শীতের সকাল। বেলা এগারোটা বাজলেও কুয়াশা রয়ে গেছে চারদিকে। তবে শীতের মিষ্টি রোদ আছে। কলেজের গেট পেরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতেই সবুজ ক্যাম্পাসের ইট-পাথরে গড়া ভবনের সামনে চোখে পড়লো রঙ-বেরঙের ফুল আর ফুল। বাহারি আর নয়নাভিরাম সব ফুলে ছেঁয়ে গেছে গোটা কলেজ ক্যাম্পাস। প্রথম দেখায় যে কারো মনে হতে পারে; এ যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা নয়ন জুড়ানো সৌন্দর্য মুগ্ধ কোনো ছবি। যদিও মুহূর্তেই বিভ্রম কেটে যাবে। কারণ সচারাচর এমন পুষ্পশোভিত নান্দনিক ক্যাম্পাস আর চোখে পড়ে না।

বলছিলাম ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজের ক্যাম্পাসের কথা। একটু এগিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেল, কলেজের অধ্যক্ষ এম এম মুজিবুর রহমান মুজিবের উদ্যোগে ও তত্ত্বাবধানে তৈরি করা হয়েছে এ ফুলের বাগান।

কলেজের শিক্ষকরা জানান, ফুলের বাগান কলেজের সৌন্দর্য বহুগুণে বাড়িয়েছে। শিক্ষার পরিবেশকেও সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে। ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন কলেজের অভিভাবক সদস্য রিপন খানসহ গভর্নিং বডির অন্যান্য সদস্য।

কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুরাইয়া সুলতানা ও মোসা. ফারিয়া খানম বলেন, ‘আমাদের কলেজ ক্যাম্পাস ফুলে ফুলে সজ্জিত। ক্যাম্পাসে এলেই মন জুড়িয়ে যায়। ফুলের সুবাস আর সৌন্দর্য ক্লাস-পরীক্ষার সকল ক্লান্তি দূর করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। একটি সুন্দর ক্যাম্পাস উপহার দেওয়ার জন্য অধ্যক্ষ স্যারকে ধন্যবাদ।’

ফুলের বাগানেই দেখা হয় কলেজের মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. নাছির উদ্দীনের সঙ্গে। কথার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ফুল সবাই ভালোবাসেন। কিন্তু ফুলের বাগান করা কষ্টসাধ্য। কলেজ ক্যাম্পাসে বাগান করা আরো কষ্টকর। আমাদের অধ্যক্ষ স্যারের আগ্রহে এবং ঐকান্তিক পরিশ্রমে ফুলের বাগান করা সম্ভব হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও বাগান নিয়ে উচ্ছ্বসিত। তারাও ফুলের বাগানটি রক্ষা করতে সহযোগিতা করছেন।’

এসময় ফুলের বাগানের পরিচর্যার দায়িত্বে থাকা এস এম নাজিবুর রহমান রাজু ও নাজমুল হোসেনের সাথে কথা হলে তারা জানান, তারা দু’জন সার্বক্ষণিক ফুলের বাগানের পরিচর্যা করেন। কলেজের অধ্যক্ষ তাদের সবসময় পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাই ফুল চাষের আগে যেসব প্রস্তুতি নেওয়া দরকার তার সবই করা হয়েছিলো। যে কারণে ফুলে ফুলে ভরে গেছে ক্যাম্পাস। বাগানে বর্তমান গাঁদা ফুল, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, কচমচ, গোলাপ, রঙ্গন, হাসনাহেনা, জবা, শিউলি, বেলি, গন্ধরাজ ফুল রয়েছে। এরমধ্যে কয়েকপ্রকার গাঁদা, গোলাপ ও জবা ফুল রয়েছে। রয়েছে পাতাবাহার, অরোকেরিয়াসহ আরো কিছু সৌন্দর্যবর্ধন গাছও।

কলেজের গভর্নিং বডির অভিভাবক সদস্য রিপন খান জানান, ‘ফুলে ফুলে ভরে গেছে আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজ ক্যাম্পাস। যা দেখে মুগ্ধ সবাই। ক্যাম্পাসের ভেতরে যে ফুলের সমারোহ এটা শুধু কলেজের না,বাইরে যারা রয়েছেন তারাও এই সৌন্দর্য দেখতে আসেন।’

বাগান সম্পর্কে আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ এম এম মুজিবুর রহমান মুজিব বার্তা বাজার’কে জানান, শৈশব থেকে আমার বাগান করার শখ। অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে ভাবলাম, ক্যাম্পাসটি সাজাই। আরো দৃষ্টিনন্দন করি। সেজন্য ক্যাম্পাসে ফুলের বাগান করার পরিকল্পনা করলাম। এছাড়া আরেকটি উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদেরকে ক্যাম্পাসে আকৃষ্ট করা এবং মনোরম পরিবেশে পাঠদান নিশ্চিত করা।

‘কেউ ফুল ছেঁড়ে না?’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি মৃদু হেসে বলেন, যখন বাগান করা শুরু করি; তখন আশঙ্কায় ছিলাম! শত শত শিক্ষার্থীর মধ্যে বাগান টিকিয়ে রাখা কঠিন। ভেবেছিলাম, ফুল ফুটলে ছেলে-মেয়েরা ছিঁড়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। আমাকে অবাক করে দিয়ে তারা ফুলের বাগান করতে আমাকে সহযোগিতা করেছে। এখন যে শত শত ফুল ফুটে আছে, আমার কোনো শিক্ষার্থী একটি ফুলও ছেঁড়ে না। আমার খুব ভালো লাগে। আমি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানাই।

বাগান নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ব্যাপারে অধ্যক্ষ এম এম মুজিবুর রহমান মুজিব বলেন, প্রতি মাসেই নতুন নতুন ফুল গাছ আনছি। দুর্লভ ফুল গাছের চারা আনার চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতে বাগানের পরিসর আরো বাড়াবো।

বার্তা বাজার/জে আই