নাজমুলের শুরুর গল্পটা ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে। হঠাৎ একদিন তার বাবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুক) অ্যাকাউন্ট নষ্ট হয়ে যায়। যেখানে ছিল হাজারো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। অনেক চেষ্টা করি বাবার আইডিটা রিকোভার করার জন্য, কিন্তু ব্যর্থ হই। অ্যাকাউন্ট ফিরে না পাওয়ায় বাবা অনেক সমস্যায় পড়েছিলেন। বাবার চিন্তা ভরা মুখখানির কথা আমার এখনও মনে আছে।

তখনই ভেতরে একটি জেদ ধরে গিয়েছিল। আজ আমার বাবার সঙ্গে এমন হয়েছে কাল অন্যজনের সঙ্গে হতেও পারে। এজন্যই ইচ্ছা জাগে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করার। তারই প্রেরিপেক্ষিতে ২০১৫ সালের দিকে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ শুরু করি। ইউটিউব থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকি। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে ভারতের একটি সাইবার নিরাপত্তা টিমের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাই। সেখানে প্রায় ২০১৯ সাল পর্যন্ত কাজ করি। এরপর কিছুটা দক্ষ হলে ২০২০ সালে নিজেই একটি সাইবার নিরাপত্তা টিম গঠন করি।

আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল মানুষকে সোশ্যাল প্লাটফর্মে সহযোগিতা করা। পাশাপাশি সেখান থেকে যদি কিছু আয় হয় তবে তা দিয়ে গরিব পথচারী ও মসজিদ মাদরাসায় সহযোগিতা করা। ২০২০ সালের শেষের দিকে আমাদের আয় করা ৫০ হাজার টাকা দিয়ে বিভিন্ন মসজিদ ও মাদরাসায় সহযোগিতা করি।

এতক্ষণ এ কথাগুলো বলছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ার সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা নাজমুল হুদা নাঈম। তার জন্ম রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলায়। বর্তমানে সে ভূরঙ্গামারী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্ততি নিচ্ছেন।

শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরের হাজারো সাইবার নানা সমস্যা নিয়ে অনেকে নাজমুল হুদা নাঈমের শরণাপন্ন হন। দেশের নাম করা অভিনেতা অভিনেত্রী, মডেলসহ চলচ্চিত্রের অধিকাংশ মানুষের মুখে এই নাম শোনা যায়।

মোবাইল ফোনে কথা হয় ইউটিউবার জুনায়েদ ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার ইউটিউব চ্যানেলটিতে বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দেয়। এ নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় ছিলাম। পরবর্তীতে নাজমুল হুদার সঙ্গে যোগাযোগ করি। উনাকে সমস্যার কথা বলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সলিউশন পাই। এছাড়া ফেসবুক আইডিতে টেকনিক্যাল সমস্যা দেখার পর উনাকে বলার পর সেটিও খুব দ্রুতই সমাধান করে দেন।

একই সমস্যায় পড়েন রোড রাইডার্স আরআরআর-এর ফাউন্ডার হাসান সেতুও। তিনি বলেন, তার অফিশিয়াল ফেসবুক আইডিটা নষ্ট হওয়ার পর বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় চেষ্টা করি, এমনকি মালোশিয়াতেও চেষ্টা করে আইডি রিকভার করতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে নাজমুল হুদাকে বলার পর মাত্র তিনদিনের মধ্যে আইডিটা রিকভার করে দেন। এতে তিনি অতন্দ্র খুশি হোন

শুধু হাসান সেতু, জুনায়েদ নয় কুঁড়েঘর ব্যান্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক গ্রুপের এডমিন কে এম রাকিব আল হাসানের ফেসবুক আইডি হ্যাক হলে দ্রুত সময়ে নাজমুল সমাধান করে দেন।

সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে নাজমুল হুদা নাঈম জানান, প্রযুক্তির বিশ্ব প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রযুক্তি পণ্যের সুবিধা বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে ডেটা নিরাপত্তার ঝুঁকিও। সবাই আলোর পথে হাঁটছে, সম্ভাবনার পথে। কিন্তু অপরাধ চক্র থেমে নেই। সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছে সরকার, করপোরেট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সব আর্থিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।

তিনি আরও বলেন, ছোটবেলা থেকেই সাইবার সিকিউরিটি ও হ্যাকিং এর প্রতি আমার গভীর আগ্রহ ছিল। আমার ইচ্ছা ও আগ্রহ দেখে অনেকেই হাসাহাসি করতেন। পঞ্চম শ্রেণিতে থাকতে আমি এ কাজ করছি। দেশ ও দেশের বাইরের মানুষের সোশ্যাল মিডিয়ার সমস্যাগুলো অনলাইনের মাধ্যমে সমাধান করে দেই। মাসে যা উপার্জন হয় তা দিয়ে গরির ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। আমি মনে করি, মানুষ মানুষের জন্য।