ঈদকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সেমাই পল্লীতে চলছে কর্মমুখর ব্যস্ততা। রূপগঞ্জের ভোলাবো ইউনিয়নের চারিতাল্লুক গ্রামের ঘরে ঘরে চলছে সেমাই তৈরির কাজ।

নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-বণিতা সবাই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্যস্ত চাক সেমাই তৈরির কাজে। প্রতিদিন শতাধিক পরিবার দুই’শ মণ থেকে তিন’শ মণ সেমাই তৈরি করে থাকেন।

এসব সেমাই প্যাকেটজাত করে জেলার গন্ডি পেরিয়ে পার্শ্ববর্তি নরসিংদী, গাজীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে বিক্রি করা হয়।

সেমাই বিক্রি করেই চারিতাল্লুক গ্রামের শতাধিক পরিবারের ভাগ্য বদল হয়েছে। সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, রূপগঞ্জ উপজেলার ভোলাবো ইউনিয়নের চারিতাল্লুক গ্রামের ঘরে ঘরে সনাতক পদ্ধতিতে তৈরি হচ্ছে হাতে তৈরি চাক সেমাই।

কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে চাক সেমাই তৈরির ধুম। কেউ সেমাই তৈরির গোলা তৈরি করছে। কেউ রোদে শুকাচ্ছে। আবার কেউবা চুলায় তাপ দিয়ে ভাজছে। কেউ কেউ প্যাকেট করে খাঁচিতে ভরছে।

চারিতাল্লুক গ্রামের হাতে তৈরি সেমাইয়ের খ্যাতি এখন সারা দেশজুড়ে। এখানে প্রতিদিন দুই’শ’ মণ থেকে তিন’শ মণ সেমাই তৈরি হয় যা পাইকারি প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা আর খুচরা বাজারে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়।

সেমাই তৈরির কারিগর কবির মিয়া (৬০) বার্তা বাজারকে বলেন, মেশিনে তৈরি সেমাইতো হগ্‌গলতে খায়। হাতে তৈরি সেমাইয়ের স্বাদই আলাদা। তবে বানাইতে অনেক কষ্ট। ঈদ আইলেই আমগো ব্যবসা অয়। দুই ঈদে যেই পরিমান সেমাই আমরা বিক্রি করি তার লাভের টাহা (টাকা) দিয়াই হারা বছর পরিবার নিয়া চলতে পারি।

নারী কারিগর রেশমা আক্তার (৪২) বার্তা বাজারকে বলেন, দিন-রাইত খাইট্টা লাভ নাই। হেরপরেও বানাই। বিয়া অহনের পর থেইক্যা দেইহ্যা আইতাছি সেমাই বানায় গেরামের সবতে (সবাই)।

শিশু শ্রমিক নুরজাহান (১২) বার্তা বাজারকে বলেন, আম্মা-আব্বার গরমের মইদ্দে রোজা রাইখ্যা কাম করতে কষ্ট হয় আর এহন আমার ইসকুল বন্ধ। হের লেইগ্যা আম্মা-আব্বার লগে কাম করতাছি।

আরেক কারিগর মহাম্মদ খবির (৫৪) বার্তা বাজারকে বলেন, ময়দা, চিনির যেই দাম। সেমাই বানাইয়া, প্যাকেট করা পর্যন্ত অনেক খরচ পইড়া যায়গা।বেইচ্যা হেই লাভ থাহেনা ভাই। তারপরেও করি।

ভোলাবো ইউনিয়নের একাধিক স্থানীয়দের সাথে কথা বলে বার্তা বাজার তারা বলেন, চারিতাল্লুক গ্রামের হাতে তৈরী চাক সেমাইয়ের খ্যাতি এখন সারা দেশজুড়ে এটা একটা ভালো উদ্যোগ। এতে গ্রামের মানুষ স্বাবলম্বী হচ্ছে। পাশাপাশি রূপগঞ্জের তৈরি চাক সেমাইয়ের কদর বাড়ছে। তবে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে তাদের সহযোগিতার হাত বাড়ালে হাতে তৈরী এই মুখরোচক সেমাইটি বৃহৎ আকারে বাণিজ্যিক ভাবে বাজার জাত করতে পারবে।