নীলফামারীর ডিমলায় ভরা যৌবনে চড়া রোগে ভুগছে চলতি বোরো মৌসুমের বিভিন্ন প্রজাতির ধানের চারাগাছ। ব্লাস্ট, গিট ব্লাস্ট ও নেট ব্লাস্টসহ হরেক রকমের রোগ ও বিভিন্ন পোকার উপদ্রবে ধানের গাছ গুলোতে বেড়েই চলেছে রোগব্যাধি। বালাইনাশক ব্যবহার করে করেও পাচ্ছেন না কোন সুফল। আর এমন পরিস্থিতিতে কৃষি অফিসের তদারকি না থাকায় বিপাকে চাষীরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চারা রোপনের পরে তিন প্রজাতির মাজরা পোকা ( হলুদ মাজরাপোকা, কালোমাথার মাজরাপোকা এবং গোলাপি মাজরাপোকা), ব্লাস্ট, গিট ব্লাস্ট ও নেট ব্লাস্ট, ধানের কান্ড ও গুড়িপঁচা, ধানের পাতা ফাস্কোসহ দফায় দফায় ভিন্নভিন্ন রোগব্যধিতে জর্জরিত বোরো ধানের ক্ষেতগুলো। হরেক রকমের রোগ ও বিভিন্ন পোকার উপদ্রব থেকে পরিত্রাণ পেতে কৃষিকর্তাদের পরামর্শ না পেয়ে স্থানীয় কীটনাশক ব্যবসায়ীদের দারস্থ হচ্ছেন চাষীরা। সঠিক রোগনির্ণয় না করে কীটনাশক ব্যবসায়ীরা দিচ্ছেন বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিষেধক। ভুল প্রতিষেধক ব্যবহারে ক্রমশই জমি হারাচ্ছে উর্বরতা অন্যদিকে বার বার বালাইনাশক ব্যবহারে কৃষকদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি খরচ। সেই সাথে বিনষ্ট হচ্ছে বিস্তির্ণ ফসলী জমি। এতে ব্যাহতের শঙ্কা চলতি মৌসুমের ধান উৎপাদন লক্ষ মাত্রা।

গয়াবাড়ী কালীরডাঙ্গা এলাকার মৃত নছির উদ্দীনের ছেলে মোঃ শহিদুল ইসলাম (৩০) বলেন, এক বিঘা হীরা ধানের গাছে ছত্রাক (পাতা ফাস্কোস) আক্রমণে নষ্ট হয়েছে। কৃষি অফিসারদের জানালে তারা ব্যবস্থা নিতে নিতে আমার ধানের গাছ নষ্ট হবে। তাই আমি স্থানীয় এক কীটনাশক বিক্রেতার পরামর্শে প্রতিষেধক ব্যবহার করছি।

বালাপাড়া ইউনিয়নের মধ্যম সুন্দরখাতা মাঝিয়ালীর ডাঙ্গা এলাকার আব্দুল হামিদের পুত্র কৃষক পাষাণ আলী বলেন, আমি ছায় বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের বোরো ধান রোপন করেছি। ধানের চারা রোপনের পর ২-৩ বার বালাইনাশক ব্যবহার করেও সুফল মেলেনি। উল্টো ধানের চারাগাছ গুলো হলুদ বর্ণের ও খাটো হয়ে পাতা মরে যাচ্ছে। দেখে মনে হবে যেনো, ধান গাছগুলো আগুনে পোড়ানো হয়েছে আর দিনকে দিন খড়ে পরিনত হচ্ছে। কিন্তু এই খড় গবাদিপশুকে খাওয়ানো ঠিক হবে না।

একই গ্রামের কৃষক সহিদুল ইসলাম বলেন, কৃষি অফিসের কেউ এ দিকে আসেন না, তাই নামও জানিনা! তার ধানক্ষেতে ঔষধ দেওয়ার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত দুইবার ঔষধ স্প্রে করেছি। তবু পোঁকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাচ্ছি না।

একই এলাকার কৃষক মহিকুল ইসলাম জানান, চারা রোপনের পর ধান গাছগুলো ভালোই ছিলো। কয়েকবার ঔষধ ব্যবহার করেছি। কিন্তু হঠাৎ করে আমার ধানের গাছগুলো খাঁটো হয়ে পাতা খড়ের মত হচ্ছে। এক বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ করতে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। এভাবে পোঁকার আক্রমণ দেখা দিলে ফসল ঘরে তোলার আগেই আমাদের স্বপ্ন গুলো বিলীন হয়ে যাবে।

বালাপাড়া ইউনিয়নের ৮নং ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান বলেন, এ পর্যন্ত কোন কৃষক আমাকে জানায়নি। আপনার মাধ্যমে এই প্রথম জানলাম। যেসকল কৃষকের এরকম ক্ষতি হয়েছে তাদের সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থা করা হবে ।

ডিমলা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. সেকেন্দার আলীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে তার মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও এবিষয়ে বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, নীলফামারীর উপপরিচালক ড.এস.এম. আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস হতে মাঠ পর্যায়ে বোরো ধান চাষে কিভাবে ভাল ফলন পাওয়া যায় সে বিষয়ে পরিচর্যা, রোগ প্রতিকার সম্পর্কে স্থানীয় কৃষকদের পরামর্শ ও লিফলেট বিতরন করা হয়েছে।