বগুড়া শাজাহানপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বভার নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে শুরু হয়েছে টানাহ্যাচরা। এক পক্ষ বলছেন সংগঠনের গঠনতন্ত্র পরিপন্থি সিদ্ধান্ত নিয়ে পদ বিক্রি করা হয়েছে। অপর পক্ষ বলছেন গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই দায়িত্বভার দেয়া হয়েছে। এনিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে প্রকাশ্যে গ্রুপিংয়ের পাশাপাশি তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে।

জানাগেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবু দিলীপ কুমার চৌধুরী চিকিৎসার জন্য ভারত গমনের কারণে গত ২৬ জানুয়ারী তারিখে তার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তীর মাধ্যমে উপজেলা আওয়ামী লীগের ৭নং সহ-সভাপতি চোপীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজার রহমান বাবলুকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেন। ৯ জন সহ-সভাপতির মধ্যে নিয়ম অনুযায়ী ১নং সিনিয়র সহ-সভাপতি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক সোহরাব হোসেন ছান্নুকে না দিয়ে ৭নং সহ-সভাপতি মাহফুজার রহমান বাবলুকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে সভাপতির বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র বিরোধী ও অনৈতিক অর্থ হাসিলের অভিযোগ উঠেছে।

অপর দিকে বিষয়টি জানতে পেরে গত ২৮ জানুয়ারী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের আহবানে দপ্তর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল রাজি জুয়েলের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তী প্রকাশ করা হয়েছে। প্রেস বিজ্ঞপ্তীতে বলা হয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী সভাপতির অনুপস্থিতিতে ক্রমানুসারে সিনিয়র সহ-সভাপতিগণ দায়িত্ব পালন করবেন। শাজাহানপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তী গঠনতন্ত্র বিরোধী ও নিয়ম বহির্ভূত। এরূপ প্রেস বিজ্ঞপ্তীতে নেতাকর্মীদেরকে বিভ্রান্ত না হয়ে নিয়ম মেনে সংগঠন পরিচালনার আহবানও জানানো হয়েছে।

উপজেলার মাদলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বারী মন্ডল জানান, সভাপতি বাবু দিলীপ কুমার চৌধুরীকে দলীয় কোন কর্মকান্ডে পাওয়া যায় না। জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে কোন নির্বাচনেই তাকে পাওয়া যায়নি। হঠাৎ করে নির্বাচনের দুই এক দিন আগে এসে তিনি হাজির হন। বেশির ভাগ সময় তিনি ভারতেই থাকেন। গত জাতীয় নির্বাচনের কয়েক দিন আগে তিনি তার সমস্ত জায়গা জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। তার যে কি মতলব বোঝা মুসকিল। কাউকে কিছু না বলে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে একক সিদ্ধান্ত নেয়ার পিছনে নিশ্চয় কোন অসৎ উদ্যেশ্য রয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান লিটন জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবু দিলীপ কুমার চৌধুরী নরম মনে মানুষ। যে কেউ পাঁচ’শ হাজার টাকা দিলেই ঠিক বেঠিক যাই হোক যেকোন কাজে তার সহযোগীতা পাওয়া যায়।

উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক জাহিদুল হক আরজু জানান, দিলীপ কুমার চৌধুরী একজন শিক্ষিত ব্যক্তি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যার অনুলিপি তিনিও পেয়েছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাহফুজার রহমান বাবলু জানান, বাবু দিলীপ কুমার চৌধুরী ভারত গমনের দুই ঘন্টা আগে নিজে ফোন করে তাকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়ার কথা জানিয়েছেন এবং যথা সময়ে তিনি সেই কাগজ হাতে পেয়েছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রভাষক সোহরাব হোসেন ছান্নু জানান, বাবু দিলীপ কুমার চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়ার কেউ না। এটা দেখবে জেলা ও কেন্দ্রিয় আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে প্রেস বিজ্ঞপ্তী দিয়েছে। আর যারা এই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন তারা মূলত দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বাবু দিলীপ কুমার চৌধুরী দেশের বাহিরে থাকায় এবিষয়ে তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু জানান, বাবু দিলীপ কুমার চৌধুরী গঠনতন্ত্র বিরোধী কাজ করেছেন। আগামী দিনে জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় ফোরামে আলোচনা করে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বার্তা বাজার/জে আই