চা-শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে শ্রম মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত গেজেট বাতিল এবং দৈনিক মজুরি ৫০০ টাকা নির্ধারণ করে নতুন গেজেট প্রকাশের দাবিতে মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) সকাল ১১টায় খাদিম ও বুরজান চা-বাগানের আমতলায় চা-শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

চা-শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক এবং খাদিম চা-বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি সবুজ তাঁতীর সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় সংগঠক মনীষা ওয়াহিদ এর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উপদেষ্টা শ্রীবাস মাহালী, সমন্বয়ক এস এম শুভ, বুরজান চা-কারখানার পঞ্চায়েত সভাপতি বিলাস ব্যানার্জি, খাদিম চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমল নায়েক, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আতাউর রহমান শামীম, শিক্ষক বিকাশ বাউরি, বুরজান চা-কারখানার পঞ্চায়েত কমিটির কোষাধ্যক্ষ সুশান্ত চাষা, চা-শ্রমিক নেতা অনিতা বসাক, কুমকুম নায়েক, মধু ভূমিজ প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, চা-বাগানের শ্রমিক ও কর্মচারীদের ন্যূনতম মজুরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি প্রজ্ঞাপন ১০ আগস্ট ২০২৩ শ্রম ও কর্ম সংস্থান মন্ত্রণালয়ের মজুরি বোর্ড গেজেট আকারে প্রকাশ করে। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী ন্যুনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাজারে দ্রব্যমূল্যের যখন চরম উর্ধ্বগতি তখন সরকার চা-শ্রমিকদের পূর্বের মজুরি দৈনিক ১৭০ টাকা বহাল রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। দেশের সকল চা-বাগানের শ্রমিকরা দু’বেলা দুমুঠো খাবারের নিশ্চয়তার দাবিতে যখন দীর্ঘদিন ন্যুনতম মজুরি দৈনিক ৫০০ টাকার দাবি জানিয়ে আসছিলেন তখন সরকারের পক্ষ থেকে মজুরি পূর্বের ন্যায় ১৭০ টাকা ঘোষণা চা-শ্রমিকদের সাথে প্রহসন। কোন আলোচনা ব্যতীত সরকারের একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ চা-শ্রমিকদের প্রচন্ড হতাশ করেছে এবং ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। ৫ শতাংশ হারে প্রতি বছর চা-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্ত অবিবেচনাপ্রসূত। বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যেখানে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায় সেখানে প্রতি বছর ৫ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধির সরকারি ঘোষণা চরম অমানবিক, শ্রমিকের স্বার্থ বিরোধী এবং পক্ষপাতদুষ্ট। চা-শ্রমিকদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে সরকার বারংবার বাগান মালিকদের স্বার্থ রক্ষা করে চলেছেন। ইতিপূর্বে চা-শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি ৩১ হাজার ৫০০ টাকার পরিবর্তে মাত্র ১১ হাজার টাকা পরিশোধের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও চা-শ্রমিকদের উপেক্ষা করে সরকার মালিকদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু চা-শ্রমিকরা পূর্ণ বকেয়া মজুরি পরিশোধের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন।

চা-শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির সমন্বয়ক এস এম শুভ সমাবেশে বলেন, চা-শ্রমিকের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে বাগান মালিকের স্বার্থ রক্ষার সরকারি প্রজ্ঞাপন বাতিল এবং দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করে নতুন গেজেট অবিলম্বে প্রকাশ করতে হবে। অন্যথায় চা-শ্রমিকরা আন্দোলনের মাধ্যমে গেজেট বাতিল করতে সরকারকে বাধ্য করবে।

সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের আহবায়ক সবুজ তাঁতী বলেন, চা-শ্রমিকদের স্বার্থের পরিবর্তে সরকার আজ মালিকের স্বার্থ রক্ষা করছেন। চা-শ্রমিকদের পিঠ আজ দেয়ালে ঠেকে গেছে। বাঁচতে হলে চা-শ্রমিকের আজ লড়াই করেই বাঁচতে হবে। আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমেই চা-শ্রমিকদের অধিকার আদায় করে নিতে হবে।

সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল রাজপথ প্রদক্ষিণ করে সিলেট সদর উপজেলা কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে শ্রমমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এসময় সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাক আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

বার্তাবাজার/এম আই