রাজধানীর বেইলি রোড ট্র্যাজিডিতে অকালে ঝরে পড়া শুল্ক কর্মকর্তা শাহ জালাল ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (০৩ মার্চ) সকাল ১১ টায় কক্সবাজারের মরিচ্যা মুক্তিযোদ্ধা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে শোকার্ত মানুষের ঢল নামে।
জানাজা পূর্বে তাঁদের আলোকিত জীবন নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি, উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ শামিম হোসেন, উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরী, নিহত শাহ জালালের পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা  ডাঃ আবুল কাশেম, উখিয়া  উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, ঝিলংজা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান, হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস ও মরহুমের শাহ জালালের বড় ভাই  হলদিয়া পালং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সাজু সহ স্থানীয় আওয়ামী, জনপ্রতিনিধি ও পরিবারের সদস্যরা।
জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে চির শায়িত করা শুল্ক কর্মকর্তা শাহ জালাল, তাঁর স্ত্রী মেহেরুন নিসা ও তাঁদের একমাত্র আদরের মেয়ে ফাইরুজ কাশেম জামিরাকে।
এর আগে সকাল থেকে দূর-দূরান্ত থেকে তাঁদের এক নজরে দেখতে ছুটে আসেন হাজারো মানুষ। মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স ঘিরে চলে স্বজনদের আহাজারি। চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি সাধারণ মানুষও। সবার বুকে ছিল পাহাড়সম পাথর। ব্যথিত হৃদয়ে ক্ষণজন্মা শাহ জালাল ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানকে চির বিদায় দেন সবাই। এসময় সবার কণ্ঠে ধ্বনিত হয়, এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। আর যেন কোন বাবা-মায়ের কোল খালি না হয়। সরকারকে এ নিয়ে গভীরভাবে ভাবা উচিত।
শুল্ক কর্মকর্তা শাহজালাল উদ্দিন (৩৭)। স্ত্রী মেহেরুন নিসা (২৪) ও একমাত্র মেয়ে ফাইরুজ কাশেম জামিরাকে (৪) নিয়ে থাকতেন ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কাস্টম কোয়ার্টারে। কক্সবাজারে বাড়িতে আসার জন্য দুদিনের ছুটি নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন। বাড়ির পথে রওনা হওয়ার আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে স্ত্রী–সন্তানকে নিয়ে তিনি রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের একটি রেস্তোরাঁয় যান। আগুনে পুড়ে সেখানেই তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এতে জীবিত অবস্থায় আর ফেরা হলো না আপন নিবাস কক্সবাজারে। স্ত্রী–সন্তানসহ নিথর দেহে কক্সবাজারে ফিরেছেন তিনি।
গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শাহজালালের স্ত্রী মেহেরুন নিসার রামুর গ্রামের বাড়ি ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নে পৌঁছায় তাদের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স। তাদের মরদেহ কক্সবাজার পৌঁছার পর সৃষ্টি হয় হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি। স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়। ওই রাত সাড়ে ১১টায় অনুষ্ঠিত হয় প্রথম জানাজা। এরপর মরদেহ নেওয়া হয় শাহজালালের গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের হলদিয়াপালংয়ে। রোববার সকাল ১১ টায় মরিচ্যা মুক্তিযোদ্ধা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে শায়িত করা হয় তাদের।
এদিকে ছেলে শাহজালালসহ আদরের নাতনি ও পূত্রবধূকে হারিয়ে বাবা আবুল কাশেম এখন অনেকটাই বাকরুদ্ধ। যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর অত্যাচার সহ্য করা এই বীর মুক্তিযোদ্ধা এখন ছেলের শোকে কাতর। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।