জলবায়ু পরিবর্তনের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত নোয়াখালীর উপকূলীয় উপজেলা হাতিয়া পরিদর্শন করলেন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) শুভেচ্ছা দূত ও সুইডেনের প্রিন্সেস ক্রাউন ভিক্টোরিয়া। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝুঁকিতে থাকা মানুষের অনুভূতি শুনে ও তাদের জীবন-জীবিকা অবলোকন শেষে দ্বীপের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের আশ্বাস প্রদান করেন তিনি।

বুধবার (২০ মার্চ) সকালে চট্টগ্রাম বিমান বাহিনী ঘাঁটি থেকে হেলিকপ্টারে উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের পশ্চিম বড়দেইল এলাকায় নির্ধারিত হেলিপ্যাডে অবতরণ করলে তাকে হেলিপ্যাডে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী ও সাবেক সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস। এ সময় তিনি আকাশ থেকে দৃষ্ট দৃশ্য হাতিয়া দ্বীপের সবুজ ফসলের মাঠ, দ্বীপের অভয়ারণ্য, ইউএনডিপির চলমান প্রকল্প এবং ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের জীবনযাত্রা অবলোকন করেন।

প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া একই ইউনিয়নে নতুন সুইচ বাজার এলাকায় কালিরচর গুচ্ছগ্রামে ইউএনডিপির অর্থায়নে এবং বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন পরিচালিত প্রকল্পের আওতায় উপকারভোগী পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশগ্রহণ করেন। পরে একটি উপভোগী পরিবারের সদস্যের ঘর পরিদর্শন করেন। এ সময় তিন জন জেলের সঙ্গে তিনি প্রশ্নের মাধ্যমে তাদের জীবনমান বিষয়ে জানার চেষ্টা করেন।

এরপর প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া একই ইউনিয়নের নলচিরা সরকারি প্রাথমিক স্কুল কাম সাইক্লোন সেল্টারে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টের মাধ্যমে হাতিয়া দ্বীপের মানুষের জলবায়ু সহনশীল জীবিকায়নের চিত্র এবং সামুদ্রিক ঝড় জলোচ্ছ্বাসের আগাম সতর্কবার্তা গ্রহণ ও দ্বীপের মানুষের এ বিষয়ে প্রস্তুতি বিষয়ক একটি পরিবেশনা উপভোগ করেন।

সবশেষে রাজকন্যা ভিক্টোরিয়া কালিরচর গ্রামে নলচিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। আশ্রয়কেন্দ্রে পূর্বেই অবস্থান করা জেলে, কামার, কৃষক, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুরাইয়া আক্তার লাকী, নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মোহাম্মদ ইব্রাহীমসহ, পৌর মেয়র কে এম ওবায়েদ উল্যাহসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, সুইডেনের প্রিন্সেস ক্রাউন ভিক্টোরিয়া খুবই সন্তুষ্ট হয়েছেন। তিনি হাতিয়ার কথা মনে রাখবেন। জেলেদের জীবনযাত্রার কথা তিনি শুনেছেন। বিভিন্ন দুর্যোগের সময় কী হয় তার একটি ডেমো তিনি দেখেছেন। সবশেষে তিনি হাতিয়ার মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নে কাজ করবেন বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

পরে সকাল ১০টার সময় হেলিকপ্টার যোগে তিনি ভাসানচরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে ১০টা ১৫ মিনিটের দিকে ভাসানচর অবতরণ করেন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) শুভেচ্ছাদূত সুইডেনের প্রিন্সেস ক্রাউন ভিক্টোরিয়া। সেখানে পুরো এক ঘণ্টা স্কুল ও ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল পরিদর্শন এবং হাসপাতালের চলমান সেবা সমূহ নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন। হাতিয়ার ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের অতিরিক্ত কমিশনার (ভাসানচর) মাহফুজার রহমান জানান, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) শুভেচ্ছাদূত সুইডেনের প্রিন্সেস ক্রাউন ভিক্টোরিয়া ভাসানচরে নেমে কীভাবে রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয় এবং কীভাবে শিক্ষা দেওয়া হয় তার বিস্তারিত জেনেছেন। প্রায় এক ঘণ্টা তিনি এই দুইটি স্থান পরিদর্শন করেছেন। এর বাহিরে আরও কোথাও তিনি যাননি। তবে আমাদের নৌ এম্বুল্যান্স নেই। সেটি দ্রুত পাওয়ার কথা রয়েছে। সবশেষ তিনি রোহিঙ্গাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ও চিকিৎসা সেবায় সন্তুষ্ট হয়েছেন।