ই-লার্নিং শিক্ষার এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। এই ব্যবস্থা মানুষের শ্রম যেমন লাঘব করেছে, তেমনি বহুগুণে সাশ্রয় ঘটিয়েছে সময় ও অর্থের। আমাদের দেশেও ই-লার্নিং বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বর্তমানে ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে নানা দক্ষতা অর্জন করা যাচ্ছে বিভিন্ন ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মে। সম্ভাবনাময় এ সেক্টরে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে ‘কোটর্ড লিমিটেড’। তরুণদের সচ্ছল করার পরিকল্পনায় কাজ করে যাচ্ছেন মোঃ আফতাব উদ্দিন ও তার এই প্রতিষ্ঠান।

নতুন ই লার্নিং প্ল্যাটফর্ম শুরুর গল্পটা কেমন?

ছোটবেলা থেকেই আমার একটি স্বপ্ন, আমি হ্যাকার এবং ইঞ্জিনিয়ার হবো। হ্যাকিং নিয়ে বিভিন্ন ট্রিকস শিখতাম তখন। ছোট বয়সেই বুঝে ফেললাম হ্যাকিংয়ের জন্য আগে প্রোগ্রামিং শিখতে হবে। অনলাইনে বা সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে যতটুকু সুযোগ পেতাম, চেষ্টা করতাম। আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি; সেই সময়েই আমি আমার নিজের কোম্পানি কোটর্ড লিমিটেড শুরু করি। তখন আমার প্রবণতা আসে মোবাইল অ্যাপ নিয়ে। আমি বিভিন্ন প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় যোগ দিতাম। দেশে-বিদেশে অনেক ক্লায়েন্ট যুক্ত হয়। নাজেরিক ডিজিটাল, যা বাংলাদেশি নেটিজেনদের বাঁচিয়েছে। হয়রানি প্রতিরোধে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে বেশ কিছু উদ্যোগ রয়েছে। যা মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম কোটর্ড লিমিটেড এবং সাথের আরো চার কার্যক্রম চালু কেন করলেন?

কোটর্ড লিমিটেড নামে আমার একটি কোম্পানি সেন্টার ছিল। কিন্তু করোনার সময় যখন সবকিছু বন্ধ; তখন ভাবছিলাম কি করা যায়? যেহেতু ছোটবেলা থেকেই প্রশিক্ষক ছিলাম। আমি শেখাতে পছন্দ করি। এই কারণেই আমি লকডাউনের সময় ‘নাজেরিক ডিজিটাল’ নামে একটিসহ উদ্যোগ তৈরি করি, যা মাত্র ৩ মাস আগে চালু হওয়া ডিজিটাল মার্কেটিং-এর উপর ফোকাস করে, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এখন আরও বেশি লোক রয়েছে। আমি কোর্স ফি শুধু নামেই রেখেছি, যাতে নিম্ন আয়ের মানুষও এই কোর্সগুলো করে তাদের দক্ষতা বিকাশ করতে পারে। ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমেও এটি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হয়। আমার স্বপ্ন কোটর্ড লিমিটেড এবং নাজেরিক ডিজিটালের লোকেরা তাদের নিজের পায়ে দাঁড়াবে, কারও উপর নির্ভর না করে নিজের যোগ্যতায় কিছু করবে। এই স্বপ্ন নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি।

কাজের অনুপ্রেরণা পেলেন কীভাবে?

আমার অনুপ্রেরণা আমি। এটা আমার মনে হয় যে কাউকে অনুসরণ করা সাফল্যের চাবিকাঠি নয়। আমি গতকালের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি কিনা, আগের প্রজেক্টের থেকে একটু ভালো করতে পেরেছি কিনা এটাই আমার কাছে মুখ্য বিষয়। বিশেষ করে মানুষের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তনে কোনো অবদান রেখেছি কিনা সেদিকে নজর দিয়েছি।
মানুষের জীবনমানের কোনো পরিবর্তনের জন্য আমি কোনো অবদান রাখলাম কি না আমি সেটাতেই ফোকাস করি।

উদ্যোক্তা জীবনে পরিবারের ভূমিকা?

আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আমার বাবা-মা এবং পরিবার সবসময় আমাকে সমর্থন করে। যদি আমি বলি যে এটি আমার প্রয়োজন তাই তারা বলেছিল ঠিক আছে। আমি কোন গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছাড়া বাড়ি থেকে টাকা নিইনি। কিন্তু বাড়ি থেকে আমাকে যথেষ্ট ছাড় দিয়েছে। কারণ প্রোগ্রামিং অ্যাপ ডেভেলপমেন্টে অনেক সময় ব্যয় করা হয়েছে; রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়েছে। আমার এখনো মনে আছে, আমি যখন অফিসে ছিলাম না; তখন খুব অল্প বয়সে। এ সময় তারা বেশ চিন্তিত ছিলেন। কিন্তু তারা আমাকে বিশ্বাস করেছিল। তারা আমাকে বিশ্বাস করে এটাই আমার জন্য একটি বড় সমর্থন।

বাংলাদেশি ই-লার্নিং প্লাটফর্ম গুলোকে কী পরামর্শ দেবেন?

সবার আগে সেবার দিকে নজর দেয়া জরুরি। যাতে কোনো প্রশিক্ষণ পর্যাপ্ত হয়, যাতে মানুষ উপকৃত হয়। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে মানুষ যাতে সেবা নিয়ে দ্বিধা না করে। ই-লার্নিং-এ পাইরেসি রিরূপ প্রভাব ফেলেছে। ই-লার্নিং ভবিষ্যতে বাংলাদেশে একটি খুব বড় শিল্প হতে যাচ্ছে। কিন্তু পাইরেসি নিয়ে ঠিকমতো কাজ হচ্ছে না। সম্ভাবনাময় এ খাতে টিকে থাকতে চাইলে এর কোনো বিকল্প নেই।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা?

দেশীয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষিতে ই-লার্নিং এখন বহুল আলোচিত বিষয়। এ সেক্টরে কাজের যোগ্যতা দিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেকে দেখতে চাই। আমি চাই আমার যেকোনো উদ্যোগ সবার কাজে লাগুক, বিশ্বের মানুষের উপকারে আসুক। আমরা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে কিছু করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।

বার্তাবাজার/এম আই