ভূঁইফোড় প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে অনুদান দিয়ে নিবন্ধন করে, ইউএন সদরদপ্তরের ভাড়া করা হলরুম থেকে অ্যাওয়ার্ড নিয়ে সংবাদপত্র ও স্যোসাল মিডিয়াতে প্রশংসায় ভাসছেন জায়েদ খান।

শুক্রবার (২১শে জুলাই) দুপুর থেকে গণমাধ্যমে অভিনেতা জায়েদ খানকে নিয়ে একটি সংবাদ সংক্রমণবেগে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একাধিক প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যম তথা সংবাদপত্র, টেলিভিশন এবং অনলাইন পোর্টালগুলো বেশ গুরুত্বের সাথে সংবাদটি প্রচার করেছে। যার সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে রীতিমত ভীমড়ি খেতে হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনপ্রিয়তাহীন, সামাজিক ও সেচ্ছাসেবী কর্মকান্ডে তুলনামুলক ভাবে অপ্রতিষ্ঠিত একটি ওয়েবসাইটে দাতাসদস্য হিসেবে অনুদান প্রদান করে জাতিসংঘ সদরদপ্তরের হলরুমে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে ইন্সটিটিউট অব পাবলিক পলিসি এন্ড ডিপ্লোমেসী রিসার্চ নামক প্রতিষ্ঠান থেকে ‘গ্লোবাল পীস এম্বেসেডর’ হিসেবে পুরস্কৃত হন জায়েদ খান।

উল্লেখ্য, জায়েদ খানকে দেয়া ক্রেস্ট এবং সার্টিফিকেটের কোথাও অফিসিয়ালি জাতিসংঘের লোগে না থাকা এমনকি অনুষ্ঠানের আয়োজক হিসেবে জাতিসংঘের অংশিদারিত্ব না থাকলেও আজ সকালে জায়েদ খানের ফেইসবুক পোষ্টে সদরদপ্তরের অভ্যান্তরে তোলা একটি ছবিকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে যাচ্ছে।

বার্তা বাজারের অনুসন্ধানে আয়োজক প্রতিষ্ঠান এবং প্রদত্ত উপহারের বিস্তারিত খুজতে গিয়ে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের একটি পেশাদার প্রশিক্ষক দলের উদ্দ্যেগে বিগত ২০শে সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে https://ippdr.org/ নামে একটি ডোমেইন রেজিষ্ট্রেশন করা হয়। যার বিস্তারিত ঘেটে দেখা যায়, কেবল মাত্র কিছু বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অলাভজনক শর্তে প্রতিষ্ঠানটি গতবছরই দাফতরিক কার্যক্রম শুরু করে। বৈশ্বিকভাবে পৃথিবীর যে কোন দেশে ছড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের মাঝে অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার মতো গুরত্বপূর্ন বিষয় অনলাইন এবং অফলাইনের মাধ্যমে, স্বল্প মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্স ছাড়াও বিভিন্ন মেয়াদের ফাউন্ডেশন কোর্স করিয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানটি।

নিজেদের বানিজ্যিক বাজারিকরনের উদ্দেশ্যে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ইতিপূর্বের এক অনুষ্ঠানে তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জোবাইডেন সহ উল্ল্যেখ যোগ্য বেশ কিছু ব্যক্তিকে লাইফটাইম এওয়ার্ড প্রদান করেছেন। যদিও অফিসিয়ালী হোয়াইটহাউজ তাদের নিকট থেকে পুরস্কারটি গ্রহন করেছে এমন নির্ভর যোগ্য তথ্য এখনো পাওয়া যায় নি।

দেশের নির্ভরযোগ্য কিছু সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, তিনি জাতিসংঘ সদরদপ্তরে শান্তিদূত হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন। উল্ল্যেখ যোগ্যভাবে খোঁজাখুজি করেও ‘ইন্সটিটিউট অব পাবলিক পলিসি এন্ড ডিপ্লোমেসী রিসার্চ’ নামক প্রতিষ্ঠান জাতিসংঘের ভোলেন্টিয়ারী কিংবা এসোসিয়েট তালিকায় খুঁজে পাওয়া যায় নি। সেক্ষেত্রে দেশে প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে একাধিক গণমাধ্যমে যোগাযোগ করে, প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তি খুঁজেও নির্ভরযোগ্য কোন সদুত্তোর পাওয়া যায় নি।

ইতিপূর্বে একই ভাবে বিগত ২০২১ সালের ১০ এপ্রিল নামসর্বস্ব একটি ভূঁইভোড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করা হয় মানিকগঞ্জ জেলার সাংসদ ও কন্ঠ শিল্পী মমতাজ বেগমকে। যার দরূন তীব্র ভাবে বেশ কিছুদিন সমালোচনার মধ্য দিয়েও যেতে হয়েছিলো তাকে।

বার্তা বাজারের পক্ষ থেকে আয়োজক প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার ই-মেইল এবং জায়েদ খানকে মুঠো ফোনে সংযুক্ত করার চেষ্টা করা হলেও এখনো পর্যন্ত কারো সঙ্গেই যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।

একাধিক গণমাধ্যমকর্মী এবং জ্যেষ্ঠ সাংস্কৃতিক সূধীজনের মতে, পুরস্কার গ্রহনের পূর্বে প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অধিকতর জানা শোনা এবং পুরস্কার গ্রহনের ক্ষেত্রে এর কারন বিশ্লেষন করা জরুরী। অপ্রয়োজনীয় পুরস্কার অর্জন এবং অলীক খ্যাতির আকাঙ্খা সুনামের পরিবর্তে দূর্নামের কারন হয় মর্মেও উল্ল্যেখ করেন সূধীজনেরা।

 

ই.এক্স.ওআর/বার্তা বাজার