তথ্য বাতায়ন ওয়েবসাইট খোলা আছে। কোনটি শুধু নামেই আছে, কাজে নেই। কোনটিতে সাইট ভিজিট করে তথ্য পাওয়া মুশকিল। কোনটির তথ্য থাকলেও তা গড়মিল। কোনটির তথ্য-উপাত্ত আপডেট নেই। কোন কোন সাইটের ক্যাটাগরি কিংবা সাব-ক্যাটাগরিতে আবার তথ্যই নেই।

জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি তথ্য ও সেবা পৌঁছে দিতে নির্মাণ করা পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ২০টি তথ্য বাতায়ন ওয়েবসাইট ভিজিট করে এমন অবস্থা দেখা গেছে। উপজেলা প্রশাসনের মূল ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর ও ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত চালু করা এসব ওয়েবসাইট আপডেট হয় শুধু নামমাত্র।

নিয়মিত তথ্য-উপাত্ত আপডেট না হওয়ায় ওয়েবসাইটগুলো ভিজিটে নিরুৎসাতি হচ্ছেন মানুষ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকির এবং উদাসীনতার ফলে একদিকে কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জনগণ, অন্যদিকে সরকারের উদ্দেশ্যও ভেস্তে যাচ্ছে। টানা এক সপ্তাহ ধরে সবশেষ আজ পর্যন্ত সাইটগুলো ভিজিটের পর্যবেক্ষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে। যার স্ক্রিন রেকর্ডিং প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

জানা যায়, জনগণের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করতে এবং সরকারি দপ্তর থেকে প্রদেয় সেবাসমূহ প্রাপ্তির নিশ্চয়তার জন্য ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ, অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়সহ প্রায় ২৫ হাজার সরকারি দপ্তরের ওয়েব সাইটের সমন্বিত রূপে ‘ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন’ নামক ওয়েবসাইট চালু করে সরকার। ২০১৪ সালের ২৩ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে এ পোর্টালের যাত্রা শুরু হয়। সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পরিচালিত একসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রামের আওতায় বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম এ জাতীয় তথ্য বাতায়ন পোর্টাল (www.bangladesh.gov.bd) নির্মাণ করা হয়েছে।

তথ্য বাতায়নের তথ্যানুযায়ী, এই পোর্টালের অধীনে মন্ত্রণালয় থেকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৬৫৪টি ওয়েব সাইট চালু করা হয়। জাতীয় তথ্য বাতায়ন পোর্টালের সঙ্গে একসূত্রে গেঁথে সারাদেশের মত তখন রাঙ্গাবালী উপজেলার (www.rangabali.patuakhali.bd) নামেও মূল একটি তথ্য বাতায়ন সাইট চালু করা হয়। এই সাইটের সঙ্গে লিংক করে উপজেলার ১৯টি সরকারি দপ্তর এবং ৬টি ইউনিয়ন পরিষদের নামেও আলাদা আলাদা তথ্য বাতায়ন ওয়েব সাইট চালু করা হয়েছিল।

তথ্য বলছে,কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন, পর্যটন ইত্যাদি তথ্যসেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে এ ওয়েব সাইটগুলো চালু করা হয়। এ পোর্টালের মাধ্যমে যেকোন বিজ্ঞপ্তি, গেজেট, ই-সেবা, সরকারি ফর্মসমূহ, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের তালিকা, ই-ডিরেক্টরি, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা, সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড, বিভিন্ন প্রকল্পের বিবরণ, সরকারি সুবিধাভোগীদের তালিকা, জনপ্রতিনিধিদের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বরসহ ইত্যাদি তথ্য জনগণের পাওয়ার কথা।

কিন্তু রাঙ্গাবালী উপজেলার মূল ওয়েব সাইট থেকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত চালু করা মোট ২০টি সাইটের কোনটিই নিয়মিত আপডেট হচ্ছে না। ভিজিট করে দেখা যায় উপজেলার এলজিইডি, পিআইও, মৎস্য, প্রাণী সম্পদ, কৃষিসহ অন্যান্য বিভাগ এবং ৬টি ইউনিয়নের ওয়েব সাইটগুলোর বেশিরভাগ ক্যাটাগরিতে তথ্য-উপাত্ত নেই। সবচেয়ে বেশি দূরদশা উপজেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ওয়েবসাইটগুলোর। সেগুলোর কোন কোনটিতে এখনও হাতই পড়েনি কর্তৃপক্ষের।

রাঙ্গাবালীর নামে করা প্রশাসনের মূল ওয়েবসাইটটি ভিজিট করে দেখা গেছে, নোটিশ বোর্ডে ফাঁকা। এ বছরের কোন তথ্য-উপাত্ত নেই সেখানে। খবর নামক একটি ক্যাটাগরিতে গতবছরের ৩০ অক্টোবর আপডেট করা ‘রাঙ্গাবালী উপজেলায় সর্বজনীন পেনশন স্কীম অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত’ শিরোনামে সর্বশেষ স্ক্রোল প্রদর্শিত রয়েছে। সাইটটির ‘প্রকল্প সমূহ’ ক্যাটাগরিতে ক্লিক করে দেখা যায় একটি বাড়ি একটি খামার, এলজিএসপি, এলজিইডি, কাবিখা, কাবিটা, জিআর, টিআর নামক সাব-ক্যাটাগরিতে কোন তথ্যই এন্ট্রি করা হয়নি।

ইউনিয়ন পর্যায়ের ওয়েব সাইটগুলো ভিজিট করে দেখা যায়, নামমাত্র মৌলিক কিছু তথ্য অনেক আগে আপডেট করে রাখা হয়েছে। তবে চলতি বছরের তেমন কোন তথ্য নেই বললেই চলে। বিভিন্ন সুবিধাভোগীদের তালিকা এবং প্রকল্পের ক্যাটাগরিতে তেমন কোন তথ্য নেই। আর কোন কোন ইউনিয়নে তথ্য থাকলেও সেগুলো ২০২৩ সাল কিংবা তার অনেক আগের। এছাড়া কোন কোন ক্যাটাগরির তথ্যে অসংগতিও রয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ইউনিয়ন পর্যায়ের ওয়েবসাইট ভিজিট করে দেখা যায়, শুধু উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের নোটিশ বোর্ডে পাঁচটি এবং মৌডুবি ইউনিয়নের নোটিশবোর্ডে দুইটি তথ্য আছে। বাকি রাঙ্গাবালী, চরমোন্তাজ, বড়বাইশদিয়া ও চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের ওয়েবসাইটের নোটিশবোর্ডে এ বছরের কোন তথ্যই পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা জানান, প্রকল্প কিংবা বিভিন্ন সরকারি উপকারভোগীদের তালিকা ইউনিয়ন পরিষদ সচিবদের কাছে সংরক্ষিত থাকে। সেগুলো উদ্যোক্তাদের সার্ভারে এন্ট্রি করা সম্ভব নয়। তাই ইউপি সচিবদেরই সেই তথ্য হালনাগাদ করতে হবে। তিনি আরও জানান, ইউনিয়ন পর্যায়ের তথ্য বাতায়ন সাইট হালনাগাদ করার জন্য উদ্যোক্তারা সরকারি বা বেসরকারি কোন আর্থিক সহায়তা কিংবা সম্মানি পান না। স্বেচ্ছায়ই তারা যতটুকু সম্ভব, ততটুকু সাইট আপডেট করেন।

তথ্য বাতায়নের ওয়েবসাইটের সেবাপ্রত্যাশী ইঞ্জিনিয়ার মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘তথ্য বাতায়ন ওয়েব সাইট সম্পর্কে প্রচারণা না থাকায় সাধারণ মানুষের তেমন কোন ধারণা নেই। আর সংশ্লিষ্টদের তদারকিরে অভাবে নিয়মিত তথ্য-উপাত্ত আপডেট না হওয়ায় ওয়েব সাইটে নতুন কোন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। একারণে সাইট ভিজিটে নিরুৎসাহিত হচ্ছে মানুষ। এতে সরকারের উদ্দেশ্য ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই সাইটগুলো ডেভলপমেন্টে এবং আপডেট করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নজর দেওয়া উচিত।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, উপজেলা পর্যায়ের তথ্য বাতায়ন সাইটগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের সাইটগুলো ইউপি চেয়ারম্যান, তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা কিংবা ইউপি সচিবদের আপডেট করার কথা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইসিটি অধিদপ্তরের রাঙ্গাবালী উপজেলায় নিয়োজিত সহকারী প্রোগ্রামার মোহাম্মাদ মাসুদ হাসান বলেন, ‘উদাসীনতা কিংবা অনীহার কারণে আসলে নিয়মিত পোর্টালগুলো আপডেট করা হচ্ছে না। সরকারি নির্দেশনা রয়েছে নিয়মিতভাবে ওয়েবসাইট আপডেট করার। নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে যার যার সাইট, তার তার আপডেট করা উচিত।’

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম হলো জাতীয় তথ্য বাতায়ন পোর্টাল। একসময় বলা হতো নলেজ ইজ পাওয়ার, এখন বলা হয় ইনফরর্মেশন ইজ পাওয়ার। তাই তথ্য সম্প্রচারের কোন বিকল্প নেই। তথ্য সেবা দেওয়ার জন্যই তথ্য বাতায়ন। আমরা এই সাইটের মাধ্যমেই তথ্য সেবা প্রদান করে থাকি। সেবাপ্রত্যাশীরা সেখান থেকে তথ্যসেবা গ্রহণ করেন। ইদানিং ওয়েবসাইটগুলো নিয়মিত আপডেট হচ্ছে না। অনেকের অজানা থাকার কারণে এবং যে কর্মকর্তা অপারেট করতেন তিনি বদলি হয়ে যাওয়ার কারণে কিছু কিছু দপ্তর তথ্য আপডেট করতে চ্যালেঞ্জের সম্মুখিন হচ্ছে। আমরা শিগগরই ওয়েবসাইটের তথ্য নিয়মিত আপডেট করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। যাতে সেবাপ্রত্যাশীরা খুব সহজে তথ্যসেবা পেতে পারে।’

বার্তা বাজার/এইচএসএস