জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে জাল কাগজ-পত্র তৈরী করে রেলওয়ের সম্পত্তি জবর দখল চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাঁচবিবি উপজেলার রাধাবাড়ি এলাকার সামসুদ্দিন মন্ডলের ছেলে জাফরুল ইসলামের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেন রেল বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এলাকাবাসী।

অভিযোগের সূত্র ধরে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, পাঁচবিবি রেল ষ্টেশনের অদূরে উত্তর দিকে রেল লাইন সংলগ্ন রাধাবাড়ি মৌজার (জেএল নং-৬৭, খতিয়ান নং-০৩, দাগ নং-১৪০/অংশ) ৭৯ শতক ও নিলামের মাধ্যমে ১ একর ৪১ শতক সর্বমোট ২ একর ২০ শতক সম্পত্তি সম্প্রতি টেন্ডারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসাবে ইজারা প্রাপ্ত হন পাঁচবিবি পৌরসভার স্টেডিয়াম সড়ক এলাকার মমিনুল ইসলাম মিঠু ।

গত বছর ১৮ অক্টোবর রেল কর্তৃপক্ষ ঢেঁড়া পিটিয়ে লাল ঝান্ডি দিয়ে ইজারা ও নিলাম সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির সীমানা নির্ধারন করে দিয়ে রেল প্রশাসন ওই সম্পত্তি মিঠুকে বুঝিয়ে দেন। ইজারা সূত্রে প্রাপ্ত হয়ে মিঠু ওই সম্পত্তির পুকুরে মাছের পোনা ছাড়েন, পুকুর পাড়ে ফল-মূলের বাগান করা ছাড়াও দীর্ঘদিন পরিত্যাক্ত জমিগুলি চাষাবাদের উপযোগী করে প্রস্তুত করছেন।

এমতাবস্থায় অভিযুক্ত জাফরুল দলবলসহ সেখানে গিয়ে রেল কর্তৃপেক্ষের কাছ থেকে ইজারা সূত্রে তিনিই ওই সম্পত্তির মালিক বলে দাবী করেন এবং প্রকৃত ইজারা সূত্রে প্রাপ্ত মিঠু, তার ভাই ও কর্তব্যরত শ্রমিকদের সেখান থেকে চলে যেতে নানা ধরনের ভয়-ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসেন।

এ নিয়ে মিঠু অভিযোগ করে বলেন, “গত ২০২১ সালের ১৭ মার্চ দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত টেন্ডার বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অবগত হয়ে আমি সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে বিবেচিত হলে রেল কর্তৃপক্ষ আমাকে ইজারা দেয়। আমি খাজনাসহ যাবতীয় পাওনাদি পরিশোধ করলে রেল কর্তৃপক্ষ আমাকে জায়গা বুঝে দেন। এরপর আমি মাছ চাষসহ ফলমূলের চাষাবাদ করে আসছিলাম। এরই এক পর্যায়ে জাফরুল দলবল নিয়ে আমাকে ওই জায়গা ছাড়তে হুমকি দিলে প্রথমে আমি স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিগনের কাছে শালিশের আবেদন করি। সেই শালিশ বৈঠকে জাফরুল বৈধ কাগজ পত্র উপস্থাপন করতে ব্যার্থ হলেও হুমকি ধমকি অব্যাহত রাখেন। বাধ্য হয়ে আমি রেল কর্তৃপক্ষের কাছে ন্যায় বিচারের আবেদন করি।”

শালিশী বৈঠকে উপস্থিত স্থানীয় সাংবাদিক ও সহকারি অধ্যাপক আজাদ আলী সাগর, স্থানীয় সাংবাদিক আখতার হোসেন বকুল, সাজেদুল ইসলাম টিটু, দবিরুল ইসলাম লিটন, আকরাম কাজী সহ গন্যমান্য ব্যাক্তিগন জানান, গত ১৯৮৫ সালের ২৫ মার্চে একই এলাকায় রেলের ২৩ শতাংশ জমি জাফরুল ইজারা নিলেও গত প্রায় ৩ যুগ ধরে তিনি কোন খাজনা প্রদান করেননি।

তারপর আকস্মিকভাবে জাফরুল গত ৩১ডিসেম্বর ২৩ শতাংশ জায়গার পরিবর্তে ৮০ শতাংশ জমির দুই বছরের খাজনা পরিশোধের যে রশিদ দেখান তা ভৌতিক বলেও জানান শালিশ বৈঠকে উপস্থিত ব্যক্তিগন।

এ ব্যাপারে পাকশি রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি দপ্তরের উচ্চমান সহকারি মমতাজুল ইসলাম জানান, যদি কেউ সরকারি কোষাগাড়ে টাকা জমা করতে চান তা সম্ভব। কিন্তু ইজারা বা নিলামের কাগজ পত্র যদি না থাকে তাহলে জাফরুলের ওই খাজনার রশিদের কোন বৈধতা নাই। আবার ওই রশিদটি হতে পার, বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখতে হবে বলেও জানান মমতাজুল।

দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগের কানুনগো সাজ্জাদুল ইসলাম ও সার্ভেয়ার হীরেন্দ্রনাথ জানান, এ ব্যাপারে মমিনুল ইসলাম মিঠু ও অভিযুক্ত জাফরুলকে একাধিক বার তাদের কাগজ পত্রসহ পার্বতীপুর রেল অফিসে ডাকা হয়েছিল। মিঠু কাগজ পত্র নিয়ে যথা সময়ে উপস্থিত হলেও জাফরুল আসছি, আসব করেও তালবাহানা করে আসেননি। মিঠুর কাগজ পত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সঠিক পাওয়া গেছে। কিন্তু জাফরুল আসতে ভয় পাচ্ছেন। এতে করে আমাদের কাছে প্রাথমিক ভাবে প্রমানিত হয়েছে যে, জাফরুলের কাগজ পত্র সঠিক না বা জাল ।

এ নিয়ে অভিযুক্ত জাফরুলের কাছে জানতে চাওয়া হলেও তিনি কোন সদুত্তর না দিয়ে বলেন, “বিষয়টি মধ্যস্থতাকারী হিসাবে আাজাদ আলী সাগরকে বলেছি। ” তবে তিনি বলেছেন তা না জানিয়েই ফোনটি কেটে দেন।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশী অঞ্চলের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা নুরুজ্জামান বলেন, জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী লাইসেন্সধারী মালিক মমিনুল ইসলাম মিঠুকে সরকারি আইন অসুযায়ী বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। আর অভিযুক্ত জাফরুলের কাগজ পত্রের আইনগত কোন ভিত্তি নাই। আর এর সাথে রেলের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বা ইজারা ও নিলাম সূত্রের দখলী শিল্পী মমিনুল ইসলাম মিঠু তার বা তাদের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যাবস্থা গ্রহনের অধিকার রাখেন ।

বার্তা বাজার/জে আই