২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দ (৮ ফাল্গুন ১৯৫৮)। ৭২ বছর পূর্বে আজকের এই দিনে ভাষার দাবিতে রাজপথে নামা দামাল ছেলেদের বুকের তাজা লাল রং রক্তে ভেসে যায় ঢাকার রাজপথ।

পাকিস্তানি শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৪৪ ধারা ভেঙে রাষ্ট্রভাষা বাংলার মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে পথে নেমেছিল ছাত্র, শিক্ষক, দিনমজুর ও শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সী মানুষ। বজ্র কণ্ঠে আওয়াজ তুলেছিলো ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’।

অন্যদিকে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর নির্দেশে মিছিলের ওপর চলে পুলিশের নির্বিচার গুলি। শহীদ হন রফিক, শফিক, জব্বার, সালাম, বরকত, শফিউদ্দীনসহ আরও অনেক তাজা প্রাণ।

তাইতো বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে মৃত্যুকে বেছে নেয়া শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতিবছর ২১ শে ফেব্রুয়ারি সারাদেশে ভাষা শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সহ দেশের অগণিত শহীদ মিনারে খালি পায়ে হেটে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গাইতে গাইতে ফুল হাতে নিয়ে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা শ্রদ্ধা নিবেদনের ছুটে চলে শহীদ মিনারে।

১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দ ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরে ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। বাংলাদেশসহ বিশ্বে সকল ভাষা শহীদদের স্মরণে দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালন করা হয়ে থাকে। কালো ব্যাজ ধারণ, পুষ্পস্তবক অর্পণ, দোয়ার আয়োজন সহ নানা ভাবে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন একুশে ফেব্রুয়ারির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

এরই ধারাবাহিকতায় দেশের প্রতিটি স্থানের ন্যায় রাজধানী উত্তরার সাতটি থানায় বসবাসকারী প্রকৃত ও মূলধারার সাংবাদিকদের নিয়ে গঠিত “উত্তরা প্রেসক্লাব” এর পক্ষ থেকে ১২ নং সেক্টর, উত্তরা প্রেসক্লাব নিজ কার্যালয়ের সামনে শহীদদের সম্মানের নবগঠিত শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

এ সময় ২০২৪-২৫ খ্রিস্টাব্দে নির্বাচিত ১৩ সদস্য বিশিষ্ট নবগঠিত কার্যকরী কমিটির পুষ্পস্তবক অর্পনের মাধ্যমে শহীদ মিনারের শুভ সূচনা করা হয়। পরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা ভাষা শহীদদের স্মরণে পুস্তক অর্পণ করেন।

বাঙালি জাতির জন্য দিবসটি চরম শোক ও বেদনার। রাষ্ট্র ভাষার অধিকার আদায়ে সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত পৃথিবীর ইতিহাসে বাঙালিরাই একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে এবং যার ফলশ্রুতিতে গঠন করতে সক্ষম হয়েছে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র।
রক্তের দামে কেনা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান পায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার স্বীকৃতি আর তার সিঁড়ি বেয়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় বাংলার স্বাধীনতা।