ভরা পর্যটন মৌসুমে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে বেওয়ারিশ কুকুরের অত্যাচারে অতিষ্ট জনজীবন। প্রতিদিন কেউ না কেউ কুকুরের কামড়ে শিকার হচ্ছে। কুকুরের উপদ্রপে পর্যটক এবং শিশুরাতো দুরের কথা প্রাপ্ত বয়স্করাও ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন। এখন হাতে লাটিই একমাত্র ভরসা।

৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সেন্টমার্টিন দ্বীপে লোক সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। আর ভরা পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন দ্বীপে অন্তত ৫ হাজার পর্যটকের বাড়তি চাপ থাকে।

কটেজ মালিকদের সহায়তায় কয়েকজন পর্যটকের সাথে মুটো ফোনে কথা বলে জানাগেছে, সেন্টমার্টিন দ্বীপ এখন কুকুরের উপদ্রপে ভ্রমন অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য একেবারেই অনিরাপদ। শিশুদের হাতে খাবার দেখলেই তেড়ে আসে কুকুরের পাল। সন্ধ্যার পরে একটু অন্ধকার হলেই হোটেল থেকে কুকুরের ভয়ে বের হওয়া যায়না। সবমিলিয়ে যেনো কুকুরের দ্বীপে অসহায় মানুষ এমন পরিস্থিতি।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাগেছে- দ্বীপের কুকুর গুলো বেপরোয়া হয়ে উঠার মূল কারন হচ্ছে খাদ্যের অভাব। ছোট্ট দ্বীপে এমন ভাবে কুকুর বেড়েছে খাদ্যের অভাবে পাগলে হয়ে ঘুরছে। সামনে যাকে পাচ্ছে তার উপর আক্রমন চালাচ্ছে।

কয়েকজন রেস্টুরেন্ট মালিক জানান, ক্ষুধার্ত কুকুরের পাল রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। খাবার দেখলেই তেড়ে আসে। তাড়িয়ে দিলেও যায়না। কুকুরের ভয়ে পর্যটকরাও দোকানে প্রবেশ করতে ভয় পায়।

ইউপি সদস্য নোমান বলেন- কুকুরের আক্রমণের ভয়ে ইতোমধ্যে অনেক মা-বাবা তাদের সন্তানদের স্কুল-মাদ্রাসায় পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন। সন্ধ্যার পরে সৈকতে গেলেই কুকুরের কামড়ের শিকার হচ্ছে। অনেকে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় লাটি হাতে বের হতে হচ্ছে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান ‘বার্তা বাজার’কে বলেন, দ্বীপে প্রায় ৪ হাজার মতো কুকুর রয়েছে। এসব বেওয়ারিশ কুকুরগুলো জনজীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যা থেকে পরিত্রানের জন্য জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

তিনি আরো বলেন- কুকুর গুলোকে গত বছর জন্মনিরোধক ইনজেকশন দেওয়া হলেও বংশ বিস্তার রোধ করা যাচ্ছেনা।

মানুষের জীবনের সুরক্ষা চলমান পরিস্থিতি থেকে পরিত্রানের উপায় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আদনান চৌধুরী জানান- এই সমস্যা সমাধানে উপজেলা প্রশাসনের কোন প্রকল্প নেই। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান চাইলে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার সাথে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নিতে পারেন।

টেকনাফ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আবুল কালাম আজাদ ‘বার্তা বাজার’কে বলেন- গত বছর নভেম্বরে প্রথম রাউন্ডে সাড়ে ৮শ কুকুরকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছিলো। হিসেব অনুযায়ী দ্বীপে কুকুরের সংখ্যা দেড় হাজারের কাছাকাছি হতে পারে। আন্তর্জাতিক আইন মেনে কুকুরের বংশ বিস্তাররোধ ও জনসাধারনের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

প্রসঙ্গত, ঠিক এই রকম পরিস্থিতিতে গত ২০২২ সালের মার্চে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কিছু কুকুর টেকনাফে নিয়ে এসে উন্মুক্ত পরিবেশে ছেড়ে দেয়া হয়েছিলো।