বছর ঘুরে আবার এসেছে পবিত্র রমজান। রমজানের শেষে রয়েছে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। আর ঈদের আনন্দকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয় নতুন পোশাক। তাই তো ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, মানুষের আনাগোনা বাড়তে থাকে দর্জিদের কাছে। পছন্দমতো পোশাক বানাতে ক্রেতারা ছুটছেন দর্জিদোকানগুলোতে। এবারের ঈদুল ফিতর ঘিরেও এর ব্যতয় ঘটেনি। ঈদকে কেন্দ্র করে নান্দনীক নতুন পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার দর্জি কারিগররা।
ঈদকে সামনে রেখে এখন সেলাই মেশিনের শব্দে মুখর দর্জির দোকানগুলো। নতুন ডিজাইনের পোষাক বানাতে দোকানে দোকানে প্রচুর ভিড়ে দর্জি কারিগরদের দম ফেলার ফুসরত নেই এখন। অবশ্য ব্যস্ততা শুরু হয়েছে রোজার আগে থেকেই। রোজার আগে থেকেই অর্ডার নেওয়া হচ্ছে। এখন আর নতুন করে তেমন কোন অর্ডার নেওয়া হয়না বলে জানিয়েছেন উপজেলার টেইলার্স মালিকরা।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বিকেলে উপজেলা সদর ওছখালী নিউ মার্কেট ও সুপার মার্কেট, চরচেংগা, জাহাজমারা, সাগরিয়া, তমরদ্দি, চৌমুহনী বাজার সহ ইউনিয়ন পর্যায়ের গ্রাাম-গঞ্জের হাট-বাজারের দর্জি দোকানগুলোতে গভীর রাত পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায় সেলাই মেশিনের আওয়াজ। বিভিন্ন টেইলার্সের কারিগরদের এক মুহূর্তের জন্য অবসর নেই। ছোটবড় প্রতিটি দোকানেই সেলাই কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা।

প্রত্যেক কারিগর দিনে প্রকার ভেদে ৫-৬টি অর্ডার করা পোষাক তৈরি করছে। এক সেট থ্রিপিস বানাতে ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, শার্ট বানাতে ২০০-৩০০ টাকা, প্যান্ট বানাতে ৪০০-৫০০ টাকা মজুরি লাগছে। বিভিন্ন মার্কেট ও স্থান ভেদে এসব মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় মজুরি বেশী বলে ক্রেতাদের অভিযোগ থাকলেও চাহিদামতো নতুন পোশাক পেয়ে খুশি তারা।

হাতিয়া সুপার মার্কেটের আরিফা লেডিস ওড়না এন্ড বোরকা হাউজের সত্বাধিকারী আরমান বলেন, কাজের চাপ মোটামুটি ভালোই আছে। শবেবরাতের পর থেকে ক্রেতারা ঈদের পোশাকের অর্ডার দিচ্ছেন। এখনো কিছু অর্ডার নিচ্ছি ২০ রমজানের পর আর অর্ডার নেওয়া সম্ভব হবে না। তবে গত বছররে তুলনায় কাজ কিছুটা কম আছে।
পরিবারের ও বাচ্চাদের জন্য নতুন পোশাক অর্ডার তৈরি করতে আসা উপস্থিত কয়েকজন ক্রেতা বলেন, ছেলেমেয়েদের নতুন পোশাক বানাতে টেইলার্সের কাছে এসেছি। কিন্তু পোশাকের মজুরির যে দাম আমরা তাতে হিমশিম খাচ্ছি। পোশাক ও মজুরির দাম বাড়লেও আমাদের আর আয় বাড়েনি। আমরা যারা নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ আছি তাদের জন্য খুবই সমস্যা।

সোনাদিয়া ইউনিয়নের চর চেঙ্গা রাজারে রাজিয়া বিপনি বিতানের টেইলার্স জসিম উদ্দিন বলেন, আগে আমরা এনালগ সেলাই মেসিনে পায়ে চেপে কাজ করতাম এখন বিদ্যুৎ আসাতে ডিজিটাল মেসিন ব্যবহার করছি। কিন্তু মাঝে মধ্যে বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে কাজ করতে অসুবিধা হয়। সময়মত অর্ডার ডেলিভারি দিতে না পারায় মানুষের কথা শুনতে হয়। আর মজুরি আগে যা ছিলো তাই নিচ্ছি।

হাতিয়া দ্বীপ নিউ মার্কেট ফেমাস টেইলার্স এন্ড ফেব্রিক্সের মালিক রাশেদ উদ্দিন জানান, এক সেট থ্রিপিস বানাতে মজুরি লাগছে ২শত ৫০ থেকে ৪শত ৫০ টাকা পর্যন্ত। শার্ট বানাতে মজুরি লাগছে, ২ শত থেকে ৫শত টাকা, প্যান্ট বানাতে মজুরি লাগছে ৪শত থেকে ৫শত টাকা। বিভিন্ন মার্কেট ও স্থান ভেদে এসব মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। মেয়েদের জামা বানানোর মজুরি একটু বেশী নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে সিল্ক জর্জেট, কাতান, লিলেন, বেনারসি কাপড়ের মজুরি কিছুটা বেশি নিতে হচ্ছে।