‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রীকে এবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে। শনিবার দুপুরে মিন্টো রোডের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর-রশীদ।

তিনি বলেন, মিল্টন সমাদ্দার রিমান্ডে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ সেসব বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার আশ্রমের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে মিল্টনের স্ত্রীকে রোববার দুপুরে ডিবিতে ডাকা হয়েছে। তার স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

মিল্টন সমাদ্দারকে বুধবার সন্ধ্যায় মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। ওই দিন রাতে সংবাদ সম্মেলনে হারুন অর-রশীদ জানিয়েছেন, মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে মানুষের কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে বিক্রির মতো ভয়ংকর অপকর্মের বহু অভিযোগ রয়েছে। তাকে রিমান্ডে নিয়ে এসব বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এছাড়া প্রয়োজনে তার স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসা করা হবে।

হারুন বলেন, মিল্টনের বাড়ি বরিশালের উজিরপুরে। বাবাকে পেটানোর কারণে এলাকাবাসী তাকে এলাকা ছাড়া করে। পরে মিল্টন মিঠু হালদার নামের এক নার্সকে বিয়ে করেন। এরপর তিনি চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার প্রতিষ্ঠা করেন। স্ত্রীকে দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চালানো শুরু করেন। গণমাধ্যমে এসেছে, তার একটি অপারেশন থিয়েটারের তথ্য, যেটার কোনো লাইসেন্স নেই।

তিনি বলেন, মিল্টনের বিরুদ্ধে রাতে মরদেহ দাফনের অভিযোগ রয়েছে। তিনি ইতোমধ্যে ৯০০ মরদেহ দাফন করেছেন বলে মিডিয়ায় এসেছে। এর মধ্যে ৮৩৫টি মরদেহের কোনো ডকুমেন্ট তিনি দেখাতে পারেননি। ভালো কাজ যতটুকু করেছেন, প্রচার করেছেন তার চেয়েও কয়েক গুণ। মানুষের কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে বিক্রির মতো ভয়ংকর অপকর্মের পাশাপাশি রয়েছে বহু অভিযোগ।মিল্টনের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অবৈধভাবে মরদেহ দাফন, আয়ের উৎস ও টর্চার সেলসহ ডজনখানেক অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয় মামলায় রাখা হবে বলে জানান ডিবি প্রধান।

ঢাকার মিরপুরে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ নামে একটি আশ্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন মিল্টন সমাদ্দার। তার ভাষ্য, সেখানে আশ্রয়হীন বৃদ্ধ ও শিশুদের আশ্রয় দেওয়া হয়। সম্প্রতি সাভারে জমি কিনে আশ্রয়কেন্দ্রের স্থায়ী নিবাস বানানো হয়েছে। মিল্টন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অসহায় বৃদ্ধ ও শিশুদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে প্রচার চালান। এ সংক্রান্ত ভিডিও চিত্র দেন। ফেসবুকে তাকে অনুসরণ করেন ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ।

সম্প্রতি মিল্টন সমাদ্দারের বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। এরপর মুখ খুলতে থাকেন ভুক্তভোগীরা। মিল্টন ফেসবুকে ভিডিও চিত্র দিয়ে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন।