ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় গভীররাতে হঠাৎ প্রবল ঘূর্ণিঝড় ও ভয়াবহ শিলাবৃষ্টিতে তছনছ হয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। এতে শতাধিক বসতঘর বিধ্বস্ত এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘর চাপা পড়ে আহতও হয়েছেন কয়েকজন গ্রামবাসী৷

বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে উপজেলার বুড়াইচ, বানা ও পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।

এলাকাবাসী ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তারাবির নামাজ ও রাতের খাবার শেষে ঘুমিয়ে পড়েন গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ। রাত ১টার দিকে হঠাৎ শুরু হয় প্রবল ঝড়ো হাওয়া ও ব্যাপক শিলাবৃষ্টি। মাত্র ২-৩ মিনিটের ব্যবধানে উপজেলার বুড়াইচ ইউনিয়নের পাকুড়িয়া, জয়দেবপুর, শিয়ালদি, পানিগাতি, বিলপুটিয়া, বানা ইউনিয়নের শিরগ্রাম, গড়ানিয়া, টাবনি, টোনাপাড়া, টোনারচর, পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের যোগিবরাট, ভাটপাড়াসহ ১৫টি গ্রামের শতাধিক বাড়িঘর লন্ডভন্ড হয়ে যায়। এসব বাড়িঘরের কেউ চোখের সামনে দেখতে পান; ঘরের ছাউনি উড়ে চলে যাচ্ছে৷ ঝড়ের সঙ্গে সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বিদ্যুত্‍ সংযোগ৷ ঝড়ের দাপটে অসংখ্য বড় বড় গাছ ভেঙে পড়েছে৷ সেগুলি গিয়ে পড়েছে বিদ্যুতের তারে৷ ফলে তার ছিড়ে একাকার৷ অপরদিকে অতিরিক্ত শিলাবৃষ্টিতে বসত-ঘরের টিনের চালা ছিদ্র হয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ে ছোট-বড় শিলা। এর সঙ্গে ছিল বৃষ্টির পানিও। আতকে উঠেন ঘুমন্ত মানুষ। মুহূর্তের মধ্যে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে বাড়িঘর, ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। এদিকে আম, কাঁঠাল, লিচু, কলাগাছসহ মৌসুমি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ অবস্থায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন গ্রামের পর গ্রামের মানুষ। অর্ধশত পরিবার সহায়সম্বল হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন।


ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পাকুড়িয়া এলাকার হারুন মোল্যা জানান, ‘গভীররাতে ঝড়ে ঘরের চাল ভেঙে তার নিচে আমরা চাপা পড়ি। এতে আমার স্ত্রী ও ৮ বছরের নাতি গুরুতর আহত হয়েছে।’

রবিউল ইসলাম নামে অপর এক ক্ষতিগ্রস্ত জানান, ‘রাতে ঘুমিয়ে আছি। হঠাৎ ঝড়ে আমাদের ঘরের চাল উড়িয়ে নিয়ে যায়। এতে ঘরের সব মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে।’

জয়দেবপুর এলাকার পারুল বেগম নামে এক গৃহিণী জানান, ‘ভয়াবহ শিলাবৃষ্টি হয়েছে। মাটিতে শিলার স্তূপ জমে গিয়েছিল। এরকম শিলা বৃষ্টি এর আগে কখনো দেখি নাই।’

বুড়াইচ ইউনিয়নের পাঁকুড়িয়া এলাকার ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমার এলাকার প্রায় ৩০টি বাড়িঘরসহ কয়েকটি দোকানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অসংখ্য গাছপালা উপড়ে পড়েছে।’

পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. গিয়াস উদ্দিন শেখ জানান, ‘অতিরিক্ত শিলাবৃষ্টিতে কিছু কিছু গ্রামে ঘরের টিনের চাল ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। এছাড়াও গ্রামের পর গ্রামের মাঠের ফসল নষ্ট হয়ে কৃষকের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’

পল্লী বিদ্যুত সমিতির আলফাডাঙ্গা সাব জোনাল অফিসের এজিএম ফাহিম হাসান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সেখানে কয়েকটি গ্রামে বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুতের তার ছিড়ে গেছে, কয়েকটি খুঁটি ভেঙ্গে পড়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে কাজ চলছে।’

আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমীন ইয়াছমীন বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে কয়েকটি এলাকার বেশিকিছু বাড়িঘর ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থদের নামের তালিকা তৈরী করা হবে। সরকার ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে আছে। যাদের জরুরি সহায়তার প্রয়োজন তাদের জরুরি সহায়তা প্রদান করা হবে। যাদের দীর্ঘমেয়াদি সহায়তার প্রয়োজন আমরা সেই বিষয়টিও বিবেচনায় রাখবো।’