ঢাকার সাভারে কর্মরত জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের নিজস্ব প্রতিবেদক মতিউর রহমান ভান্ডারীর পুত্রকে হত্যা চেষ্টার মামলায় মূল হোতা সহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক সুদীপ কুমার গোপ।

গণমাধ্যমকে তিনি জানান, সাংবাদিক পুত্রের উপর হামলার ঘটনায় জড়িত সাভার পৌরসভার ডগরমোড়া মডেল কলেজ রোড এলাকার মোঃ মোস্তফার ছেলে ও কিশোর গ্যাং “ভাই-ব্রাদার” গ্রুপের প্রধান মোঃ লতিফ ওরফে লেট লতিফ (২১) সহ গ্রুপের সক্রিয় ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলেন, শাহীবাগ চৌরাস্তা এলাকার মোঃ ইয়াসিন খানের ছেলে আনোয়ার হোসেন ওরফে সোহান খান (১৬), চাপাইন-সিআরপি এলাকার মোঃ মাসুদ প্রধানের ছেলে মোঃ ছাদিক হাসান মুনতাসির (১৫), শাহীবাগ এলাকার মোঃ আব্দুল্লাহ’র ছেলে সিরাজুল ইসলাম (১৯)। বাকিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এর আগে, গতকাল রোববার (১৭ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা আরিচা মহাসড়কের রেডিও কলোনি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সংঘটিত ওই হামলায় দৈনিক যুগান্তরের নিজস্ব প্রতিবেদক মতিউর রহমান ভান্ডারীর পুত্র জিসান প্রামাণিক (১৫) ও সদর ইউনিয়নের কলমা এলাকার কামরুল হোসেনের পুত্র সিয়াম রাজা (১৫) গুরুতর আহত হন। হামলার শিকার ওই দুই শিক্ষার্থীকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, আহত জিসান প্রামাণিক বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি) স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আর সিয়াম রাজা কলমা ওয়াজ আলী মডেল স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। অপরদিকে, হামলাকারীরা সবাই কিশোর গ্যাং ‘ভাই-ব্রাদার’ গ্রুপের সদস্য বলে জানা গেছে।

জানা যায়, কিশোর গ্যাং ‘ভাই-ব্রাদার’ গ্রুপের প্রধান মোঃ লতিফ ওরফে লেট লতিফ স্কুল শিক্ষার্থী জিসান প্রামাণিককে তার অনুসারী হওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। বখাটে লতিফের কথা না শুনায় চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি বিপিএটিসি স্কুল কর্তৃপক্ষের আয়োজিত বার্ষিক বনভোজনের সময় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দ্বন্দ্বের জের ধরে কিশোর গ্যাং লিডারের নেতৃত্বে জিসানসহ দুইজনকে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায় হামলাকারীরা।

আহত জিসানের বাবা সাংবাদিক মতিউর রহমান বলেন, প্রায় এক মাস আগে গাজীপুরের সাফারি পার্কে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক বনভোজনে গিয়েছিলো বিপিএটিসি স্কুল কর্তৃপক্ষ। সেসময় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সাথে বাসে ওঠা নিয়ে ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়ে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। পরে উপস্থিত শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে বিষয়টি সাময়িকভাবে মিমাংসা করা হয়৷ বিষয়টি জানার পর আমি বিপিএটিসি স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করার পাশাপাশি পরবর্তীতে যেন আর কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাই।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, রবিবার (১৭ মার্চ) সন্ধ্যায় আহত স্কুল শিক্ষার্থী জিসানকে তার বন্ধু সিয়ামের মাধ্যমে সাভার সদর ইউনিয়নের কলমা এলাকার নিজ বাড়ি থেকে সাভার পৌরসভার রেডিও কলোনি এলাকায় মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে অতর্কিত হত্যা চেষ্টা করে কিশোর গ্যাং ‘ভাই-ব্রাদার’ গ্রুপের প্রধান মোঃ লতিফ ওরফে লেট লতিফের নেতৃত্বে প্রায় ১৯ জন কিশোর গ্যাং সদস্য। এঘটনায় বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে সিয়াম রাজাও গ্যাং প্রধান লেট লতিফের দ্বারা ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়। তাদের উদ্ধার করে প্রথমে সাভার সুপার মেডিকেলে নিলে পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকদের পরামর্শে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দ্রুত ভর্তি করে স্থানীয়রা। আহত দুই শিক্ষার্থীর একাধিক স্থানে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আকবর আলী খান পিপিএম বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনার ৫ ঘণ্টার মধ্যে মূল হোতা সহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে প্রাপ্তবয়স্ক দুইজনকে দুই দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তদন্তে আরো যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।