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্তপূর্বক সুনির্দিষ্ট মতামত প্রেরণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়, আদালত ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাজিতপুর ইউনিয়নের ৮০নং সুতারকান্দি মৌজার এসএ ১৮৫ নম্বর খতিয়ানের ৪৮৬ নং দাগে ৬৫ শতাংশ জমি রয়েছে। এই জমি সর্বশেষ বিআরএস মূল্যায়নে ১/১ নং খতিয়ানে সরকারি অর্পিত সম্পতি হিসেবে রেকর্ড করা হয়। যার ভিপি কেস নম্বর XII-VP-১৭/৮৪-৮৫। সরকারি এই অর্পিত সম্পতি তারা মিয়া তার নিজের নামে রেকর্ড করতে একটি জাল দলিল দেখিয়ে ২০১৮ সালে রাজৈর সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা করেন। এই মামলায় গত জুন মাসে তার পক্ষে একটি রায় দেন বিজ্ঞ আদালত।

নিয়ম অনুসারে সরকারি অর্পিত সম্পতি নিয়ে কারো কোন দাবি বা অভিযোগ থাকলে সেটি মাদারীপুর আদালতের অর্পিত ট্রাইব্যুনালে মামলার করার বিধান রয়েছে। নিয়ম ভঙ্গ করে ইউপি সদস্য তারা মিয়া সুকৌশলে রাজৈর সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা করেন।
সরকারি অর্পিত এই সম্পতি লীজ নিয়ে গত ৩৫ বছর ধরে চাষাবাদ করছেন সুমন ফকির ও শাহাবুদ্দিন ফকির।

এ সম্পর্কে শাহাবুদ্দিন ফকির অভিযোগ করে বলেন, ‘মেম্বার তারা মিয়ার কোন কাগজপত্র নেই। তার ভাই আলী বেপারী একজন দলিল লেখক, তার সহযোগিতায় একটি জাল দলিল তৈরি করে এই সরকারি সম্পতি নিজের নামে করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি যে জাল দলিল আদালতে প্রেরণ করেছে তার সঙ্গে টিআই নম্বরের কোন মিল নেই। তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আমাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করতে এই কান্ড ঘটিয়েছেন।’

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সজীব কুমার সরকার বলেন, ‘সরকারি জমি আত্মসাৎ করার জন্য জাল দলিল তৈরি করে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য তারা মিয়া কোর্টের রায় নেয়। এক মাসে ছয়টি তারিখ নির্ধারণ এবং পরপর দুই দিনে দুটি তারিখ দিয়েছে, আমাদের স্বাক্ষীর নকল হাতে আসার আগেই এবং আমাদের দরখাস্ত পেইন্ডিং রেখেই কোর্ট আদেশ দিয়ে দেন। এটা নিয়ে আমরাও বিব্রত। সবচে বড় বিষয় ভিপি সম্পত্তি (অর্পিত সম্পতি) সম্পর্কিত ‘ক’ তফসিলের মামলা এই কোর্টে রায় দেওয়ার কোন এখতিয়ার নাই। এই সম্পত্তি সম্পর্কিত রায় দিবে অর্পিত ট্রাইব্যুনালে। আদালতে এই রায় পূর্ণাঙ্গ প্রকাশ হওয়ার পরেই ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য সর্বাধিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।’

এ বিষয় জানতে চাইলে অভিযুক্ত মেম্বার তারা মিয়া বেপারী বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ ভিত্তিহীন। কারণ আমি সঠিক কাগজপত্র দিয়েই আদালত থেকে রায় পেয়েছি। প্রতিটি কাগজপত্র আমার সঠিক রয়েছে। যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন তারা ষড়যন্ত্রমূলক এই কাজ করেছেন।’

মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ঝোটন চন্দ বলেন, ‘তারা মিয়া একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে জাল দলিল ব্যবহার করে সরকারি অর্পিত সম্পতি আত্মসাতের চেষ্টা করছেন। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। যেহেতু এটি আদালতে গড়িয়েছে এবং তারা মিয়ার পক্ষে একটি রায়ও দিয়েছে। তাই আমাদের আইনজীবী পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার পরে আপিল করবে।’

বার্তা বাজার/জে আই