স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বৃহত্তর দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নিজস্ব ভবন নির্মান করে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। নিজস্ব ভবনে গাইবান্ধা জেলার অধিনে দীর্ঘদিন সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে অত্র এলাকায় সেচ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায়, মুখ থুবরে পড়ে পাউবোর এই প্রকল্প।
এরপর থেকে নিজস্ব জায়গায় দুটি ছাঁদ পেটানো ভবন এবং সেচ কাজে ব্যবহারিত লাখ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি সেখানেই পড়ে ছিল। যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে চুরি হয়ে গেছে সেসব যন্ত্রপাতি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস ভবনসহ জমিটির অবস্থান ঘোড়াঘাট পৌরসভার জয়দেবপুর মৌজায় থানা ভবন ও ডাকবাংলো সংলগ্ন লালদহপাড়ায়।
গত ২০০৫ সালে ঘোড়াঘাট পৌরসভা গঠিত হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেই ভবনে দীর্ঘদিন নিজেদের কার্যক্রম চালায় পৌরসভা কতৃপক্ষ। এরপর পৌর এলাকার এসকে বাজার সংলগ্ন এলাকায় পৌরসভার নতুন ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হলে পাউবোর ভবন ছেড়ে নিজস্ব ভবনে কার্যক্রম শুরু করে পৌরসভা কতৃপক্ষ। এরপর থেকে দীর্ঘদিন ফাঁকা পড়ে আছে পাউবোর এই কোটি টাকার জমি এবং দুটি ভবন। ভবনের পেছনের পাশে আছে লাখ লাখ ডাকা মূল্যের প্রায় ১৫টি মোটা আম গাছ।
তবে সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি ভবন সহ আশপাশের পুরাতন আমের গাছ বেষ্ঠিত ১ একর ২৬ শতক জায়গা লিজ দিয়েছে উপজেলা ভূমি অফিস। কোটি টাকা মূল্যের এই জমি লিজ পেয়েছেন স্থানীয় ১৭ জন নারী-পুরুষ। নিজেদের নামে লিজ পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে দু‘একজন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভবন দখল করে টিনের বেড়া
উঠিয়েছে। সরকারী সম্পত্তি এবং স্থাপনা ব্যক্তির কাছে লিজ দেওয়ার ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে ৭ জনের বিরুদ্ধে ঘোড়াঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাইবান্ধা জেলাধীন পলাশবাড়ী পওর শাখা-৩ এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক।
তবে উপজেলা প্রশাসন এবং ভূমি অফিসের দাবি তাদের নথিপত্র অনুযায়ী লিজ দেওয়া জমিটি অর্পিত সম্পত্তি (ভিপি) ক ভূক্ত হওয়ায় তারা লিজ দিয়েছেন। যাতে করে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পায়। ২০০ টাকা শতক হারে ওই ১ একর ২৬ শতক জমি লিজের অনুমোদন দিয়েছিলেন ঘোড়াঘাটের সাবেক ইউএনও রাফিউল আলম।
ঘোড়াঘাট উপজেলা ভূমি অফিসের তথ্য বলছে, এক সোনা অর্থাৎ এক বছর মেয়াদে ১ একর ২৬ শতক জমি লিজ পেয়েছেন ১৭ জন। দুই দফায় এদেরকে লিজ দিয়েছে ভূমি অফিস। তাদের মধ্যে রেজাউল করিম ৮ শতক, জহুরুল ইসলাম ২ শতক, রফিক উদ্দিন ৯ শতক, হারুন অর রশিদ ৪ শতক, রাহেলা বেগম ৫ শতক, মাসুদ মিয়া ১১ শতক, কহিনুর বেগম ২ শতক, মালেকা বেগম ২ শতক, দুলাল মিয়া ২ শতক, দাম চন্দ্র ১৫ শতক, নুর মোহাম্মদ রিমন ২ শতক, কবিরুল ইসলাম ২০ শতক, আবু ফরহাদ সওদাগর ২ শতক, চাঁন মিয়া ২৫ শতক, ফিরোজ কবির ১২ শতক, তৌহিদুল আলম ২ শতক এবং সহিদা বেগম ৩ শতক জমি লিজ পেয়েছেন। এছাড়াও সেখানে আরো ২৬
শতক জমি লিজবিহীন অবশিষ্ট আছে।
তবে থানায় দায়ের করা অভিযোগে পাউবো বলেন, পাউবোর অধিগ্রহণ করা নিজস্ব জমিতে থাকা অফিস ভবন ভেঙ্গে সরকারী সম্পত্তি অবৈধ ও বেআইনি ভাবে দখল করার চেষ্টা করছে। অভিযোগে ফিরোজ কবির, শ্রীদাস, চাঁন মিয়া, কবিরুল ইসলাম, রিমন মিয়া, বাবু, তৌহিদ ও মিলনসহ ৭ জনের নাম এবং অজ্ঞাতনামাদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
ঘোড়াঘাট উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান বলেন, আমাদের কার্যালয়ের নথি অনুযায়ী জমিটি ভিপি সম্পত্তি। তাই রাজস্ আহরণের স্বার্থে জমিটি লিজ দেওয়া হয়েছে। যারা এক বছরের জন্য লিজ পেয়েছে তারা জমিটিতে দখল নিতে গেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড আপত্তি জানায়। তারপর আমরা পাউবোর কর্মকর্তাদেরকে একাধিকবার তাদের কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলেছি। মাঝে ৬ মাস অতিবাহিত হলো। তবে তারা কোন ধরণের কাগজপত্র দেখায়নি। এখনও যদি পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের জমির কাগজপত্র দেখায়, তবে লিজ বাতিল করা হবে। দাবি অনুযায়ী জমিটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হয়ে থাকলেও, তারা গত কয়েকযুগ যাবত কোন ধরণে খাজনা পরিশোধ করেনি।
এদিকে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, ঘোড়াঘাটে আমাদের সেচ প্রকল্প ছিল। সেই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আমরা জমি অধিগ্রহণ করে অফিস কার্যালয় নির্মাণ করেছিলাম। কতৃপয় ব্যক্তি সরকারী জমি দখলের পায়তারা করছে। আমরা থানায় অভিযোগ দিয়েছি। এই বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা
গ্রহণ করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, অধিগ্রহণ করা সরকারী সম্পত্তিকে লিজ দিয়েছে আর কে পেয়েছে তা আমরা দেখতে যাবো না। নিজেদের জমি না হলে সেখানে আমরা ভবন নির্মান করেছিলাম কিভাবে।
বার্তাবাজার/এম আই