শরীয়তপুরের নড়িয়ায় রমজানের পবিত্রতাকে সম্মান জানিয়ে মিষ্টি, দই, ঘিসহ সকল পণ্যে বিশেষ মূল্য ছাড় দিয়েছেন অভিজিৎ ঘোষ নামে এক মিস্টি ব্যবসায়ী। রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুযোগে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারে কৃতিম সংকট তৈরী করে যেখানে পণ্যের মূল্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয় সেখানে ভিন্ন ধর্মের অনুসারী হয়েও রজমান উপলক্ষ্যে এমন ছাড় দেওয়ায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই তাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
(১৭ মার্চ) রোববার বিকেলে নড়িয়া উপজেলার নড়িয়া বাজারের পূর্ব মাথার মিষ্টি কানন নামে একটি দোকানে এমনই চিত্র দেখা গেছে। বাজার মালিক সমিতি সমিতি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রমজানে ক্রেতাদের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুযোগে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃতিম সংকট তৈরী পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়। প্রশাসনের অভিযান, বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণার পরেও এসব ব্যবসায়ীরা কিছুতেই পণ্যের দাম কমাতে রাজি হয় না। সেখানে নিজের উদ্যোগে রমজানের পবিত্রতাকে সম্মান জানিয়ে মিষ্টি কাননের মালিক অভিজিৎ ঘোষ তার দোকানের সকল পণ্যের দাম কমিয়ে সীমিত লাভে বিক্রি করছেন। ভিন্ন ধর্মের অনুসারী হয়েও পণ্যের দাম কমিয়ে দেওয়ায় ক্রেতাসহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই দোকান মালিক অভিজিৎ ঘোষকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
দোকান পরিচালনাকারী অজিত কুমার ঘোষ বলেন, রমজান উপলক্ষ্যে দোকান মালিক দোকানের সকল পণ্যের মূল্য কমিয়ে দিয়েছি। রমজানের আগে দই ২০০ টাকা, ঘি ১ হাজার ৬০০ টাকা, সাদা ও কালোজাম ২২০ টাকা, চমচম ৩৫০ টাকা, সন্দেশ ৬৫০ টাকা, কাচা গোল্লা ৫৫০ টাকা, ক্ষীরপুরী ৬০০ টাকা, রসগোল্লা ২৬০ টাকা, রস মালাই ৪৫০ টাকা, সর মালাই ৬০০ টাকা, মাডা ১৫০ টাকা, বোম্বে রোল ৬০০ টাকা বিক্রি করতাম। রমজান উপলক্ষ্যে দই ১৮০ টাকা, ঘি ১ হাজার ৪০০ টাকা, সাদা ও কালোজাম ২০০ টাকা, চমচম ২৮০ টাকা, সন্দেশ ৫৫০ টাকা, কাচা গোল্লা ৪৫০ টাকা, ক্ষীরপুরী ৫২০ টাকা, রসগোল্লা ২২০ টাকা, রস মালাই ৩৫০ টাকা, সর মালাই ৫৫০ টাকা, মাডা ১২০ টাকা, বোম্বে রোল ৫৫০ টাকা বিক্রি করি।
এবিষয়ে উপস্থিত একজন ক্রেতা বলেন, ভিন্ন ধর্মের অনুসারী হয়েও রমজানের প্রতি যে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তারা, তা বিরল। কেননা আমরা দেখতে পাই রমজানকে পুঁজি করে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেন।
রাব্বি হোসেন নামে আরও একজন ক্রেতা বলেন, ছোট মেয়ে মিষ্টি আর মাঠা খেতে চেয়েছে। দোকানে এসে কেনার পর দেখলাম, দাম অন্য দোকানের তুলনায় কম। এখন যে টাকা বেঁচেছে, তা দিয়ে অন্য কিছু কিনতে পারব। অভিজিৎ ঘোষ নামে এই দোকানীর জন্য আমি দোয়া করি। তার উছিলায় অনেক গরীব মানুষ ভালো কিছু পণ্য খেতে পারবেন।
মিস্টি কাননের মালিক অভিজিৎ ঘোষ বলেন, রমজান ইসলাম ধর্মানুসারীদের জন্য পবিত্র একটি মাস। এই মাসে সকলেই রোজা থাকেন। এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে রজমানে সাধারণ মানুষের কষ্ট হয়। রমজানের পবিত্রতাকে সম্মান জানিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছে থেকেই দোকানের সকল পণ্যের দাম ৫০ থেকে ১০০ টা পর্যন্ত কমিয়ে দিয়েছি। সীমিত লাভে কর্মচারীদের বেতন ও দোকান খরচ দিয়ে আমার মোটামোটি লাভ হবে। যে লাভ হবে, তাতেই আমি খুশি।
বাজার বণিক সমিতির সদস্য সচিব জাফর শেখ বলেন, মিষ্টি কাননের মালিক হিন্দু ধর্মের অনুসারী। রমজানের পবিত্রতাকে সম্মান জানিয়ে তিনি তার দোকানের সকল পণ্যে বিশেষ ছাড় দিয়েছেন। তার এই কাজটি মহৎ একটি কাজ। আমরা মুসলমান হয়েও সিন্ডিকেট তৈরী করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেই, সেখানে একজন অভিজিৎ উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।