সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কালা সাদক ও তৈয়মুরনগর মৌজার ২১৭.৭০ একর জায়গা নিয়ে ধলাই দক্ষিণ বালু মহালের দুই পাশে পাঁচটির গ্রামে কয়েক হাজার বসতি। ৭ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা দিয়ে মহালের ইজারা নিয়েছেন ঢালারপাড় গ্রামের তারা মিয়ার ছেলে আনোয়ার হোসেন।

বালু মহালের দুই দিকে রয়েছে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দুইটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,দুইটি মাদরাসা,তিনটি মসজিদ,কমিউনিটি ক্লিনিক,হাট-বাজার। ইজারার সামান্য অংশে খনিজ বালু থাকলেও ইজারার বাইরে বিশাল রেকর্ডিও জমিতে রয়েছে মূল্যবান খনিজ বালু। ইজারার বাইরে থাকা রেকর্ডিও সেই জমি থেকে বালু উত্তোলন নিয়ে যত বিপত্তি। ইঞ্জিন চালিত লিস্টার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকিতে রয়েছে ঢালারপাড়, নতুন মেঘারগাঁও, দক্ষিণ রাজনগর, মোস্তফানগর ও দক্ষিণ ঢালারপাড়ের এ পাঁচটি গ্রামের নদী পারে অবস্থিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ মাদরাসা সহ স্থাপনা গুলো। এসব স্থাপনা ও পাঁচটি গ্রাম রক্ষায় শুক্রবার সকাল ১০টা ঢালারপাড় চকবাজারে এক সমাবেশের ডাক দেয় বিক্ষোবদ্ধ জনতা।

সমাবেশে উপস্থিত বক্তারা বলেন, বৃহত্তর ঢালারপাড় একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম। ১৯৮৮ এর বন্যায় এই গ্রামটি ভেঙ্গে ছিহ্নভিন্ন হয়ে যায়। গত কয়েক বছর যাবত বালু মহালের ইজারা পক্ষ লিস্টার মেশিন দিয়ে গ্রামের রাস্তা ঘাট ও বেরিবাধ ধংস করেছে। আন্দোলন করেও তা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। ধলাই দক্ষিণ নদী নামে এই বছর আবারও বালু মহাল লিজ হয়েছে। ইজারার ভেতরে কোনো বালু নেই। তাই ইজারাদার পক্ষ ইজারার বাইরে থেকে কৃষি জমির নিচ থেকে বালু সরিয়ে নিচ্ছে। এতে করে শত শত একর ধানি জমিতে ফসল উৎপাদন সক্ষমতা হারাচ্ছে। হুমকির মুখে মসজিদ মাদরাসা সহ বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠান। ইজারাবহির্ভূত স্থান থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করে পাঁচটি গ্রাম,মসজিদ মাদরাসা ও বিভিন্ন সরকারী স্থাপনা রক্ষার জন অনুরোধ জানানো হয়েছে।

তবে ইজারাপক্ষের অংশিদাররা জানিয়েছেন স্থানীয় বসতিদের তোপের মুখে বালু মহালে লস গুনতে হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে মাঝে মাঝে প্রশাসনের অভিযানে ইজারাপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর একটা সুষ্ঠু সমাধান চান তারা। সম্প্রতি ঢালারপাড় ও ইজারাদার পক্ষের মধ্যে দ্বন্ধ সৃষ্টি হওয়ায় দুই দিন ধরে বালু উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। এতে করে নৌকা মালিক পক্ষ ও সাধারণ শ্রমিকরা বেকায়দার রয়েছে। দুই পক্ষের দ্বন্ধে ব্যবসায় লস হওয়ায় অনেক নৌকা মালিক তাদের নৌকা অন্যত্র পাঠিয়ে দিচ্ছে। আনোয়ার হোসেন নামে খায়ের গাও গ্রামের এক বালু ব্যবসায়ী জানান, গত কয়েকদিন ধরে ঢালারপাড়ের বাসিন্দারা নিজেদের বসতি রক্ষায় ঘন ঘন অভিযান দেয়। এর মধ্যে প্রশাসনের অভিযান তো রয়েছেই। ইদের পরে মাত্র চার ট্রিপ দিয়েছি। নৌকা স্টাফদের বসে বসে খাওয়াচ্ছি। অনেক টাকা লস হয়েছে। আর পারতেছিনা। তাই নৌকা অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়েছি।

এক জরিপে দেখা যায়, ধলাই নদীতে ইদের পরে প্রায় ৬ শত নৌকা বালু পরিবহনে যুক্ত ছিল। গত কয়েকদিনে ২/৩ শত নৌকা অন্যত্র চলে গেছে। এভাবে দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব লেগে থাকলে ধলাই দক্ষিণ নদী বালু মহালে নৌকা শূন্য হয়ে পরবে। স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীরা এর একটা সুষ্ঠু সমাধান চাচ্ছেন।

উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সফর আলী জানান, ইজাবহির্ভূত ভাবে শত শত নৌকা বালু উত্তোলন করছে। লিস্টার মেশিন দিয়ে গভীর গর্ত করে বিভিন্ন সরকারী স্থাপনার আশেপাশে থেকে বালু উত্তোলন করার ফলে ঝুকির মধ্যে রয়েছে অসংখ্য স্থাপনা।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুল্লুক হোসেন জানান, উপজেলা প্রশাসন সীমানা নির্ধারণ না করে দেওয়ায় লিস্টার মেশিন দিয়ে যত্রতত্র ভাবে বালু উত্তোলন করছে। প্রশাসন যদি সীমানা নির্ধারণ করে সেখানে ফ্লাগ অথবা সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিতো তবে যত্রতত্র বালু উত্তোলন বন্ধ হতো। অনেক সরকারী প্রতিষ্ঠান রক্ষা পেতো।

ইজারাবহির্ভূত স্থান থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে মহাল ইজারাদার আনোয়ার হোসেন প্রতিবেদককে এরিয়ে চলেন।

বার্তা বাজার/জে আই