আগেই কথা ছিল ভাগনি মারিয়া আক্তারের এসএসসি পরীক্ষার পর ভৈরবে মামা কনস্টেবল সোহেল রানার বাসায় বেড়াতে যাবেন। পরীক্ষার শেষ হওয়ায় সোহেল রানা নিজেই গ্রামের বাড়িতে এসে মারিয়াকে নিয়ে যান।

শুক্রবার (২৩ মার্চ) দুপুরে সোহেল তার স্ত্রী, দুই সন্তান ও ভাগনিকে নিয়ে মেঘনা নদীতে ট্রলারে করে ঘুরতে যান। ফেরার পথে সন্ধ্যা ৬টার দিকে মেঘনা নদীতে বাল্কহেডের ধাক্কায় ট্রলার ডুবে নিখোঁজ রয়েছেন কনস্টেবল সোহেল রানা, তার স্ত্রী মৌসুমী আক্তার, মেয়ে মাহমুদা আক্তার ইভা, ৩ বছরের ছেলে রাইসুল ইসলাম। এ সময় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান ভাগনি মারিয়া আক্তার।

নিখোঁজ কনস্টেবল সোহেল রানা (৩২) কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার পূর্ব ফতেহাবাদ গ্রামের আবদুল আলিমের ছেলে। তিনি ভৈরব হাইওয়ে থানায় পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি করতেন।

শনিবার দুপুরে সোহেল রানার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় হৃদয় বিদারক দৃশ্য। একই পরিবারের ৪ জনের মৃত্যুতে শোকে কাতর পরিবারের সদস্যরা। বাড়িতে সোহেল রানার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী রুমি আক্তার বার বার চিৎকার করছেন। শোকে স্তব্ধ পুরো গ্রাম। শত শত লোকজন ভিড় করছেন সোহেল রানার বাড়িতে। বাড়ির স্বজনরা একটু পর পর ফোন করে খোঁজ নিচ্ছেন লাশ পাওয়া গেছে কিনা।

সোহেল রানার চাচাতো ভাই ইমরান হোসেন বলেন, গত শনিবার বাড়িতে এসে ভাগনি মারিয়াকে নিয়ে ভৈরবে বেড়াতে যান সোহেল নিজেই। ভাগনির অনুরোধে শুক্রবার দুপুরে সোহেল তার স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে মেঘনা নদীতে ট্রলারে করে ঘুরতে যান। ট্রলারে আরও পর্যটক ছিল। পরে কেউ একজন ছবি তোলার জন্য ট্রলারের মাঝিকে অনুরোধ করলে মাঝি তার হাতের বৈঠা ছেড়ে ছবি তুলে দিচ্ছিলেন। এ সময় ট্রলারটি কিছুটা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। তখন বিপরীত দিক থেকে আসা বালুবাহী একটি বাল্কহেড ট্রলারটিকে ধাক্কা দিলে সেটি উল্টে যায়। তাদের লাশ এখনো পর্যন্ত সন্ধান পাওয়া যায়নি।

ফতেহাবাদ গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য সাদেক মেম্বার বলেন, খবর পেয়ে আমিসহ সোহেলের বাবা মা ও আত্মীয় স্বজনরা ভৈরবে ছুটে যাই। সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা যায়। ছেলে ও নাতি-নাতনিকে হারিয়ে সোহেলের বাবা মা বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন। শনিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত কারও লাশ পাওয়া যায়নি বলে জানতে পেরেছি। বাড়িতে যারা আছে সবাই শোকে পাথর হয়ে গেছে।