আমার বাবা তার সারাটা জীবন একটা লক্ষ্য নিয়েই কাজ করেছেন, সেটা হলো- দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব প্রতিষ্ঠা করা। তিনি এবং তার গ্রামীণ ব্যাংকের সহকর্মীদের মধ্যে তিনজনকে এমন অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে যেটা আসলে কোনো অভিযোগই নয়।

তাদের বিরুদ্ধে সিভিল মামলা হওয়ার কথা থাকলেও ফৌজদারি অপরাধে সাজা দেয়া হয়েছে। আমার বাবা এবং তার সহকর্মীরা একেবারেই নির্দোষ।

নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কন্যা, স্বনামধন্য মার্কিন অপেরা শিল্পী মনিকা ইউনূস এমন মন্তব্য করেছেন। তার পিতা (রবিবার) শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা মামলার রায় চ্যালেঞ্জ করে আপিল করার প্রাক্কালে বৃটিশ চ্যানেল ফোর নিউজ এর ইউরোপ বিষয়ক সম্পাদক, বিখ্যাত সাংবাদিক ম্যাট ফ্রেইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মনিকা এসব কথা বলেন।

ইংরেজিতে নেওয়া সাক্ষাৎকারটি বাংলায় অনুবাদ করা হলোঃ

ম্যাট ফ্রেই: তাহলে আপনি বলতে চাচ্ছেন- তিনি এমন কোনো অপরাধ করেন নি, যা নিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে…

মনিকা ইউনূস: না, না।

ম্যাট ফ্রেই: বাংলাদেশে সম্প্রতি (০৭ জানুয়ারি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে যেখানে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে দেশ শাসন করছেন। আমার মনে হয়, পৃথিবীতেই সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে।

মনিকা ইউনূস: আমার মনে হয়, এটা নোট করা গুরুত্বপূর্ণ যে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো এই নির্বাচন বয়কট করেছে। সুতরাং, এই প্রশ্ন আসে যে সেখানে গণতন্ত্রের অবস্থাটা কি?

ম্যাট ফ্রেই: দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা একজন আপনার বাবাকে কি রাজনৈতিক হুমকি বলে মনে করেন?

মনিকা ইউনূস: তিনিতো কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন! তিনি একজন বেসরকারি নাগরিক যিনি আন্তর্জাতিকভাবে, সারা দুনিয়াজুড়ে পুরস্কৃত হয়েছেন।

ম্যাট ফ্রেই: তিনি কি কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করতে চেয়েছিলেন?

মনিকা ইউনূস: একটা সময়ে চেয়েছিলেন। পরে তিনি মত পরিবর্তন করেন।

ম্যাট ফ্রেই: কেন তিনি তা করলেন?

মনিকা ইউনূস: তিনি ভেবেছিলেন রাজনীতি তার জন্য নয়। তিনি মনে করেন, গ্রামীণ এবং নোবেল পাওয়ার পর তিনি যে কাজগুলো করেছেন সেগুলো দিয়ে আরও বেশি কিছু করা সম্ভব।

ম্যাট ফ্রেই: কেন তিনি (শেখ হাসিনা), কেন বিচারকরা তাকে (ইউনূস) জেলে দেখতে চান?

মনিকা ইউনূস: আমি জানি না। যদি জানতাম! আমি শুধু এটাই জানি যে, তিনি এবং তার সহকর্মীরা নির্দোষ।

ম্যাট ফ্রেই: জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ ১৬০ জন বিশ্বনেতা আপনার বাবার পক্ষে চিঠি লিখেছিলেন। ‘গ্রেট এবং গুড’দের কাছ থেকে আসা এমন মাপের আন্তর্জাতিক চাপও বাংলাদেশ সরকারকে তা থামাতে যথেষ্ট হয়নি। শেখ হাসিনা ক্ষমতা শক্ত করতে গণতন্ত্রকে কোণঠাসা করেছেন। কিন্তু সেটি দেখা হচ্ছে না কারণ, মানুষ দারিদ্র থেকে মুক্ত হচ্ছে।

মনিকা ইউনূস: সেজন্যই মানুষকে কথা বলতে হবে। সেজন্যই তারা এই চিঠি দিয়েছেন। তারা এটাই বলছেন যে, তার (শেখ হাসিনা) আরও ভালো করা উচিত।

ম্যাট ফ্রেই: হয়তো সরকার মনে করছে ক্ষুদ্রঋণের দ্বারা উপকার পাওয়া ৯০ লাখ মানুষ তার (ইউনূস) অনুগত ভক্ত হতে পারেন৷ কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনে…

মনিকা ইউনূস: কিন্তু, তিনি কোনো ধরনের রাজনীতিতে জড়াচ্ছেন না।

ম্যাট ফ্রেই: এগুলো (মামলা) তাকে কিভাবে প্রভাবিত করেছে?

মনিকা ইউনূস: তিনি এগুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন হলে অনেক আগেই নিজের কাজ ছেড়ে দিতেন। আমার বাবা একটা ভিশন সামনে রেখে কাজ করেন এবং যাই হোক না কেন তিনি সে লক্ষ্যে এগিয়ে যান।

ম্যাট ফ্রেই: তিনি কি এসব নিয়ে বিষণ্ন?

মনিকা ইউনূস: তিনি এবং তার সহকর্মীদের জন্য অবশ্যই এটা কঠিন এক পরিস্থিতি। কিন্তু, তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন।

ম্যাট ফ্রেই: শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কাছে আপনার বার্তা কি?

মনিকা ইউনূস: আমি এসব থামাতে বলবো৷ এই হয়রানি যেনো বন্ধ হয়৷ বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু করতে একসাথে কাজ করার চমৎকার সুযোগ আছে, যেমনটি তারা অতীতে করেছিলেন।

বার্তা বাজার/জে আই