‘জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না’ এমন সরকারি নির্দেশ থাকলেও শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ফসলি কৃষি জমিগুলো পরিণত করা হচ্ছে গভীর পুকুরে। অপরিকল্পিতভাবে গত একমাসে উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে হাজার, হাজার বিঘা ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে ।

(এক্সক্যাভেটর ভেকু) দিয়ে মাটি কেটে ইটভাটাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে একদিকে জমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে, অন্যদিকে বিনাশ হচ্ছে ফসলি জমি। কমছে ফসলি জমির পরিমাণও। এছাড়া উঁচু জমি গর্তে পরিণত হওয়ায় সেচ কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।

কৃষকরা পুকুর খনন বন্ধের দাবিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে একাধিক বার। কিন্তু এরপরও কোনো সুরাহা মিলছে না।

অভিযোগ উঠেছে, পুকুর খননে গোসাইরহাট উপজেলায় অন্তত শতাধিক দালালচক্র কাজ করছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করে দালালদের মাধ্যমে অবৈধভাবে এসব পুকুর খনন করা হচ্ছে। এতে সাধারণ কৃষকরা তাদের কাছে পুরোপুরিভাবে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এমনকী পুকুর খনন করতে জমি ইজারা না দিতে চাইলে জমির মালিকদের ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে এখন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, গত ৫ বছরে উপজেলায় প্রায় দুই হাজার হেক্টর ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। এভাবে পুকুর খনন চলতে থাকলে উপজেলার আবাদি জমি আশঙ্কাজনক হারে কমবে।

এক শ্রেণির দালালচক্র কৃষকদের অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে ৮-১০ বছরের জন্য পুকুর খননের কাজে জমি ইজারা নিচ্ছেন। আবার ইজারা দিতে না চাইলে জমির মালিকদের ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। রাজি না হলে জোর করে রাতারাতি পুকুর খনন করা হচ্ছে। ফলে কৃষকরা নিরুপায় হয়ে পড়েছেন। বারবার অভিযোগ জানালেও প্রশাসন নির্বিকার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার কোদালপুর ইউনিয়ন ৪ নং ওয়ার্ড পুরাতন লঞ্চ ঘাট এর পশ্চিম পাশে ৩ একর কৃষি জমিতে মরিচ, কলাই, মুশুড়ি আবাদ করা হয়েছে। কিন্তু আবাদ কৃত ফসল না কেটেই সেখানে গত ১০ দিন ধরে পুকুর খনন করছেন একটি প্রভাবশালী মহল। খবর পেয়ে গোসাইরহাট উপজেলা প্রশাসন এসে এক্সকাভেটর দুটি জব্দ করে। কিন্তু দিনভর নানা নাটকীয়তার পর রাতে আবারও খনন শুরু হয়। প্রশাসন কোনপ্রকার ব্যবস্থা না নেওয়ায়। এতে হতভম্ব হয়ে যায় স্থানীয়রা। এছাড়াও কুচাইপট্টি ইউনিয়ন ১ নং ওয়ার্ড বাজারের পিছনে, আওয়ালালপুর ইউনিয়ন ৭ নং ওয়ার্ড খাল পাড়েও চলছে পুকুর খনন।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, একের পর এক খনন করা পুকুরে গিলে খাচ্ছে ফসলি জমি। অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খননের কারণে বর্ষা মৌসুমে বন্যার পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে বাড়ে জনদুর্ভোগ।

কৃষকদের অভিযোগ, নানাভাবে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলছে এসব পুকুর খনন কাজ। গোসাইরহাট উপজেলা প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা পুকুর খননে বিঘাপতি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পুকুর খননের সুযোগ করে দিচ্ছে।

কোদালপুর ইউনিয়নের কৃষক মতিন মিয়া বলেন, অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করায় আমরা আর কৃষি কাজ করতে পারবো না। আমি অবাক হয়েগেছি প্রশাসন এসে বন্ধ করে দিলো কিন্তু রাত না পেরোতেই আবার কাজ শুরু করে দিসে! এই জন্যই মানুষ বলে টাকা হলে সবই করা যায়।

এবিষয়ে খামার মালিক আজিজুল সিকদার বলেন, আমরা এখানে মাছের খামার করবো। আমার এখানে উপজেলা থেকে লোক আসসিলো তিনি বন্ধ করে দিয়ে গেছে। আমি তাদের সাথে মিমাংসা করে আসসি। এখন আমার কাজ করতে কোন বাঁধা নেই। আপনি ইউএনও স্যারের সাথে গিয়ে কথা বলেন।

এবিষয়ে গোসাইরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: শাহাবুদ্দিন বলেন, কৃষি জমি সুরক্ষায় আইন আছে। তবে শ্রেণি পরিবর্তন করে পুকুর খনন করা যাবে না। পুকুর খনন বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। না হলে অচিরেই এই উপজেলার খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে।

তবে বিষয়টি মানতে নারাজ উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুবিতা সরকার তিনি বলেন, পুকুর খনন বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। গত সপ্তাহেও ওখানে অভিযানে করা হয়েছে। এখন খনন হচ্ছে কি না আমি জেনে আপনাকে জানাচ্ছি।

শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ফসলি জমিতে পুকুর খননের ওপর সরকারের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। কেউ ফসলি জমিতে পুকুর খনন করলে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।